ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেলবোর্নে কারবার ঝলক

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মেলবোর্নে কারবার ঝলক

এক দশকেরও বেশি সময় আগে পেশাদার টেনিসে নাম লিখিয়েছিলেন এ্যাঞ্জেলিক কারবার। কিন্তু সাফল্যের দেখা পাচ্ছিলেন না তিনি। তবে কখনই হতাশ পাননি জার্মান তারকা। ধৈর্য ধরে নিজের লক্ষ্যটাকে অটুট রেখে সবসময়ই চেষ্টা করে গেছেন তিনি। অবশেষে তার ফল পেলেন এ্যাঞ্জেলিক কারবার। স্বপ্নের গ্র্যান্ড সøাম জয়ের স্বাদ পেলেন তিনি। মৌসুমের প্রথম গ্র্যান্ড সøাম টুর্নামেন্ট অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে। তাও আবার দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সেরেনা উইলিয়ামসকে হারিয়ে। মেলবোর্নের রড লেভার এ্যারেনায় অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে জার্মানির এ্যাঞ্জেলিক কারবার ৬-৪, ৩-৬ এবং ৬-৪ সেটে হারিয়ে দেন সেরেনা উইলিয়ামসকে। জয়ের পর অবশ্য সেরেনাকেই অনুপ্রেরণা হিসেবে দাবি করেছেন ২৮ বছর বয়সী কারবার। কোন গ্র্যান্ড সøামে সেরা সাফল্য ছিল তাঁর ২০১১ সালে ইউএস ওপেন এবং ২০১২ সালের উইম্বলডনে সেমিফাইনাল খেলা। এবার সব সাফল্যকে ছাপিয়ে প্রথমবার কোন গ্র্যান্ড সøামের ফাইনাল খেলার সুযোগ করে নেন তিনি। তবে প্রতিপক্ষ সেরেনা মানেই যে কোন টেনিস খেলোয়াড়ের জন্য বিশাল অগ্নিপরীক্ষা। তবে সেরেনা উইলিয়ামসকে হারানোর অভিজ্ঞতা আগেও একবার হয়েছিল জার্মান তারকার। যে কারণেই এবারের ফাইনালে বেশ আত্মবিশ্বাস নিয়েই কোর্টে নামতে দেখা যায় তাকে। মেলবোর্নে প্রথম সেটেই সেই আত্মবিশ্বাসটা কাজে লাগিয়ে সেরেনার বিপক্ষে জয়ে শুরু করেন তিনি। ব্যবধানটা ৬-৪! রড লেভার এ্যারেনার দর্শকরা এরপরই নড়েচড়ে বসেছেন তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর উত্তেজনায় ঠাসা ফাইনাল দেখার প্রত্যাশায়। তাদের হতাশ করেননি সেরেনা। পিছিয়ে পড়ে বারবার ঘুরে দাঁড়ানোটা একেবারেই স্বাভাবিক ঘটনা এ মার্কিন তারকার। বিশেষ করে সর্বশেষ চারটি মেজর আসরে ১১টি তিন সেটের লড়াই হয়েছে সেরেনা এবং প্রতিপক্ষের মধ্যে। দ্বিতীয় সেটে কারবারকে ৬-৩ গেমে হারিয়ে আরেকবার তিন সেটের ক্লাইম্যাক্সে নিয়ে যান তিনি ম্যাচটিকে। কিন্তু তৃতীয় সেটেই যেন ভেঙ্গে পড়েন বিশ্বসেরা। সেরেনাকে বারবারই কারবার পরাভূত করেছেন দারুণ কৌশলে। তৃতীয় সেটে ৫-৪ গেমে এগিয়ে থাকা কারবার ব্রেক পয়েন্ট জিতলেন। এরপরই প্রথমবারের মতো গ্র্যান্ড সøামের চ্যাম্পিয়ন। প্রথম ম্যাচে হারতে হারতে টিকে যাওয়া এ জার্মান তারকা টানা ৬ ম্যাচ জিতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের মুকুট পড়ে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। তবে এলাম দেখলাম আর জয় করলাম-প্রবাদটি পুরোপুরি সঠিক হবে না জার্মানির এই টেনিস তারকার ক্ষেত্রে। কারণ ২৮ বছর বয়সী এই টেনিস কন্যার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল একযুগ আগে। ২০০৩ সালে। দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনই ছিল তার প্রথম কোন গ্র্যান্ড সøামের ফাইনাল। আর প্রথম ফাইনালেই বাজিমাত। গ্র্যান্ড সøামের রীতি অনুসারে ট্রফি নিয়ে ভ্রমণে বের হয়ে জার্মানির এই টেনিস কন্যা জানালেন তাঁর জীবনের সেরা দুই সপ্তাহ ছিল সদ্য সমাপ্ত অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। এ বিষয়ে কারবার বলেন, ‘আমার ক্যারিয়ারের সেরা সময় ছিল অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনাল। যখন আমি গ্র্যান্ড সøাম শিরোপা জয়ের জন্য ম্যাচ পয়েন্ট জিতেছিলাম। আমার জীবনের অন্যতম সেরা স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। জয়ের মুহূর্তে অনেক কিছু মনে হচ্ছিল। সব সময় চেয়েছিলাম সবাই যেন বলে আমিই শিরোপার যোগ্য দাবিদার।’ এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘শিরোপা জয়ের পর আর ঘুমাতে যাইনি আমি। খেলা শেষে অনেক রাতে ঘরে ফিরে চলে গিয়েছিলাম বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে। জীবনের সেরা মুহূর্তটা আমি বন্ধুদের সঙ্গে পুরোপুরি উপভোগ করতে চাই।’ ক্যারিয়ারে ২৬টি গ্র্যান্ড সøামের ফাইনাল খেলেছেন সেরেনা উইলিয়ামস। হেরেছেন মাত্র পাঁচবার। ২১ গ্র্যান্ড সøাম জেতা এই তারকার সামনে ছিল সবচেয়ে বেশি বয়সে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জেতার। সুযোগ ছিল স্টেফির ২২ গ্র্যান্ড সøাম জয়ের রেকর্ড ছোঁয়ার। কোনটাই হলো না। অপেক্ষা বাড়লো তার। হতাশায় মুষড়ে পড়লেও বিজয়ী কারবারকে অভিনন্দন জানাতে মোটেও ভুল করেননি সেরেনা। এ বিষয়ে প্রতিভান তারকার ভূয়সী প্রশংসা করে আমেরিকান তারকা বলেন, ‘দারুণ একটি ম্যাচ ছিল। এ্যাঞ্জি, তোমাকে অভিনন্দন, অনেক ভাল খেলেছ এবং অবশ্যই এটা তোমার প্রাপ্য ছিল। আশা করি এই মুহূর্তটা তোমার জন্য খুবই উপভোগ্য হবে।’ এদিকে জিতে গেলেও সেরেনার প্রতি সম্মানটা অটুট ছিল ২৮ বছর বয়সী কারবারের। তিনি প্রায় রুদ্ধশ্বাসে নিজের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘সেরেনা আসলেই একজন অনুপ্রেরণার নাম। অবিশ্বাস্য মহান এক ব্যক্তিত্ব তিনি। ইতোমধ্যেই যা করেছেন তার জন্য সম্মান জানাচ্ছি। প্রথম ম্যাচে মনে হয়েছিল ইতোমধ্যেই আমার দেশে ফেরার বিমানে এক পা দিয়ে ফেলেছি। কিন্তু দ্বিতীয় সুযোগটা পেয়ে তা কাজে লাগাতে পেরেছিলাম। আর শেষ পর্যন্ত আমার স্বপ্নটাই পূরণ হলো। আমার সারাজীবনে কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং সেটার ফলাফল হিসেবে এখানে নিজেকে চ্যাম্পিয়ন দাবি করতে পারছি। জীবনের সেরা মুহূর্তগুলো এখানে কেটেছে আমার।’ অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আগে এ্যাঞ্জেলিক কারবারের সর্বোচ্চ অর্জন ছিল ইউএস ওপেন ও উম্বলডনের সেমিফাইনাল। নতুন বছরের শুরুতেই গ্র্যান্ড সøাম জিতে র‌্যাঙ্কিংয়েও উন্নতি ঘটেছে তার। এক লাফেই বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বরে উঠে এসেছেন তিনি। এর ফলে আনন্দে-উল্লাসে ভাসছেন জার্মান তারকা। তবে হতাশায় আচ্ছন্ন সেরেনা উইলিয়ামস। কেননা ইতিহাস গড়ার কাছাকাছি পৌঁছেও যে অপেক্ষাটা আরও বাড়ল ৩৪ বছর বয়সী তারকার। গত বছর ইউএস ওপেনের ফাইনালে উঠেও হাতছাড়া করেছিলেন তিনি। এবার বছরের প্রথম গ্র্যান্ড সøামেই সুযোগটা হারালেন তিনি। ক্যারিয়ারের ২১ গ্র্যান্ড সøামের সঙ্গে আরেকটি শিরোপা যোগ করতে পারলেই সুযোগ ছিল সাবেক জার্মান তারকা স্টেফি গ্রাফের ২২ গ্র্যান্ড সøাম জয়ের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলার। কিন্তু সেই অপেক্ষা বাড়ল বিশ্বের এক নম্বর এই তারকার।
×