ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওষুধের দাম ও মান

প্রকাশিত: ০৫:০১, ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ওষুধের দাম ও মান

বিশ্বের শতাধিক দেশে রফতানি হচ্ছে বাংলাদেশের ওষুধ। ইউরোপ, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশেও এ দেশের ওষুধ বাজার দখল করে নিতে সক্ষম হচ্ছে। এটি আশাজাগানিয়া সংবাদ হলেও হতাশার চিত্রও কম নয়। হতাশার চিত্রটি হলোÑ দেশের বাজারেই নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে। ফলে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে জনস্বাস্থ্য। পাশাপাশি বিপুল অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। জানা গেছে, দেশে প্রায় এক হাজার ৩শ’ আইটেমের ২৫ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র দুই শতাধিক অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণের এখতিয়ার রয়েছে ওষুধ প্রশাসনের। এ সুযোগে এ দেশের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নানা অজুহাতে অব্যাহতভাবে ওষুধের দাম নির্ধারণ ও তাদের ইচ্ছামতো বৃদ্ধি করে চলছে। একই কারণে উৎপাদিত বেশিরভাগ ওষুধই রয়ে যাচ্ছে তদারকির বাইরে। এমনকি নামে-বেনামে দেশে প্রবেশ করছে অনুমোদনহীন অনেক বিদেশী ওষুধও। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকার ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশের চিত্র উল্টো। কারণ ওই সব দেশ মানুষের অত্যাবশ্যক ওষুধগুলোর একটি তালিকা তৈরি ও তা কার্যকর করতে বেশ আন্তরিক থাকে। মানুষের জীবন রক্ষার বিষয়টি তারা বেশি গুরুত্ব দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে বেশিরভাগ কোম্পানিই স্বার্থসংশ্লিষ্ট ওষুধকে অত্যাবশ্যকীয় তালিকায় রাখে। ১৯৮২ সালে দেশে প্রথম জাতীয় ওষুধনীতি ও ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ জারি হয়। সেসময় অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ হিসেবে নির্ধারণ করা হয় ১৫০ আইটেমের ওষুধকে। কিন্তু ১৯৯৪ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরকে মাত্র ১১৭ ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা দেয়া হয়। কয়েক বছর পর সরকার ১৯৮২ সালের জাতীয় ওষুধনীতি সংশোধন করে জাতীয় ওষুধনীতি-২০০৫ প্রণয়ন করে। ওই নীতিতে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের কোন তালিকা রাখা হয়নি। ২০০৮ সালে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ হিসেবে ২৫৬ ওষুধকে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু নানামুখী চাপ এবং প্রভাব খাটিয়ে ওই তালিকায় ওষুধ রাখা হয় মাত্র ২০৯টি। যার অধিকাংশই বর্তমানে অকার্যকর। অবশ্য ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এখনও আগের নির্ধারিত ১১৭ আইটেমের ওষুধেরই তদারকি করছে। যার বেশিরভাগই প্রভাব খাটিয়ে ওই তালিকায় চলে এসেছে। দেশে ২৭৫টি এ্যালোপ্যাথিক, ২৬৬টি ইউনানী, ২০৫টি আয়ূুর্বেদিক, ৭৯টি হোমিওপ্যাথিক ও ৩২টি হার্বাল ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এক লাখ ১৫ হাজার ৪৩৯ লাইসেন্সধারী ও অসংখ্য লাইসেন্সবিহীন ওষুধ বিক্রির ফার্মেসি রয়েছে। এসব ফার্মেসি থেকেই ক্রেতারা প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে থাকেন। ওষুধ বাণিজ্যের এ অরাজক পরিস্থিতির জন্য এরাই মুখ্য ভূমিকা রাখছে। ওষুধের মান ও দাম নির্ধারণে একটি যুগোপযোগী ওষুধনীতি চূড়ান্ত হওয়া দরকার। এই ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কথা অতীতে শোনা গেলেও তা নেয়া হয়নি। দ্রুত এখন নীতি অনুমোদিত হওয়া দরকার। ওষুধের দাম ও মান নিয়ন্ত্রণ করা গেলে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা সঠিকভাবে প্রণয়ন করা সম্ভব। মনে রাখা দরকার মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য ওষুধ ব্যবহার করে। নকল, ভেজাল ও মানহীন ওষুধ রোগ নিরাময়ের বদলে জীবনকে সঙ্কটাপন্ন করে তোলে। তাই জনস্বার্থে নকল, ভেজাল ও মানহীন ওষুধের বিরুদ্ধে সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কঠোর হতে হবে।
×