ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুফিয়া বেগম

ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্র সৈকত বালি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ইন্দোনেশিয়ার সমুদ্র সৈকত বালি

বালি, ইন্দোনেশিয়া হিন্দু পৗরাণিক কাহিনীর পাদপিঠে জীবন্ত আগ্নেয়গীরি সি-বীচ আর প্রকৃতির রূপ-সৌন্দর্য মানুষের হৃদয়-মনকে মথিত করবে চিরকাল ধরে। ১২-১০-২০১১ তারিখ সন্ধ্যা সাতটায় এয়ার এশিয়ার বিমনযোগে আমরা গিয়ে নামলাম বালির আন্তর্জাতিক নাগোয়া এয়ারপোর্টে। আমরা মানে আমি, আমার কলিগ বন্ধু রোকসানা, ওর ছেলে তালহা, শাহনুর ও ফেরদৌস। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বাইরে এসে প্রথমেই কাজ হলো ডলার ভাঙিয়ে নেয়া। বিমানবন্দরের ভেতর সব সময় রেট কম থাকে। তাই খুব প্রয়োজন না হলে কেউ এয়ারপোর্টে ডলার এক্সচেঞ্জ করে না। আমাদের গ্রুপে মনে হয় আমার প্রয়োজনটাই বেশি ছিল। কারণ, আমার প্রচ- পানি পিপাসা পেয়েছিল। তাই আমি ১০০ ডলার ভাঙিয়ে নিলাম। পেলাম ৮ লাখ ৭০ হাজার ইন্দোনেশিয়ান রুপি। এতগুলো রুপি পেয়ে মন আনন্দে ভরে উঠল। কিন্তু এই আনন্দের রেশ কেটে গেল পরমুহূর্তেই। দোকানে গিয়ে পানি চাইলাম। ২৫০ মিলির একটি বোতল হাতে নিয়ে দাম জিজ্ঞেস করলাম। বলল ৫ হাজার রুপি। দাম শুনে একটু ধাক্কা খেলাম। বুঝলাম ১০০ ডলার ভাঙিয়ে ৮ লাখ ৭০ হাজার রুপি পাওয়ার আসল কারণ এখানেই। ডলারের বিপরীতে এখানকার স্থানীয় মুদ্রার মান অনেক কম। মনে মনে খুশি হলাম এই ভেবে যে, ডলারের বিপরীতে আমাদের টাকার মান এদের চেয়ে অনেক ভাল। যাই হোক, এটুকু পানি আমি আর তালহা মিলে পান করলাম। ততক্ষণে শাহনুর আর ফেরদৌস আমাদের বসিয়ে রেখে ট্যাক্সি ঠিক করতে গেল। প্রায় আধা ঘণ্টা পর ফিরে এসে জানাল, এখানে ট্যাক্সি পাওয়া খুব কষ্টকর। তবু শেষ পর্যন্ত একটা পাওয়া গেছে। আমরা গিয়ে ট্যাক্সিতে উঠে বসলাম। আমাদের দেশের কালো ট্যাক্সিক্যাবের মতো ছোট্ট একটা ট্যাক্সিক্যাব। গাদাগাদি করে বসলাম আমরা। তাছাড়া আমাদের সবার সঙ্গে রয়েছে বড় বড় লাগেজ। ভাড়া ঠিক করা হয়েছিল ৬০ হাজার রুপিতে। কিন্তু চালক এখন বলছে ওই ভাড়ায় সে যাবে না। কারণ, ওভারলোডিং হবে সে ভাবেনি। কাজেই আমরা সবাই এক ট্যাক্সিতে যেতে হলে ভাড়া বাড়িয়ে দিতে হবে। আবারও দর কষাকষি শুরু হলো। কিন্তু কোন লাভ হলো না। ড্রাইভার তার চাওয়া থেকে একচুলও নড়ল না। অগত্যা আর কি করা। ৭৫ হাজার রুপিতেই রওনা হলাম আমরা এবং মাত্র ১৫ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম হোটেলে। হোটেলটির নাম ঐড়ঃবষ ঝধুধহম গধযধ গবৎঃযধ। লিজেইন (খবমধরহ) এলাকায় অবস্থিত। বালিতে যে কোন এলাকাকে বলা হয় ভিলেজ। কিন্তু এখানকার গ্রাম ভিলেজ মানে আমাদের দেশের গ্রাম নয়। হোটেলটি বালির রাজধানী ডেনপাসার (উবহঢ়ধংধৎ-উচঝ) খুব কাছে। কুটা (কঁঃধ) থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরত্বে অবস্থিত। কুটা সী-বীচটি সূর্যাস্তের জন্য বিখ্যাত। এই বীচ থেকে সবচেয়ে মনোরম সানসেট উপভোগ করা যায়। ওয়েবসাইটে এমনটা দেখেই শাহনুর এই হোটেলের দুটি রুম অগ্রিম বুকিং দিয়েছিল। আমরা হোটেলের রিসেপশনে বুকিংয়ের কাগজপত্র জমা দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম। এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাগল আমাদের পাঁচজনের পাসপোর্ট থেকে রেজিস্ট্রার আপডেট করতে। অবশেষে আমরা যখন রুমে ঢুকার ছাড়পত্র পেলাম তখন ঘড়িতে দশটা বেজে গেছে। আমাদের প্রথম কাজ হলো রাতের খাবারের ব্যবস্থা দেখা। রিসিপশনে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, গেটের বাইরে সামনেই একটি হোটেল আছে, রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। আশ্বস্ত হয়ে ৪ তলায় নিজ নিজ রুমে গেলাম আমরা। সেই আগের মতো ব্যবস্থা। আমি, রুমা আর রুমার ছেলে তালহা একরুমে। ফেরদৌস আর শাহনুর অন্যরুমে। তবে ব্যবস্থা লংকাভির হোটেলের চেয়ে ভাল। প্রতি রুমে এটাচড বাথরুম। আমরা আধা ঘণ্টার মধ্যে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলাম। পাঁচজনে একসঙ্গে খেতে গেলাম গেটের বাইরের হোটেলটিতে। বালি দ্বীপটি ইন্দোনেশিয়ার একটি অংশ হলেও এলাকাটি মূলত হিন্দুপ্রধান। একানকার ৯৫% ভাগ লোক হিন্দু ধর্মাবলম্বী। কাজেই হোটেলে খাবার পছন্দের বেলায় খুব সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। আমরা খাবারের মেনু দেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলাম না কোনটা ভাল হবে। খাবারগুলো অনেকটা চাইনিজ ধাঁচের, তার সঙ্গে ট্রাডিশনাল মিক্সড রযেছে। এত রাতের বেলা কোন কিছু পাওয়াও যাবে না। একটা অফার আমাদের সবার পছন্দ হলো। ডিম ভাজা ও ভাত প্রতিটি ২৫ হাজার রুপি করে নিলে একটি করে কোল্ড ড্রিংকস ফ্রি। এই এলাকার হোটেলের আর একটি বৈশিষ্ট্য আছে। সেটা হলো ভাতের জন্য আলাদা দাম ধরা নেই। ঠিক করতে হবে ভাতের সঙ্গের আইটেমটা। ওই আইটেমের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাত এমনিতেই দেবে। হোটেলটিতে দেখলাম আমরা ছাড়া আর কোন ভিজিটর নেই। অত্যন্ত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হোটেলটি, চাইনিজ এর মতো পরিপাটি করে সাজানো চেয়ার-টেবিল। (চলবে)
×