ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তবুও প্রাপ্তি ভারতের

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

তবুও প্রাপ্তি ভারতের

সার্বিক বিচারে অস্ট্রেলিয়ায় মিশ্র সফর শেষ করল ভারত। প্রথমে ওয়ানডেতে হার ৪-১ ব্যবধানে হার। আবার সেই মহেন্দ্র সিং ধোনির দলই ৩-০তে টি২০ সিরিজ জিতে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখল করে। এক সফরে মুদ্রার দুই পিঠ দেখল ক্রিকেটের মোড়লরা। তবে, এই জয়-পরাজয়েও নতুন রেকর্ড গড়ে ধোনি-বাহিনী। ‘ক্যাপ্টেন কুল’ যা করেছেন, তা ক্রিকেট ইতিহাসের ১৩৯ বছরে কেউ পারেননি। এমনকি প্রবল দাপুটে ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ, কিংবা গ্রায়েম স্মিথের দক্ষিণ আফ্রিকা। সেটি হলো- অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে ‘হোয়াইটওয়াশ’। ধোনি সেটিই করে দেখালেন টি২০ তে। টানা চার ম্যাচে হেরে যখন হোয়াইটওয়াশের মুখোমুখি, তখনি শেষ ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়ায় ভারত। প্রত্যেক ম্যাচে ব্যাটিং সামর্থ্য দেখান রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, শিখর ধাওয়ানরা। প্রথম চার ম্যাচে ১৩০০ রান তুলেও হার দেখতে হয় অতিথিদের। এরপরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। টানা তিন টি২০ জিতে নেয় ধোনি-বাহিনী। শেষ ম্যাচে তো সিডনিতে রান তাড়ায় ২০০ করেও অস্ট্রেলিয়াকে হারায় তারা। যার মধ্য দিয়ে প্রথম সফরকারী অধিনায়ক হিসেবে ধোনি অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করার কৃতিত্ব দেখান। এর আগে গ্রায়েম স্মিথ, ক্লাইভ লয়েডরা সফরে গেলেও এমন কীর্তি গড়তে পারেননি। আর টেস্ট-ওয়ানডে কিংবা টি২০, অস্ট্রেলিয়া প্রথম কোন সিরিজের সবকটি ম্যাচ হারের তিক্ত স্বাদ পায়। ২০০৮ সালে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ায় ত্রিদেশীয় সিরিজ জিতেছিল ভারত। এছাড়া স্বাগতিক হিসেবে ১৯৭৮-৭৯ সালে খুবই বাজে পারফর্ম করেছিল অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের কাছে তারা ৫-১ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ হেরেছিল। নিজ দেশে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে এ পর্যন্ত ২৫ ম্যাচ খেলে অসিরা মাত্র ৫টিতে হেরেছে। ওয়ানডের বদলা নেয়ার পাশাপাশি টি২০তে প্রতিপক্ষকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করে র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে আসে ভারত। টি২০ বিশ্বকাপের আগে যা দলটির জন্য দারুণ খবর। মার্চ-এপ্রিলে ঘরের মাটিতে শিরোপা পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে নামবে ভারত। এতদিন শীর্ষস্থান ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের দখলে। ক্যারিবিয়দের চেয়ে দু’পয়েন্ট এগিয়ে ভারতের রেটিং এখন ১২০। দুই আর তিনে থাকা উইন্ডিজ ও শ্রীলঙ্কার রেটিং সমান ১১৮। একটা সময় পর্যন্ত টি২০র রাজা ছিল এই ভারতই। ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত টি২০ বিশ্বকাপ জিতে বাজিমাত করেছিল ধোনির দল। এবার অস্ট্রেলিয়া সফরে শীর্ষস্থান দখল এশিয়া কাপ ও টি২০ বিশ্বকাপে ভারতকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাবে। টি২০তে চার ও পাঁচে রয়েছে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। ব্যাটিং নিয়ে দলটির সমস্যা কোনকালেই ছিল না। এই সফরে বড় প্রাপ্তি বোলিং, বিশেষ করে টি২০তে অতিদের বোলিং আক্রমণ ছিল আশাজাগানিয়া। অসাধারণ বল করেছেন তরুণ পেসার জাসপ্রিত বুমরা। সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে অভিষেকের পর চার ম্যাচে ৮ উইকেটে নিয়েছেন তিনি। ২২ বছর বয়সী ডানহাতি পেসারে রীতিমতো মুগ্ধ অধিনায়ক ধোনি। সর্বোপরি উচ্ছ্বাস ঝড়েছে কোহলি-রোহিতদের কণ্ঠেও। ‘অভিষেকের পর চারটি ম্যাচেই বুমরা অসাধারণ বোলিং করেছে। বিশেষ করে ওর লেন্থ এবং ইয়র্কারগুলো বিশ্বমানের। আমি তো বলব অস্ট্রেলিয়া সফরে বুমরাই আমাদের সেরা আবিষ্কার। আগে দেশের বাইরে গিয়ে সবসময়ই বোলিং নিয়ে দুশ্চিন্তা হতো। এবার সেটি হয়নি। টি২০ বিশ্বকাপের আগে দলের জন্য এটা খুবই ইতিবাচক।’ বলেন ধোনি। সঙ্গে থাকলেও একটি ম্যাচেও সুযোগ হয়নি অভিজ্ঞ হরভজন সিংয়ের। এ প্রসঙ্গে ভারত সেনাপতির বক্তব্য, ‘প্রতিপক্ষের ওপরই নির্ভর করবে আবার কি দল নিয়ে মাঠে নামব। আগামীতে হয়ত সুযোগ পাবে। তবে জয়ের জন্য আমাদের সম্ভাব্য সেরা একাদশটাই বেছে নিতে হবে।’ শেষ টি২০তে ১৯৭ রান চেজ করে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে জেতে ভারত। শেষ মুহূর্তের প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ সময়ে চার হাকিয়ে সঙ্গী যুবরাজ সিংকে (১৫*) নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন ৪৯ রানে অপরাজিত সুরেশ রায়না। ধোনি বলেন, ‘রায়না আইপিএলে দীর্ঘদিন তিন নম্বরে ব্যাট করে সফল। বিশ্ব টি২০তেও একই পজিশনে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিল। ওর সবচেয়ে বড়গুণ পাঁচ বা ছয়ে একইভাবে ব্যাট করতে পারে। যেটা আর কেউই পারে না।’ আগের দুটি ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগই হয়নি যুবির। এ প্রসঙ্গে অধিনায়কের পরামর্শ, ‘আমার মনে হয় কম্বিনেশন ঠিক আছে। শেষ ম্যাচে পাঁচ নম্বরে নেমে যুবরাজ ভাল করেছে। বিশ্বকাপ পর্যন্ত যুবিকে আরও অনেক ম্যাচ খেলতে হবে। তাহলেই ও ক্রমশ নিজের সেরা ফর্মে ফিরতে পারবে।’ টি২০ সিরিজে টানা তিন ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েছেন কোহলি। ভারতীয় ক্রিকেটের ক্রেজী বয় বলেন, ‘আপনি যত ভাল ব্যাটিং করুন, আসল কথা দলের জয়। ওয়ানডেতে যেটা হয়নি। কিন্তু টি২০তে সেটা পুষিয়ে দেয়া গেছে।’ কোহলির পাশাপাশি সফরে অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন ওয়ানডের ইতিহাসে দু-দুটি ডাবল সেঞ্চুরিরর মালিক রোহিত। তিনি বলেন, ‘ওয়ানডে বা টি২০ যাই হোক, ওপেনার হিসেবে একটা বাড়তি দায়িত্ব থাকে। শুরুটা ভাল করতে পারলে টিম উপকৃত হয়। দলে প্রয়োজন মেটাতে আমি সেটিই করতে চেয়েছি।’ অধিনায়ক ধোনির মতোই পেসার বুমরার প্রশংসা করেছেন ভারতের সময়ের সেরা দুই ব্যাটসম্যান কোহলি ও রোহিত। সফরে মাঠে দর্শকদের ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে অতিথিরা। এ বিষয়ে ধোনি বলেন, ‘দুর্দান্ত। দর্শকদের সমর্থনে অভিভূত। যখন আমরা জিততে পারিনি তখনও প্রবাসীরা আমাদের পাশে ছিল। বিদেশে যখনই খেলি সমর্থনের কমতি থাকে না। এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এতে দল বাড়তি অনুপ্রেরণা পায়। অস্ট্রেলিয়া যেভাবে শেষ কটি ম্যাচ খেলেছি, তাতে আমি গর্বিত।’ সফর নিয়ে ইতিবাচক কোহলিও। তারকা ব্যাটসম্যান বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় আসতে আমার ভাল লাগে। উইকেটে পেস আছে, বাউন্স আছে। এত দর্শক সমর্থন, মনেই হয়নি দেশের বাইরে খেলছি। দলের সাফল্যে ভূমিকা রাখতে পেরে খুশি। সবাই ছিল দুর্দান্ত। এবার শিখর দেখিয়েছে ও কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। আর রোহিত যেদিন খেলতে শুরু করে, সেটি দেখার চেয়ে ভাল দৃশ্য আর হয় না।’
×