ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজস্ব ফাঁকি রোধে পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে কলরেট

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রাজস্ব ফাঁকি রোধে পুনর্নির্ধারণ করা হচ্ছে কলরেট

ফিরোজ মান্না ॥ আন্তর্জাতিক কলরেট পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সম্মতি দিলেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। আন্তর্জাতিক কলরেট পুনর্নির্ধারণ করা হলে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি ও অবৈধ কল টার্মিনেশন কমে যাবে। তখন আর অবৈধ কল বা ভিওআইপি করে সুবিধা করতে পারবে না সিন্ডিকেট। ভিওআইপির মাধ্যমে প্রতিমাসে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ওই সিন্ডিকেট। এই টাকার কোন রাজস্ব সরকার পাচ্ছে না। কয়েকটি আইজিডব্লিউ কোম্পানি নিজেদের ইচ্ছেমতো আন্তর্জাতিক কলরেট বাড়িয়ে নিয়েছে। বাড়তি কলরেট থেকে রাজস্ব আদায়ের জন্য বিটিআরসি এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কলরেটের সর্বোচ্চ সীমার জন্য সরকারের সিদ্ধান্ত পেলে ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে (আইজিডব্লিউ) অপারেটরদের এ বিষয়ে নির্দেশ দেবে বিটিআরসি। কলরেটের সর্বোচ্চ সীমা ১ দশমিক ৫ সেন্ট থেকে ১ দশমিক ৭৫ সেন্ট নির্ধারণের একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে বিটিআরসি। এই প্রস্তাব ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় আবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে অনুমোদন পেলে বিটিআরসি নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। সূত্র জানিয়েছে, সাতটি আইজিডব্লিউ অপারেটর জোট বেঁধে কলরেট দেড় সেন্ট থেকে দুই সেন্ট বাড়ানোর ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। এগুলো হচ্ছে ইউনিক ইনফোওয়ে, ডিজিকন টেলিকমিউনিকেশন্স, রুটস কমিউনিকেশন্স, গ্লোবাল ভয়েস, মীর টেলিকম, বাংলা ট্র্যাক ও নভো টেলিকম। এই প্রতিষ্ঠানগুলো বিটিআরসির কোন অনুমতি ছাড়াই আধা সেন্ট করে কলরেট বাড়িয়ে দিয়েছে। বিটিআরসি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বার বার চিঠি দিলেও তারা বিটিআরসি বেঁধে দেয়া কলরেট দেড় সেন্টে নামিয়ে আনেনি। এরপর বিটিআরসির আন্তর্জাতিক কলরেট পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইজিডব্লিউগুলো আন্তর্জাতিক কলরেট বাড়িয়ে দেয়ার কারণে গ্রাহকদের কলরেটও বেড়ে গেছে। বিদেশে কল করা কিংবা বিদেশ থেকে দেশে কল করলে গ্রাহকদের আগের তুলনায় বেশি টাকা দিতে হচ্ছে। আগে ৭ টাকা মিনিটে কল করা যেত। এখন এই কল ৯ টাকার কাছাকাছি চলে গেছে। কিন্তু বাড়তি টাকার কোন রাজস্ব সরকার পাচ্ছে না। এদিকে বিটিআরসির নিয়মানুযায়ী প্রতি এক মিনিট কল থেকে যে আয় হয় বিটিআরসি তার ৪০ শতাংশ, ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ, মোবাইল অপারেটর ২২ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আইজিডব্লিউ অপারেটরগুলো বাকি ২০ শতাংশ পেয়ে থাকে। ২৩টি আইজিডব্লিউ অপারেটরের মধ্যে সাতটি আইজিডব্লিউ অপারেটর সিন্ডিকেট করে কলরেট বাড়ানোর ফলে আগের নিয়মেই অর্থের অংশ পাচ্ছে সরকার। নতুন নিয়মে মাত্র সাতটি অপারেটর কল টার্মিনেট বা গ্রাহক পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। গত কয়েক মাস ধরে এই প্রক্রিয়ায় তারা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের ইচ্ছেমতো আন্তর্জাতিক গেটওয়ে অপারেটরগুলো (আইজিডব্লিউ) হঠাৎ করেই কল আদান প্রদানের রেট বাড়িয়ে দিয়েছে। বিটিআরসির বেঁধে দেয়া রেট দেড় সেন্ট থেকে বাড়িয়ে আইজিডব্লিউ এ্যাসোসিয়েশন দুই সেন্ট করে নিয়েছে। আধা সেন্টের কোন রাজস্ব সরকার পাবে না। আইজিডব্লিউ অপারেটর ফোরাম (আইওএফ) ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট থেকে ১ টাকা ১৭ পয়সা (এক সেন্ট) থেকে কলরেট বাড়িয়ে ১ টাকা ৫৬ পয়সা (দুই সেন্ট) করেছিল। বিটিআরসি এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গার জন্য নতুন করে কলরেট নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে এ বিষয়ে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। অল্পদিনের মধ্যে নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে বলে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
×