ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অপূর্ব কুমার কুণ্ডু

ডাকঘরের অমলনামা

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ডাকঘরের অমলনামা

‘টার্গেট প্লাটুন’ নির্দেশনা দিতে গিয়ে নির্দেশক মামুনুর রশীদ যেখানে সকলের অংশগ্রহণে মুক্তির সফলতা নির্মাণ করেন, সেখানে সৈয়দ জামিল আহমদ সেট-লাইটের নির্দেশনায় মুক্তির বিস্তৃতি এবং গভীরতাকে বিনির্মাণ করেন। সময়ের বিবর্তনে আজ সৈয়দ জামিল আহমদের হাতে তৈরি বাগান থেকে রবীন্দ্রনাথের অমল চাড়ালনামার মধ্যে দিয়ে গন্ধ ছড়ায়। আর মামুনুর রশীদের হাতে তৈরি বাগান থেকে রবীন্দ্রনাথের অমল ডাকহরকরার চিঠি পাবার প্রত্যাশায় অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে ঘ্রাণ ছড়িয়ে নিরুদ্দেশে মিলিয়ে যায়। প-িতরূপী অধ্যাপকদের পা-িত্যের যন্ত্রণা আর ঠাকুরদারূপী প্রাজ্ঞ ব্যক্তিদের জ্ঞানের সান্ত¡নার মাঝে অবরুদ্ধ হয়ে থাকা অসুস্থ শিশু অমলের হৃদয়ের চাওয়া-পাওয়ার নাটক ‘ডাকঘর’। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত, ইশতিয়াক হোসেন নির্দেশিত, আরণ্যক থিয়েটার পাঠশালা দশম আবর্তন প্রযোজিত নাটক ‘ডাকঘর’ মঞ্চস্থ হলো ২০ জানুয়ারি শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে। জীবনের কোলাহলে এক সন্তানের মায়ের নদীকূলে বাস আর চিন্তা বারমাস। অপরদিকে মা-বাবা শূন্য সন্তানের সদাই সর্বনাশ। অমলের অবস্থাটাও তেমনি। মা-বাবার অবর্তমানে আশ্রয় পিসেমশাই মাধব দত্তের গৃহে। অথচ রোগাক্রান্ত অমলের সুশ্রুষা প্রশ্নে অভিভাবকরা পিসেমশাইকে ছাড়িয়ে। কবিরাজ হাওয়া-বাতাস-রৌদ্র প্রভৃতি প্রকৃতির ছোঁয়া থেকে দূরে, অন্ধকার গৃহে দরজা-জানালা লাগিয়ে অমলকে রেখে সুস্থ করার দাওয়াই দেয়। প-িত পুথিপত্র ঘেঁটে এ ব্যবস্থারই স্বপক্ষে রেফারেন্স টানে। অথচ অমল চায় বদ্ধ ঘরের আঙ্গিনা পেরিয়ে বন-ঝর্ণা-পাহাড়ের কোলে লুটিপুটি খেতে। সমবয়সী সুধার কাছ থেকে ঘ্রাণ ছড়ানিয়া ফুল পেতে। ডাকহরকরাদের সঙ্গে দুদ- কথা বলে নিঃসঙ্গতা ঘোচাতে। অথচ নিয়মের বেড়াজাল ভেঙ্গে অসুস্থ অমল যখন কিছুতেই মুক্তির পথ খুঁজে পায় না, তখন নিয়তির করুণ পথ ধরে অমলের মুক্তি ঘটে। আর সেখানে শেষ হয় জীবন বোধের বার্তা প্রেরিত নাটক ‘ডাকঘর’। ডাকঘর, কুঁড়েঘর কিংবা বসতঘর বানাবার দায়িত্ব সাধারণত পরিণত মানুষদের, কিন্তু যেহেতু স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের পথপ্রদর্শক নাট্যব্যক্তিত্বরা কী এক অজ্ঞাত কারণে নিজেদের দায়িত্ব থেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন। ফলে অপরিণত ছেলেদের ছেলেমানুষী এবং কিছু ক্ষেত্রে অদক্ষতাকে যতœ নিয়েই গ্রহণ করতে হচ্ছে। কারণ শূন্য গোয়াল থেকে দুই চারটা আদুরে বাছুর থাকা খারাপ না। নির্দেশক ইশতিয়াক হোসেনকে অনভিজ্ঞ ছেলেমেয়েদের নিয়ে ‘ডাকঘর’ই কেন করতে হবে সে ব্যাপারে পাঠশালার কর্তৃপক্ষের সুবিবেচনা আশা করাই যায়। তবে নামমাত্র অভিভাবকত্বের এই দোদুল্য সময় দিকহারা সন্তানেরা স্বল্পসময়ে স্বল্পঅর্থে যা করল তা একদম খারাপ না। ইশতিয়াকের বড় ঘাটতি পদ্মা-মেঘনা জল সীমারেখার নোম্যান্স রিভার ক্রসিং যথোপযুক্ত দেখাতে না পারা। দাঁত তুলতেই যেখানে ব্যক্তির নাভিশ্বাস দশা, সেখানে আত্মার দেহ ছাড়ার আকুতি আরও কত নির্মম এবং করুণ হবার তা নিশ্চয়ই নির্দেশক ইশতিয়াক ভাবতে পারেন।
×