ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পোস্টার নুরুল ইসলাম ও এমএ আজিজের স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ ও আমাকে ১/১১-এ দলের ত্যাগী নেতারাই রক্ষা করেন

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আওয়ামী লীগ ও আমাকে ১/১১-এ দলের ত্যাগী নেতারাই রক্ষা করেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ বহু ত্যাগী ও আদর্শবান নেতার জন্ম দিয়েছে। আর এসব ত্যাগী নেতা ছিলেন বলেই এত আঘাত ও ষড়যন্ত্রের পরও আওয়ামী লীগের কেউ ক্ষতি বা ধ্বংস করতে পারেনি। ওয়ান ইলেভেনের সময়ও আওয়ামী লীগকে শেষ করে দিয়ে কিংস পার্টি তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল। আমাদের দলের ভেতর থেকেও আওয়ামী লীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগকে ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের শিকড় অনেক গভীরে। আওয়ামী লীগে থাকা ত্যাগী ও আদর্শবান নেতাকর্মীদের কারণে তারা সফল হতে পারেনি। আগামীতেও পারবে না। মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে সদ্য প্রয়াত আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা ও বঙ্গবন্ধুর ¯েœহধন্য নুরুল ইসলাম (পোস্টাল নুরুল ইসলাম) এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের স্মরণে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সংগ্রাম, সংগ্রামের পাশাপাশি বারংবার ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের শিকার হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইয়ুব-ইয়াহিয়া খান, জিয়া-খালেদা জিয়ার আমলে বারংবার আওয়ামী লীগকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, অনেক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে। তখন রাজনীতি করা ততটা সহজ ছিল না। ’৮১ সালে দেশে ফেরার পরও ক্ষমতাসীন সরকার ছাড়াও আমাদের দলের ভেতর থেকেও অনেক বাধা পেতে হয়েছে। কিন্তু দলের প্রতিটি চরম দুঃসময়ে আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও পুরনো নেতারা ছায়া দিয়ে আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ওয়ান ইলেভেনের সময় আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে নানা ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ও আমাদের কিছু নেতাকে দিয়ে আওয়ামী লীগ ও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে ভাঙ্গার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। তখন আমি কারাগারে। কিন্তু ওই দুঃসময়ে এই মহানগর আওয়ামী লীগসহ রাজধানীর প্রতিটি সহযোগী সংগঠনের নেতারা মাত্র ১৫ দিনে আমার মুক্তির জন্য ২৫ লাখ মানুষের স্বাক্ষর গ্রহণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তখনই ওই সময়ে ক্ষমতাসীনরা বুঝতে পেরেছিল আওয়ামী লীগের শিকড় অত্যন্ত গভীরে। এ দলকে শেষ করা যাবে না। সদ্য প্রয়াত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিভাবে একটি মানুষ জীবনের সবকিছু সংগঠনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে পারে, তা প্রয়াত নেতা এম এ আজিজের রাজনৈতিক জীবন থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে এম এ আজিজের পরিবার আমাদের সঙ্গে জড়িত। অত্যন্ত নির্লোভ মানুষ ছিলেন তিনি। কোন হামভরা ভাব তাঁর ছিল না। আজীবন এম এ আজিজ ও তাঁর পরিবার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়ন ও আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করে গেছেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কারাগারে থাকার সময় এম এ আজিজকে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, ওয়ান ইলেভেনের সময় চরম দুঃসময় ছিল নেতাকর্মীদের জন্য। তখন কারাগার থেকে আমি একটি চিঠি লিখে জিল্লুর রহমানের (রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিল্লুর রহমান) কাছে পাঠাই। তাতে লিখে দিয়েছিলাম এম এ আজিজকে যেন মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয়। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই মরহুম এম এ আজিজ আমার মুক্তি ও গণতন্ত্রের জন্য নেতাকর্মীদের সংগঠিত ও সক্রিয় করেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির হয়ত নেই যে, মাত্র ১৫ দিনে আমার মুক্তির জন্য ২৫ লাখ মানুষের স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়েছিল। এম এ আজিজের নেতৃত্বে তা সম্ভব করেছিল নগর আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তিনি বলেন, প্রয়াত আবদুল আজিজের মৃত্যুতে আওয়ামী লীগের যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো তা কোনদিন পূরণ হওয়ার নয়। আওয়ামী লীগকে শুধু উনি দিয়েই গেছেন, কোনদিন কিছু পাওয়ার আশা করেননি। এ ধরনের নিবেদিত নেতাকর্মী রয়েছে বলেই আওয়ামী লীগের কেউ ক্ষতি করতে পারেনি। তিনি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করে বলেন, এ দুটি কমিটি মোটামুটি ঠিক করে রেখেছি। এম এ আজিজকে আমি দক্ষিণের সভাপতি করেছিলাম। কয়েকদফা তাঁর সঙ্গে বৈঠক করে দলের চরম দুঃসময়ে যারা আওয়ামী লীগের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদের যেন মূল্যায়ন করা হয় সেজন্য তাঁকে বলেছিলাম। আরেকটি বৈঠক করে কমিটি চূড়ান্ত করার কথা ছিল। কিন্তু তাঁর আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন এম এ আজিজ। সদ্য প্রয়াত আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় প্রচার ও সম্পাদক এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ¯েœহধন্য নুরুল ইসলামের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রয়াত নুরুল চাচা বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ¯েœহধন্য ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর জন্য নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। আমৃত্যু আওয়ামী লীগের জন্য নীরবে কাজ করে গেছেন তিনি। ঐতিহাসিক ৬ দফাসহ প্রতিটি আন্দোলনে নুরুল চাচা ছিলেন সক্রিয়, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁকেও বহুবার কারাভোগ করতে হয়েছে, নিজের হাতে পোস্টার লিখে তা টানানোর সময় নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। তিনি বলেন, ’৭৫-এর পর চরম দুঃসময়েও নুরুল চাচা ছিলেন দলের জন্য সক্রিয়। আমাদের পরিবারের সঙ্গে তাঁর ছিল অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা। বঙ্গবন্ধু কারাগারে থাকার সময় নুরুল চাচা টিবি রোগে আক্রান্ত হয়। তখন আজকের মতো এত আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না, কেউ টিবি হাসপাতালের পাশেও যেতে চাইত না। কিন্তু আমার মা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব নুরুল চাচাকে রিক্সায় করে টিবি হাসপাতালে নিয়ে যেয়ে ভর্তি করিয়েছেন, খাবারসহ চিকিৎসার দেখভাল করেছেন। বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পরপরই নুরুল চাচাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রয়াত নুরুল ইসলাম ও এম এ আজিজের মতো ত্যাগ ও আদর্শ নিয়ে সবাইকে রাজনীতি করতে হবে। কেননা ত্যাগেই সুখ, ভোগে সুখ নেই। দেশের ইতিহাসে তাঁদের নাম চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তাঁরা আজীবন নিজের সবকিছু ত্যাগ করে দলকে শক্তিশালী করে গেছেন, সংগঠনের জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছেন। প্রতিটি নেতাকর্মীকে তাঁদের মতো ত্যাগ ও আদর্শ নিয়ে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি কামাল আহমেদ মজুমদারের সভাপতিত্বে শোকসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ ও শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, একেএম রহমতুল্লাহ, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এমপি, প্রয়াত এম এ আজিজের পুত্র কাউন্সিলর ওমর বিন আজিজ তামিম, নগর নেতা ফয়েজ উদ্দিন মিয়া, শেখ বজলুর রহমান, মুকুল চৌধুরী, হাজী মোহাম্মদ সেলিম এমপি, আওলাদ হোসেন, শাহে আলম মুরাদ, ডাঃ দিলীপ রায় প্রমূখ। সভা পরিচালনা করেন নগর নেতা আবদুল হক সবুজ।
×