ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কর ফাঁকি

নেইমারের চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

নেইমারের চ্যালেঞ্জ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কর ফাঁকি মামলা নিয়ে বেশ বেকায়দায় আছেন নেইমার। বার্সিলোনার ব্রাজিলিয়ান তারকাকে বিষয়টি নিয়ে হরহামেশাই আদালত পাড়ায় যেতে হচ্ছে। বিষয়টি রীতিমতো অস্থির করে তুলেছে ফর্মের তুঙ্গে থাকা এই তারকাকে। অনেকবারই তিনি বলেছেন, তাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে। আরও একবার নেইমার স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোন অন্যায় করেননি। বিরুদ্ধবাদীদের বিরুদ্ধে একপ্রকার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন নেইমার। ব্রাজিলিয়ান অধিনায়ক এসব নিয়ে ভাবেন না বলেও জানিয়েছেন। নেইমার বলেন, নিজেকে নিয়ে আমি খুশি। তবে যারা উল্টো পাল্টা কথা বলছে, ও এটা করেছে, তাদের আগে সেগুলো প্রমাণ করা উচিত। বিষয়টি নিয়ে ঝামেলায় আছেন নেইমারের বাবাও। এটা নিয়েও বেজায় মনোকষ্ট সময়ের অন্যতম সেরা এই ফুটবলারের। বাবার পাশে থেকে তিনি বলেন, আমার বাবা সবকিছু করে যাচ্ছেন, যেন আমি ফুটবলেই মনোযোগটা রাখতে পারি। কিন্তু যখন আপনার কাছের কাউকে কষ্ট পেতে দেখবেন, আপনার কষ্ট লাগবেই। ব্রাজিলিয়ান ক্লাব সান্টোস থেকে বার্সিলোনায় নেইমারের দল বদল নিয়ে স্পেন ও ব্রাজিলের আদালতে দুটি ভিন্ন মামলা চলছে। ব্রাজিলের আদালত এরই মধ্যে নেইমারের প্রায় ৪২ মিলিয়ন ইউরো পরিমাণ সম্পত্তি বাজেয়াফত করেছে। আর স্পেনের মামলাটিতে সদ্যই হাজিরা দিয়েছেন তিনি। এসবের মধ্যে আরও একটি মন্দ খবর পেয়েছেন নেইমার। কর ফাঁকির মামলায় ব্রাজিলের আদালত নেইমারকে ১ লাখ ১২ হাজার ডলার জরিমানা করেছে। অভিযোগ হচ্ছেÑ ২০০৭-০৮ সালে সান্টোসের মূল দলে অভিষেকেরও আগে, আয়কর ফাঁকি দিয়েছিলেন। ২০১২ সালেই এই মামলার রায় দেয়া হয়েছিল, তখন এর বিরুদ্ধে আপীল করেছিলেন নেইমার ও তার পরিবার। এতদিন পর আদালত সেই আপীল আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। ছোটবেলায় দারিদ্র্যের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে নেইমারের বাবা ‘সিনিয়র নেইমার দ্য সিলভা’কে। ভাগ্যান্বেষণে ব্রাজিলের মধ্যাঞ্চলের শহর সাও ভিনসেন্ট থেকে ১৯৯২ সালে সাও পাওলোর মগি দাস ক্রুজেস শহরে এসেছিলেন তিনি। মনের কোনে বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন লালন করে জন্মস্থান ছেড়ে এসেছিলেন সিনিয়র নেইমার। কিন্তু পারেননি ভাগ্যের চাকা সচল করতে। তার পেশাদার ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন অধরাই থেকে যায়। নিদারুণ ওই দুঃসময়ে সিনিয়র নেইমারের ভালবাসার প্রতীক হিসেবে ঘর আলো করে আসে জুনিয়র নেইমার। এরপর স্বপ্নের পরিধি বেড়ে যায় তার। নিজের অপূর্ণ ইচ্ছা ছেলেকে দিয়ে পূরণের স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এ কারণে অভাবের সংসার হলেও ছেলেকে এর আঁচ লাগতে দেননি। সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন উত্তরসূরির চাওয়া পূরণ করতে। ছোট্ট ছেলের প্রতিভা ক্ষুরধার হওয়ায় কাজটাও সহজ জয়। যার প্রমাণ মেলে স্থানীয় ‘পর্তুগীজ সানটিস্টা’ ফুটবলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে। তখনই স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, ব্রাজিলের বস্তি থেকে ফুটবিশ্ব শাসন করতে আসছে আরও একজন বিস্ময়বালক। মূলত সাও পাওলোর রাস্তায় ফুটসাল খেলতে খেলতে ফুটবলের সঙ্গে প্রেম হয়ে যায় সেদিনের ছোট্ট নেইমারের। আর তার পরিণতিটা নিয়মিতভাবে দেখেছে ফটবল দুনিয়া। নেইমারের বিস্ময়কর উত্থানের শুরু ২০০৩ সাল থেকে। ওই বছর তিনি কিশোর প্রতিভা হিসেবে কিংবদন্তি পেলের সাবেক ক্লাব সান্টোমে যোগ দেন। পেশাদার ফুটবলের সঙ্গে তখন থেকেই পরিচিতি ব্রাজিলের বর্তমান স্বপ্নদ্রষ্টার। ফলস্বরূপ অল্প সময়ের মধ্যেই নেইমারের সংসারের অভাব বিতাড়িত হয়। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই কাড়ি কাড়ি অর্থের মালিক বনে যায় নেইমারের পরিবার। এরপর প্রত্যাশিতভাবেই নাম লেখান সান্টোসের মূল দলে। বর্তমানেও আছেন তুখোড় ফর্মে। কিন্তু কর ফাঁকি নিয়ে নেইমার আছেন মহাবিপাকে।
×