ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা বোর্ডের ভুলের খেসারত দিচ্ছে শিক্ষার্থী

খাতা দেখতে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন শিক্ষক

প্রকাশিত: ০৪:৩২, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

খাতা দেখতে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিচ্ছেন শিক্ষক

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ শিক্ষা বোর্ডের ভুলের কারণে ভুগতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের পর মেধার ওপর আত্মবিশ্বাসী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের খাতা পর্যবেক্ষকের ভুলের খেসারত দিতে হয়। খাতা পরীক্ষণের নামে শিক্ষা বোর্ডগুলোয় নির্দিষ্ট ফি জমা দেয়ার পর চলে পুনঃ নিরীক্ষণ। মেধাবী শিক্ষার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বোর্ড কর্তৃপক্ষ খাতায় প্রাপ্ত নম্বর যোগফলে কোন ধরনের ভুল হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে। মূলত উত্তরপত্রে মানসম্মত নম্বর দেয়ায় অজ্ঞতা, যোগফলে ভুল ও উত্তরের বিপরীতে নম্বর না দেয়ার মতো ঘটনায় শিক্ষার্থীরা স্ব স্ব মেধার বিপরীতে ফলাফল পাচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, পরীক্ষার্থীদের খাতা সঠিকভাবে না দেখায় এমনকি হেয়ালিপনার কারণেই শিক্ষার্থীদের ফলা বিপর্যয় ঘটে। কিন্তু এসব পর্যবেক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোন ধরনের বিচারিক পদক্ষেপ না নেয়ায় বছরের পর বছর শিক্ষার্থীদের ভুগতে হচ্ছে। ফলে দিনের পর দিন খাতা পর্যবেক্ষকরা খাতা পরীক্ষণ ফি অসৎভাবে আদায়ের উদ্দেশে নির্দিষ্ট কোটার বাইরেও খাতা পর্যবেক্ষণের সুযোগ নেয়। তবে এ ধরনের অপরাধ ঘটছে বোর্ডের মুষ্টিমেয় অসাধু কর্মকর্তার পকেট ভারির কারণে। এমনও অভিযোগ রয়েছে, মেধাবী শিক্ষার্থীর অনেকের খাতা পরীক্ষণে আর্থিক সঙ্গতি নেই। ফলে শিক্ষার আলো থেকে এমনকি জীবনের সফলতা থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে। অথচ, বেতনভুক্ত সরকারী কর্মকর্তার অবহেলার কারণেই শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতর থেকে শুরু করে অভিভাবক পর্যন্ত সকলেই ক্ষতির সম্মুখীন। এদিকে, পিএসই, জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসিসহ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন পরীক্ষাসমূহের ফল প্রকাশের পরই কর্তৃপক্ষ মেধাবী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে ফল পরীক্ষণের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শিক্ষাবোর্ডের আওতায় সার্টিফিকেট পরীক্ষার্থীদের মোবাইলে এসএমএস প্রদানের মাধ্যমে আবেদন গ্রহণ করে। আবার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অন লাইনের মাধ্যমে আবেদনের ব্যবস্থা রেখেছে। মাত্র একসপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে বোর্ড কর্তৃপক্ষ এমন আবেদন বা এসএমএস আহ্বান করে। এরমধ্যেও অনেক আবেদন বা এসএমএস নির্দিষ্ট সময়ে না পৌঁছার কারণে শিক্ষার্থীদের খাতা পরীক্ষণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পিএসই ও জেএসসি পরীক্ষায় ফল প্রকাশিত হয়েছে। এই ফলাফলে যেসব শিক্ষার্থী স্ব স্ব মেধার ভিত্তিতে আশানুরূপ ফল অর্জন করতে পারেনি তাদের উদ্দেশে গত ১ থেকে ৭ জানুয়ারির মধ্যে খাতা পরীক্ষণের এসএমএস করার সুযোগ ছিল। একমাস পর অর্থাৎ গত ৩০ জানুয়ারি এসএমএসের ফলাফল প্রকাশের নির্ধারিত দিন ছিল। ৭ দিনের এ সুযোগে জেএসসি পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক এসএমএস জমা পড়েছে ১৩ হাজার ৭০৪টি। ৬ হাজার ১৮৪ শিক্ষার্থী তাদের খাতা নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করে। এসব শিক্ষার্থী খাতা পুনঃনিরীক্ষণের পর দেখা গেছে, ২২৫ জনের ফল পরিবর্তন এসেছে। এরমধ্যে অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ জন। কৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের মধ্য থেকে খাতা নিরীক্ষণের পর জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫২ জন শিক্ষার্থী। অপরদিকে, অকৃতকার্য থেকে কৃতকার্য হয়েছে ৬৩ জন। অভিযোগ রয়েছে, খাতা পর্যবেক্ষকের দায়িত্বহীনতার কারণে ২২৫ শিক্ষার্থীর জীবনে শিক্ষার আলোর পরিবর্তে অন্ধকার নেমে আসার মতো ঘটনা ঘটেছে। তবে পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষা বোর্ডের প্রকাশিত রেজাল্ট মেনে নিয়ে খাতা পরীক্ষণের আবেদন করেনি।
×