ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোকসানা বেগম

শান্ত- আগামীর তারকা

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

শান্ত- আগামীর তারকা

কথা বার্তাতেও শান্ত। বড় ইনিংস গড়ার পর উদযাপনেও শান্ত। কিন্তু একটি স্থানে নাজমুল হোসেন শান্ত খুবই অশান্ত। সেটি হচ্ছে, প্রতিপক্ষের জন্য। যখনই কোন দলের বিপক্ষে খেলতে নামেন এ ব্যাটসম্যান, তখনই অশান্ত হয়ে ওঠেন। রানের ওপর রান করতে থাকেন। এমন করতে করতে যুবাদের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের মালিকই হয়ে গেছেন শান্ত। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে যখন অপরাজিত ১১৩ রানের ইনিংস খেলেছেন, তখন রানের দিক থেকে সব যুবাদের ছাড়িয়ে গেছেন শান্ত। সেই শতকে বাংলাদেশ যুবদলও জিতে সুপার লীগের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নিয়েছে। শান্ত দেখিয়েছেন মাঠে ব্যাট হাতে কতটা অশান্ত তিনি। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৩ রানের ইনিংস খেলার পরই শতক করে দেখালেন। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে বিশ্বরেকর্ড থেকে মাত্র ৬২ রান দূরে ছিলেন যুবদলের নাজমুল হোসেন শান্ত। মাঠে নেমে সেই রানটা করে ফেলেছেন তিনি। হয়ে গেছে রেকর্ডও। আন্তর্জাতিক যুব ওয়ানডের ইতিহাসে শান্তই এখন সর্বোচ্চ রানের মালিক। তিনি যেন ছোটদের ‘শচীন’! এতদিন পর্যন্ত এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন পাকিস্তানের সামি আসলাম। তার মোট রান ১৬৯৫। তার রেকর্ড ভাঙ্গার পথে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৭৩ রান করেন শান্ত। তখনই মূলত বিশ্বরেকর্ড গড়ার সুযোগ শান্তর খুব কাছে চলে আসে। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করে নিজের দুর্দান্ত ফর্মের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন শান্ত। দ্বিতীয় ম্যাচেও দারুণ এক হাফসেঞ্চুরি করে ফর্মের ধারাবাহিকতা দেখালেন তিনি। একই সঙ্গে পেয়ে গেলেন রেকর্ডের মালিকানাও। মজার বিষয় হলো, এই বিশ্বকাপে খেলা এক হাজারের ওপর রান আছে, এমন খেলোয়াড় মাত্র দুজন এবং উভয়েই বাংলাদেশের! একজন তো শান্তই, অপরজন যুবদলের অধিনায়ক মেহেদি হাসান মিরাজ। বাংলাদেশ-স্কটল্যান্ড ম্যাচ পর্যন্ত এক হাজার রানের খুব কাছাকাছি যে আছেন, তিনিও বাংলাদেশের জয়রাজ শেখ। এক হাজার রান থেকে তিন রান দূরে আছেন তিনি। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৩৮তম ওভারের প্রথম বলে স্কটল্যান্ডের অধিনায়ক নিল ফ্ল্যাকের বলে চার মেরে সামি আসলামকে ছাড়িয়ে যান শান্ত। ওই ওভারে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে যুব ওয়ানডেতে ১৭০০ রান করার কীর্তি স্পর্শ করেন তিনি। বিশ্ব রেকর্ড গড়তে ৫৪ ম্যাচের ৫৩ ইনিংস লাগল শান্তর। এর মধ্যে তার একটি সেঞ্চুরি এবং ১৩ হাফসেঞ্চুরি আছে। শান্তর আগে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ যুব ওয়ানডে রানের মালিক ছিলেন এনামুল হক বিজয়। তার রান ছিল ১৩২৬। বিশ্বরেকর্ডের পথে ছোটার সময়ে বিজয়কে অনেক পেছনেই ফেলে এসেছেন তিনি। শান্তকে মনে করা হয় জাতীয় দলের ভবিষ্যত তারকা। বিশ্বকাপে পরপর দুই ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি এবং এর মধ্যেই রেকর্ড গড়ে জাতীয় দলে নিজের সম্ভাবনাকে আরও উজ্জ্বল করে তুললেন এই তরুণ। শান্তকে মূলত জেদ ধরিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ যুবদলের পরামর্শক স্টুয়ার্ট লই। শুধু শান্ত নয়, প্রত্যেক ব্যাটসম্যানকেই তাতিয়ে দিয়েছিলেন পরামর্শক। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বড় ইনিংস গড়ার পথে গিয়েও ব্যাটসম্যানরা পারেননি। তাই স্টুয়ার্ট ল বলেছিলেন, ‘সেঞ্চুরি চাই।’ সেই চাওয়া দ্বিতীয় ম্যাচেই পূরণ করেছেন শান্ত। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকা যুবদলকে ৪৩ রানে হারিয়ে টুর্নামেন্টে শুভসূচনা করেছিল বাংলাদেশ যুবদল। এরপরও বাংলাদেশ দলের পরামর্শক স্টুয়ার্ট ল’র মন ভরেনি। কারণ একটাই, কোন সেঞ্চুরি যে হয়নি। শান্ত ৭৩ রান করেও সেঞ্চুরি পায়নি। এ স্কোরকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করছে ব্যাটস-ম্যানরা, তা দেখতে চেয়েছিলেন স্টুয়ার্ট ল। তার আশা স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৪ রানে জেতা ম্যাচেই পূরণ করে দেখিয়েছেন যুবারা। প্রথম ম্যাচে শান্তর ইনিংসকে সামনে তুলে ধরে পরামর্শক বলেছিলেন, ‘এটাই ওর কাজ। ওকে নির্দেশনা দেয়া আছে দলের ইনিংস গড়ার জন্য। ও সময় নিয়ে ইনিংস গড়েছে। সময় মতো দারুণ সব শট খেলেছে। তবে এটা হতাশাজনক যে আরও দুই-একজন ভাল শুরুটাকে কাজে লাগিয়ে স্কোরকে আরও বড় করতে পারেনি। আমরা স্মিথের (দক্ষিণ আফ্রিকা ওপেনার) সেঞ্চুরি দেখেছি। টপঅর্ডারে আমাদের একজন ব্যাটসম্যান এমন করতে পারলে আমরা ৩০০ রানের কাছে চলে যেতে পারব।’ সেই কাজটি দ্বিতীয় ম্যাচে ঠিকই হয়েছে। তবে স্টুয়ার্ট ল যাই বলুন না কেন, শান্ত কিন্তু সেদিকে মনোযোগ দেননি। নিজের খেলাটাই খেলে গেছেন। তাতে সাফল্যও মিলেছে। প্রথম ম্যাচের পর শান্তর কথাতেই তা পরিষ্কার। তার সোজাসাপ্টা কথা, এক শ’ হলেই কি না হলেই কি; দল জেতাই মুখ্য। শান্ত বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে আমি ৭০ করে দল জিতিয়েছি, এটাই ভাল হয়েছে। এক শ’ করতে পারিনি, এটা আমার কাছে কিছু মনে হয় না। এক শ’ হলেই কি না হলেই কি! ম্যাচ জয়টাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ নিজের চেয়ে দলকে নিয়েই বেশি মাথা ঘামান সাকিব-তামিমদের এই অনুজ। আর সেটা ছোট বেলা থেকেই, ‘আমি যেদিন থেকে ক্রিকেট খেলি, সেদিন থেকেই লক্ষ্য দলের জয়ে অবদান রাখা। আমি সেঞ্চুরি করেও যদি দল হারে, তাহলে তো লাভ নেই। আমার পরিকল্পনা বরাবরই থাকে যে ১০০ করি, ৭০ করি বা ১০ করি দলের জয়ে যেন কাজে লাগে।’ ম্যাচে নিজের ব্যাটিং পরিকল্পনা নিয়ে ম্যাচ সেরা শান্ত বলেন, ‘প্রথমে পরিকল্পনা থাকে আমি স্ট্রাইক রোটেট করব উইকেটে গিয়ে, সিঙ্গেল খেলব ও বাজে বল পেলে মারব। সিঙ্গেল খেলে ইনিংসটা এগিয়ে নেব। যেহেতু অনেকে নতুন ক্রিকেটার ছিল, হয়ত একটু ভয় কাজ করতে পারে। তবে মাঠে নামার আগে আমরা সবাই একটা কথাই বলেছি যে স্বাভাবিকভাবেই খেলব। এটা বিশ্বকাপের ম্যাচ, সেটা মাথায় রাখব না।’ সব পরিকল্পনাই ভালভাবে কাজে লেগেছে। তাই বাংলাদেশ যুবদল সুপার লীগের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলাও নিশ্চিত করে নিয়েছে। সেই সঙ্গে শান্তর সব পরিকল্পনাও কাজে লেগেছে। শুধু কী কাজে লেগেছে, বিশ্বকাপে শান্ত তো প্রতিপক্ষের জন্য অশান্ত হয়ে উঠেছেন!
×