ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সম্ভাবনাময় লালমনিহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সম্ভাবনাময় লালমনিহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দর

জাহাঙ্গীর আলম শাহীন, লালমনিরহাট ॥ জেলায় অবস্থিত উত্তরাঞ্চলের সম্ভাবনাময় বুড়িমারী স্থলবন্দর নানা সমস্যায় মুখে পড়েছে। বন্দরের কার্যক্রম (আমদানি রফতানি) ব্যবহৃত হচ্ছে। দ্রুত সমস্যা সমাধান হলে বছরে বন্দর হতে শতকোটি টাকা রাজস্ব আয় সম্ভব। গত বছর রাজস্ব আয় হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। এ বছর আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা। বন্দর কর্তৃপক্ষের কয়েকটি রুমে গাদাগাদি করে চলছে কাস্টমের কার্যক্রম। কাস্টম ও ইমেগ্রেশন চেক পয়েন্টের পৃথক নিজস্ব ভবন নেই। উত্তরাঞ্চলের বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে একমাত্র তিনটি দেশের পণ্য আমদানি রফতানি হয়। এই বন্দর ব্যবহার করে ভারত, ভুটান ও নেপাল। বন্দরটি ত্রিদেশীয় বাণিজ্যে ভূমিকা পালন করে আসছে। অত্যন্ত গুরুতপূর্ণ এই বন্দরটি গুরুত্ব অনুসারে উন্নয়ন হয়নি। আধুনিক এই ব্যবসা বাণিজ্যে ও প্রযুক্তির যুগে তাই দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। সিএন্ডএফ এজেন্ট ও কাস্টম কর্তৃপক্ষে সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বন্দরের কার্যক্রম আধুনিক হয়েছে। ট্যাক্স নির্ধারণ ও আদায় কার্যক্রম কম্পিউটারের মাধ্যমে সফটওয়্যারে চলে। পণ্য আমদানি ও রফতানির তথ্য সার্ভারের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানিয়ে দিতে হয়। তথ্য প্রযুক্তি সম্পূর্ণ বৈদ্যুতিক নির্ভর। বুড়িমারী স্থলবন্দরে সর্বক্ষণিক বিদ্যুত ব্যবস্থা চালু থাকে না। বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখতে হলে রাস্তাটি ফোর লেন করা প্রয়োজন। প্রতিদিন শতাধিক পণ্য বোঝাই ট্রাক আমাদানি রফতানি কাজ করতে বুড়িমারী বন্দরে প্রবেশ করে। পণ্য বোঝাই ট্রাকের ওজন মাপার যন্ত্র ওয়েট ব্রিজ রয়েছে একটি। কমপক্ষে দু’টি ওয়েট ব্রিজ প্রয়োজন। বন্দর কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ভবন রয়েছে। কাস্টম ও ইমেগ্রেশন কর্মকর্তাদের নিজস্ব ভবন নেই। বন্দর কর্তৃপক্ষের কয়েকটি ছোট ছোট রুমে গাদাগাদি করে কাষ্টম সুপারগণ কাজ করছে। এক কক্ষে একজন করে সুপার পদমর্যাদার কাস্টম কর্মকর্তাগণ দাফতরিক কাজ করার নিয়ম। কিন্তু বুড়িমারী স্থলবন্দরে ছোট রুমে একাধিক কাস্টম সুপার ও ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার কর্মকর্তারা কাজ করছে। ৪-৫ জন ইন্সপেক্টর একরুমে টেবিল চেয়ার পেতে আমদানি রফতানি ফাইলের কাজ করছে। এতে কাজকর্মে স্বাভাবিক গতির পরিবর্তে ছন্দপতন ঘটছে। ১৯৮৯ সালে শুল্ক স্টেশন হিসেবে মাত্র ১৮ একর জায়াগা নিয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর চালু হয়। বন্দরের বর্তমান ব্যবসা বাণিজ্যের পরিধি বেড়েছে। এতে কমপক্ষে ৩০ একর জমি প্রয়োজন বন্দরের। বন্দরের আশপাশে অনেক জমি খালি পড়ে আছে। বন্দরের প্রয়োজনে সরকারের জমি অধিগ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে। বুড়িমারী স্থলবন্দরে ট্রান্সশিপম্যান ইয়ার্ড নেই। পৃথক কাস্টম ভবন ও ইমেগ্রেশন ভবন নেই। বন্দরের কার্যক্রমে গতি আনতে পৃথক পৃথক ভবন প্রয়োজন। বুড়িমারী স্থলবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। যে কেউ যখন তখন যেকোন ধরনের অপরাধ করে নিরাপদে স্থান ত্যাগ করতে পারবে। বন্দরে নিজস্ব পুলিশ ফাঁড়ি ও আনছার ব্যাটালিয়নের ফাঁড়ি নেই। বন্দরে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে নিরস্ত্র আনছার সদস্য। বন্দরে কর্মকর্তা, কর্মচারীদের পরিবার পরিজনে বসবাস করার আবাসিক কোয়াটার নেই। বুড়িমারী স্থলবন্দরে দেশের কোন সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংকের বুথ বা অফিস নেই। ব্যবসায়ী ও কাস্টম কর্তৃপক্ষকে ব্যাংকিং কার্যক্রম করতে বন্দর হতে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পাটগ্রাম উপজেলা সদরে যেতে হয়। বুড়িমারী স্থলবন্দরের এই সব সমস্যার কথা অকপটে স্বীকার করে নেয় সহকারী কাস্টমস কমিশনার মোঃ এনামুল হক। বুড়িমারী স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্টের মালিক মোঃ সাঈদ জানান, বুড়িমারী স্থলবন্দরের বিপরীতে ভারতের চ্যাংরাবান্ধা স্থলবন্দরে রেললাইন রয়েছে। বুড়িমারী বন্দরে জিরো পয়েন্ট হতে রেল সংযোগ নিতে মাত্র পাঁচশত মিটার রেললাইন বাংলাদেশ রেলওয়েকে বসাতে হবে। সরকার যদি সামান্য রেলপথ টুকু সংযোগ করে দেয়। তাহলে পাথর, কয়লাসহ অপচনশীল পণ্য রেলওয়ের মাধ্যমে পরিবহন করা সহজ হবে। এতে সরকার যেমন রাজস্ব বাড়বে। তেমনি পণ্য পরিবহনের খরচ কমে আসবে।
×