ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উৎসবমুখর পরিবেশে জাবিতে শেষ হলো পাখিমেলা

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

উৎসবমুখর পরিবেশে  জাবিতে শেষ হলো  পাখিমেলা

জাবি সংবাদদাতা ॥ প্রকৃতির রূপ-সৌন্দর্যের অন্যতম অনুষঙ্গ পাখি। পাখির প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসার কমতি নেই। তা সত্ত্বেও থেমে নেই দিন দিন পাখির সংখ্যা কমে যাওয়া। আবার কোন কোন অপরূপ সুন্দর পাখির ইতোমধ্যে বিলুপ্তিও ঘটেছে। তাই পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিবছর পাখি মেলার আয়োজন করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) প্রাণিবিদ্যা বিভাগ। পাখির কলকাকলী, কিচির-মিচির ডাক আর পাখিপ্রেমীদের সরব উপস্থিতিতে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে শুক্রবার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দেশের একমাত্র পাখিমেলা-২০১৬। এদিন মেলা উপলক্ষে ক্যাম্পাস ছিল উৎসবমুখর। অতিথি পাখির সরব সান্নিধ্যে সারাটা দিন পার করেছে দেশ-বিদেশের অসংখ্য পাখিপ্রেমী মানুষ। ‘পাখপাখালি দেশের রতœ, আসুন সবাই করি যতœ’ এই সেøাগানকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের যৌথ আয়োজনে পাখিমেলায় দিনভর পাখিপ্রেমী, দর্শনার্থী, পর্যটক, বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মেলা প্রাঙ্গণসহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কোলাহলপূর্ণ আর উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। উল্লেখ্য, ২০০১ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে ক্যাম্পাসে যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টার। মেলায় স্টলগুলো সাজানো ছিল মমি করা বিভিন্ন প্রজাতির দেশী ও অতিথি পাখি, পাখি বিষয়ক বই-পুস্তক, ক্যালেন্ডার এবং পাখি সংরক্ষণে সচেতনতা তৈরি করতে বিভিন্ন পোস্টার ও ছবি দিয়ে। এ সব মমি পাখির মধ্যে কালিম, কাঠময়ূর, জলপিপি, জলময়ূরী, ময়না, শঙ্খচিল, পেঁচা, ফিঙে, তিতির, কবুতর ও পাতি ক্যাস্ট্রো উল্লেখযোগ্য। পাখিমেলার এসব সৌন্দর্য উপভোগ করতে সকাল থেকেই মৃদু শীত উপেক্ষা করে পাখিপ্রেমী দর্শনার্থীরা নতুন কলা ভবনের সামনের মহুয়া চত্বরে ভিড় জমায়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলাপ্রাঙ্গণে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা যায়। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা ও দূর-দূরান্ত থেকে এসব দর্শনার্থী আসেন। শুক্রবার ছুটির দিনে নগরের শত-ব্যস্ততার মধ্যে অবসাদ দূর করতে জাবি ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য আর পাখিমেলার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করতে কেউ এসেছে পুরো পরিবার নিয়ে, আবার কেউ তার প্রিয়জনের সঙ্গে, কেউবা আবার এসেছে সবান্ধব। তাদের মধ্যে শিশু-কিশোরদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়বার মতো। রাজধানীর মহাখালী থেকে আগত দম্পতি দেবাশিস বিশ্বাস ও সীমা সরকার জানান, কাজের মধ্যে শুক্রবারের ছুটির দিনে পাখিমেলায় এসে এর সৌন্দর্য উপভোগ করছি। আর ভাললাগে বলেই এ ক্যাম্পাসে বারবার আসি। মেলায় বাবা মায়ের সঙ্গে আসা স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী নিসর্গ নিরুপম বলেন, ‘এখানে এসে খুব আনন্দিত হয়েছি। তবে আরও সকালে আসতে পারলে আরও কিছু দেখতে পেতাম’। উত্তরা থেকে মেলায় ঘুরতে আসা জয়ন্ত সরকার বলেন, ‘আমি প্রকৃতিপ্রেমী। তাই অসাধারণ এ মেলা দেখতে এসেছি। যতদিন আমরা এ প্রকৃতি রক্ষা করতে পারব ততদিন আমরা ভালভাবে বেঁচে থাকব।’ বেলা ১১টায় মহুয়া চত্বরে প্রধান অতিথি উপাচার্য ড. ফারজানা ইসলাম বেলুন উড়িয়ে পাখি মেলার উদ্বোধন করেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভিসি ড. আবুল হোসেন, এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন-এর চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বার্ড ক্লাবের সভাপতি নিয়াজ আব্দুর রহমান, আইইউসিএন বাংলাদেশ এর সমন্বয়ক হাসিব ইরফান উল্লাহ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি মনোয়ার হোসেন এবং পাখিমেলা ২০১৬ এর আহ্বায়ক কামরুল হাসান প্রমুখ। সকাল থেকেই আগত দর্শনার্থীরা পাখি বিষয়ক নানা অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। মেলায় শিশু-কিশোরদের পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি দেখা প্রতিযোগিতা, টেলিস্কোপে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, পাখির আলোকচিত্র ও পত্রপত্রিকা প্রদর্শনীর মাধ্যমে স্টল সাজানো প্রতিযোগিতা, অডিও-ভিডিওয়ের মাধ্যমে আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এবং সবশেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। এবারের মেলায় পাখির নতুন ও বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি নিয়ে কাজ করার জন্য ৩ জনকে বিগ বার্ড এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
×