ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মিক অনুভব

প্রকাশিত: ০৩:৫০, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আত্মিক অনুভব

দীলিপ কুমার সিকদার ‘বইপড়া মানুষের শ্রেষ্ঠ শখ’- প্রাবন্ধিক প্রমথ চৌধুরীর এই মহাসত্যের বাণীটা প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শেষে ১৯৮২ থেকে শুরু করলাম শিক্ষকতা জীবন। তবে বই পড়তে এবং ছাত্রছাত্রীদের বই পড়াতে উজ্জীবিত সত্তা ক্রমেই ম্রিয়মাণ হতে থাকে। শৈশব থেকে সাহিত্যপিপাসু চিত্ত নিরস ভূমিতে রূপান্তরিত প্রায়। কারণ খতিয়ে দেখতে গিয়ে পেলাম, আমাদের জাতীয় উপলব্ধির বড় অভাব, দৃষ্টিভঙ্গি সঙ্কীর্ণ স্রোতধারায় প্রবাহিত, জীবনবোধ একেবারেই নড়বড়ে। বই অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যতের সাঁকো। এটা আমরা উপলব্ধি করি না। বইয়ের ভেতর চুপচাপ থাকা বহুকালের বহু প-িতের ধর্ম, বিজ্ঞান, সাহিত্য, দর্শন, রাজনীতি, চিকিৎসা, অর্থনীতি, সমাজজীবন ইত্যাদি বিষয়ের কথা জেনে আমরা জীবনকে আলোকিত করতে পারি। সেই দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতা আমাদের কেন যেন নেই! জীবনবোধ, স্বদেশপ্রেম এবং স্বদেশিকতা আমরা গড়ে তুলতে পারছি না। প্রথমেই বলব, শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি। একটি শিশুর শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই বিরাট ব্যাগভর্তি একগাদা বই খাতা পিঠে ঝুলিয়ে দেয়া হয়। তাতেই অতি উৎসাহী শিশু বই পড়ায় নিরুৎসাহিত হয়ে পড়ে। দেশে পেশাজীবীরা পেশাগত বই ছাড়া অন্য বই পড়ে না। তার কারণ অর্থের আয়ের প্রতি অসীম আগ্রহ। অতি লোভে যথেচ্ছভাবে বেঁচে থাকার প্রাণান্ত প্রয়াস। প্রকৃত বেতনে ক’জন ভালভাবে বাঁচতে পারে? প্রত্যেক সরকারের রাজনৈতিক ফায়দা লোটার মিথ্যে আশ্বাসে চাকরিজীবীদের বাজার ব্যবস্থা লজ্জায় মুখ লুকায়। ফলে হারিয়ে যায় বই পড়ার মন। যে শিক্ষক বই পড়বে, শিক্ষার্থীদের বই পড়তে উৎসাহিত করবে, তারা আজ বেঁচে থাকার আন্দোলনে ব্যস্ত। একটি জাতির সার্বিক উন্নয়নের মূলশক্তি বই পড়া। আত্মার শক্তিকে জাগিয়ে তোলা। তার জন্য প্রয়োজন দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ, কলুষমুক্ত রাজনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের প্রতি গুরুত্বারোপ। লক্ষ্মীবাজার, ঢাকা থেকে
×