ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুনতাসীর মামুন

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ॥ সেনা কর্মকর্তাদের বয়ান

প্রকাশিত: ০৩:৩৫, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ॥ সেনা কর্মকর্তাদের বয়ান

(৩১ জানুয়ারির পর) জেনারেল জিয়া যে তার আসন দৃঢ় করতে চাচ্ছিলেন ডালিমদের ব্যবহার করে তার প্রমাণ পাই কিছুদিন পরই। তিনি তাদের জানাচ্ছেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এবং কর্নেল শাফায়াত জামিল তার কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। ডালিমের মতে, “শেখ মুজিবের প্রতি অন্ধ এই অফিসার কিছুতেই বাকশালী সরকারের পতনকে মেনে নিতে পারছিলেন না।” ডালিম জানাচ্ছেন, গোয়েন্দা রিপোর্টগুলো থেকে জানা যাচ্ছিল, ভারত চাচ্ছে খালেদ মোশাররফের মাধ্যমে পাল্টা অভ্যুত্থান করে তাজউদ্দীন আহমদকে দিয়ে সরকার গঠন করতে। এর পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে জিয়া ডালিমদের চাকরিতে ফেরত এনে বিভিন্ন ইউনিটে প্রেরণের প্রয়াস পান। ডালিম জানাচ্ছেন দ্রুত পাল্টা ব্যবস্থা না নেয়ায় তাদের এক সভায় মেজর হাফিজ ও ক্যাপ্টেন ইকবাল “জিয়ার যোগ্যতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করল।” এই হাফিজ পরবর্তীকালে বিএনপির একজন নেতা হয়ে ওঠেন। ডালিমদের বন্ধু কর্নেল হুদা খালেদের সঙ্গে আলাপ করলেন। তারপর জানালেন ডালিমদের, “খালেদ ভীষণভাবে হতাশ করেছে আমাকে। ও কিছুতেই বুঝল না। জেনারেল জিয়ার ব্যাপারে কোনো আপস করতে রাজি নয় খালেদ। তার মতে জিয়া আগস্ট বিপ্লবের উদ্দেশ্যাবলীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে নিজেই ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র করে চলেছে, যেটা তোমরাও নাকি বুঝতে পারছ না।” খালেদ মোশাররফের অনুমানই সত্য ছিল। অন্যদিকে, ডালিম জানিয়েছেন, কর্নেল তাহের বলেছিলেন, “এই মুহূর্তে জেনারেল জিয়ার বিরোধিতা করা দেশদ্রোহিতার শামিল।” [পৃ. ৫১০] তিনি যে ভুল করেছিলেন তা বলাই বাহুল্য। এরপর ডালিমের ভাষ্য অনুসারে খালেদ মোশাররফরা শক্তিশালী হয়ে ওঠে। দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন ফ্যাকশনের সঙ্গে ডালিমই কথাবার্তা বলছেন। এই হত্যাকাণ্ডে যে তার ভূমিকা বড় সেটি দেখাবার চেষ্টা করেছেন। তবে হত্যাকাণ্ডটি কিভাবে হলো, কিভাবে নিহতদের লাশ দাফন হলো এগুলোর কোনো বিবরণ নেই। খালেদদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাবার ব্যবস্থা ডালিমরা নিয়েছিলেন এবং খালেদ পরবর্তী সময় নিহত হনÑসে বিবরণও অনুপস্থিত। তবে খালেদ যখন ক্ষমতা সংহতকরণে এগোচ্ছিলেন তখন সেনা পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির উপস্থিত সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয় যে, “ঊীঢ়ড়ংবফ নেতারা কৌশলগত কারণে দেশ ত্যাগ” করবেন। “এরপর সিদ্ধান্ত নেয়া হয় কী করে খালেদ চক্রের পতন ঘটাতে হবে সেই বিষয়ে। জাতীয় বেইমান পরাজিত আওয়ামী বাকশালী গোষ্ঠী এবং তাদের মুরব্বি ভারতের হাতে ক্রীড়নক খালেদ চক্রকে উৎখাত করার জন্য সেনা পরিষদ কর্নেল তাহেরের নেতৃত্বাধীন গণবাহিনী এবং জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেমিক অন্যান্য দল ও গ্রুপ ন্যূনতম কর্মসূচীর ভিত্তিতে খালেদ চক্রের মুখোশ উন্মোচিত হওয়ার পর উপযুক্ত সময়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আর একটি অভ্যুত্থান ঘটাবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ওই বৈঠকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল সেটা ছিল রাষ্ট্রপতি মোশতাক এবং জিয়াউর রহমান সম্পর্কে। সফল বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে খালেদ চক্রের পতনের পর সর্বপ্রথম কাজ হবে জেনারেল জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করে তাকে আবার সেনাপ্রধান হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।... আরো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, নেতৃবৃন্দের যে অংশ ব্যাংককে অবস্থান করবে তার সঙ্গে প্রয়োজনমতো যোগাযোগ রক্ষা করে চলবে সেনা পরিষদ। জরুরী বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টের ইউনিটগুলোকে জানিয়ে দেয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। কর্নেল তাহেরও তখন বঙ্গভবনে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে তিনি বঙ্গভবন ত্যাগ করেন।” [পৃ. ৫৪২] এর পরের ঘটনা সবার জানা। ডালিমরা দেশত্যাগ করেন। খালেদ মোশাররফকে হত্যা করা হয়। সেনা পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জিয়াউর রহমান মুক্ত হন। জিয়াউর রহমান আবার তাহেরকে বন্দি করে ফাঁসি দেয়ার বন্দোবস্ত করেন। তারপর ইনডেমনিটি পাস করে খুনিদের স্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করেন। এতে বোঝা যায়, কী গভীরভাবে তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ছিলেন। ডালিম নিজেকে সব সময় দেশপ্রেমিক হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। খালেদ মোশাররফের সঙ্গে শেষ আলোচনায় খালেদ নাকি বলেছিলেনÑ“ডালিম, একটা কথা আমরা জানি, তুমি, নূর, পাশা, শাহরিয়ার, হুদা, রাশেদ, মহিউদ্দিন ও অন্যরা সবাই নিঃস্বার্থ দেশপ্রেমিক। স্বাধীনতাযুদ্ধকাল থেকেই দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ধ্যান-ধারণাও প্রায় এক। আমাদের তরফ থেকে আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, কর্নেল রশীদ এবং কর্নেল ফারুক ছাড়া আর কারো বিরুদ্ধে আমাদের তেমন কোনো অভিযোগ নেই। [পৃ. ৫৪০] খুন করা যদি দেশপ্রেমিকের কাজ হয় তা হলে আমাদের আর বলার কিছুই নেই। ডালিম জেনারেল জিয়ার সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ রেখেছেন, জিয়ার সঙ্গে তার কথোপকথনের হেরফের হতে পারে কিন্তু জিয়া যে প্রশ্রয়দাতা ও প্ররোচনাকারী ছিলেন তাতেও সন্দেহ নেই। শফিউল্লাহর সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন তা শফিউল্লাহ লিখেছেন কিন্তু ডালিম তার সঙ্গে ওইভাবে কথা বলে দাবিনামা তৈরি করেছিলেন তা মেনে নেয়া কষ্টকর। ডালিম তার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের কথা খোলাখুলিভাবেই বলেছেন। খালেদ মোশাররফ তার ভাষ্য অনুযায়ী প্রশ্রয় দিয়েছিলেন কিন্তু জিয়াকে গ্রহণ করতে পারছিলেন না। শাফায়াত জামিলও তাকে সহায়তা করেন। জিয়ার পক্ষে ছিলেন কর্নেল তাহের। তার ভাষ্য অনুযায়ী শফিউল্লাহ তাদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন কিন্তু কোনো পর্যায়েই তিনি ডালিমদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। শফিউল্লাহ ডালিম সম্পর্কে যা লিখেছেন তাতে মনে হয় তিনি তাদের প্রতি নমনীয় ব্যবহার আশা করেছিলেন। রাজনৈতিক প্রভুদের কঠোর আচরণ তার একপেশে মনে হয়েছে। সেটি স্বাভাবিক। আর্মির পক্ষে কোনো আদেশ পছন্দ না হলে তা দেশবিরোধী বা দেশের স্বার্থবিরোধী বলে ধরা হয়। আর্মির পক্ষে গেলে তা দেশের জন্য মঙ্গলজনক। আমাদের দেশের অনেক রাজনীতিবিদ তা মনে করেন। এবং ষড়যন্ত্রকারী জিয়া ও এরশাদের সময় লাল সালাম দিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখনও সেই ধারা বর্তমান। এর শেষ উদাহরণ জিয়াউর রহমান নামে এক বিমানবাহিনী প্রধানের আপত্তিতে মেট্রোরেলের গতিপথ বদলে দিতে হলো এবং তাতে সরকারের গচ্চা হয়েছে কয়েক শ’ কোটি টাকা। কিন্তু সরকার মনে করেছে বিমান প্রধানের সিদ্ধান্ত ঢাকা শহরের জন্য মঙ্গলজনক। আমাদেরটি নয়। ॥ তের ॥ লে. কর্নেল এমএ হামিদ ছিলেন জিয়ার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও ব্যাচমেট। তার স্মৃতিকথার নাম ফেলে আসা দিনগুলি। টুকরো অনেক স্মৃতিকথা সেখানে আছে যা থেকে পরবর্তীকালের বাংলাদেশের কুশীলবদের অনেকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আঁচ করা যায়। উল্লেখ্য, তিনি শফিউল্লাহরও ব্যাচমেট। কর্নেল হামিদের স্মৃতিকথায় উঠে এসেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে শুরু থেকেই ছিল দলাদলি। জিয়া শুরু থেকেই এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাকিস্তান থেকে ফেরত আসার পর তিনি দুই বন্ধুর সঙ্গেই দেখা করলেন। শফিউল্লাহ তখন সেনাপ্রধান। জিয়া উপ-প্রধান। শফিউল্লাহর সঙ্গে দেখা করলেন, জিয়াও ছিলেন। কথায় কথায় এরশাদের প্রসঙ্গ উঠলে শফিউল্লাহ বললেন, “এই তো দেখো না এরশাদের ব্যাপার। মাঝে মধ্যে দু-একজন সেপাই পালিয়ে আসে ওদিক থেকে। আর সে তাদের হাত দিয়ে আমার কাছে কেবল সোনা আর ডলার পাঠায়। [পাকিস্তান থেকে] তার জন্য আমাকে ব্যাংকে রীতিমতো আলাদা এ্যাকাউন্ট খুলতে হয়েছে।” দেখা-সাক্ষাত শেষে যখন বিদায় নিচ্ছেন তখন শফিউল্লাহ বললেন, খালেদ মোশাররফের সঙ্গে দেখা করে যেতে। তিনি দেখলেন খালেদ মিটিং করছেন। তখন তিনি আবার ঢুকলেন জিয়ার কামরায়। জিয়া বলল, “ব্যাটা দিনরাত কেবল মিটিং আর কনফারেন্সই করে। ওকে বেশি পাত্তা দেয়ার দরকার নেই। বলল, এই হেডকোয়ার্টারে সাবধানে চলবি। বহু গ্রুপ আছে, আমার সঙ্গে ক্লোজ যোগাযোগ রাখবি, তা না হলে মারা পড়বি। তার কথা শুনে আমি ঘাবড়ে গেলাম। বললাম, দোস্ত, এই মাত্র তোরা দেশ স্বাধীন করলি। এর মধ্যে তোদের এত দলাদলি শুরু হয়ে গেল? বলল, চুপ থাক, ঠেলায় পড়লে সব বুঝবি।” [পৃ. ৭৮-৮০] নায়েব সুবাদার মাহবুব লিখেছেন, পরবর্তীকালে জিয়াই তার অধীনস্থ সৈন্যদের দ্বারা খালেদ মোশাররফকে হত্যা করান। এরপর একদিন তিনি গেছেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে। অনায়াসে তিনি তার সঙ্গে দেখা করতে পেরেছিলেন। অনেকক্ষণ আলোচনার পর বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “কর্নেল সাহেব [তখন হামিদ তো কর্নেল হননি] কী বলব আপনাদের আর্মির কথা। অফিসাররা শুধু আসে আর একে অন্যের বিরুদ্ধে কমপ্লেইন করে। অমুক এই করেছে, তমুক সেই করেছে। আমার প্রমোশন, আমার পোস্টিং। বলুন তো কী হবে এসব আর্মি দিয়ে? অফিসাররা এভাবে কামড়াকামড়ি করলে, ডিসিপ্লিন না রাখলে আমি এই আর্মি দিয়ে কী করব? আমি এদের ঠেলাঠেলি সামলাব, না দেশ চালাব” [পৃ. ৮৬] প্রথম সাক্ষাতেই এক অচেনা জুনিয়র অফিসারকে বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনী সম্পর্কে অভিযোগ করবেন এটা মেনে নিতে কষ্ট হয়। এরপর ১৯৭৫। ২৪ আগস্ট। হামিদ অফিসে গেছেন। জিয়া তাকে ডেকে পাঠালেন, হামিদ তার অফিসে ঢুকতেই “মিলিটারি কায়দায় ডাঁট মেরে গর্জে উঠল, ঝধষঁঃব ঢ়ৎড়ঢ়বৎষু ুড়ঁ এঁভভু, ণড়ঁ ধৎব বহঃবৎরহম ঈযরবভ ড়ভ ঝঃধভভং ঙভভরপব। আমি থমকে গেলাম। সে মুচকি হাসতে লাগল। তার হাতে একখানা টাইপ করা সাদা কাগজ। সে হেসে হেসে আমার চোখের সামনে সেটা নাড়তে লাগল। বলল, বস, তাড়াতাড়ি পড়। আমি তাড়াতাড়ি চোখ বুলিয়ে দেখলাম মিনিস্ট্রি অব ডিফেন্স থেকে ইস্যুকৃত অফিসিয়াল চিঠি। তাকে প্রধান সেনাপতি করে নিয়োগপত্র। আমি এগিয়ে গিয়ে তাকে আলিঙ্গন করে কনগ্রাচুলেশন জানালাম। চিঠিটা পেয়ে সে প্রথমেই আমাকে ডেকেছে। বলল, “হামিদ, বল এখন কী করা যায়?” জিজ্ঞাসা করলাম “শফিউল্লাহ চিঠি পেয়েছে? সে জানে?” “না, এখনও কেউ জানে না।” বললাম, “তাহলে তো তার কাছেও কপি পৌঁছতে হবে। তারপর অফিসিয়ালি সে হয়তো কয়দিন সময় নিয়ে তোমাকে ‘হ্যান্ড ওভার’ করবে। এখন একটু চুপ থাকো।” বলল, “শাটআপ, আমি কাল থেকেই টেকওভার করব।” আমি চমকে গেলাম। আমি তাকে বোঝালাম, “দেখো এটা তো তুমি ‘ক্যু’ করতে যাচ্ছ না। সরকারি অফিসিয়াল চিঠি রয়েছে। তোমাকে তো এ্যাপয়েন্টমেন্ট দেয়াই হয়ে গেছে।” সে বলল, “তুই এসব বুঝবি না। তারা বহুত চালাক। তুমি আগামীকাল পুরো ঢাকা স্টেশনের সব ইউনিটের অফিসার ও সৈনিকদের মাঠে একত্র হওয়ার নির্দেশ পাঠাও।” [পৃ. ১১২] যা হোক, জওয়ানদের সমাবেশের আয়োজন করা হলো। এরপর পুরো ঘটনাটি কর্নেল হামিদের ভাষায় উদ্ধৃত করছি। “পরদিন সকালে সারা ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে মহাউত্তেজনা। অফিসার্স জওয়ান সবাই সিগন্যাল মেসের গ্রাউন্ডে সমবেত হয়েছে। কেউ কিছুই জানে না, কী ব্যাপার! ঠিক সাড়ে সাতটার সময় ডেপুটি চিফ জিয়াউর রহমান মঞ্চে এসে হাজির। সবাই এ্যাটেনশন! জিয়া মঞ্চ থেকে চিৎকার দিয়ে গর্জন করে সবাইকে জানিয়ে দিল, ‘আজ থেকে আমি চিফ অব স্টাফ। আপনারা সবাই আপনাদের ডিসিপ্লিন ঠিক করেন, তা না হলে কঠোর শাস্তি হবে।’ বলেই মঞ্চ থেকে নেমে দ্রুত পদে আবার গাড়ি চড়ে প্রস্থান। মিটিং তিন মিনিটেই শেষ। সবাই হতবাক, একে অন্যের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগল। আমি মনে মনে হাসলাম। প্রস্থানের পথে আমার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার আঙুল দিয়ে গায়ে টোকা দিল। আস্তে করে বলল, ‘ভড়ষষড়ি সব’. তাড়াতাড়ি আমি গাড়ি নিয়ে তার পিছন পিছন ছুটে তার অফিসে গিয়ে ঢুকলাম। চেয়ারে বসে নবনিযুক্ত সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। মুখে তার তৃপ্তির হাসি। বিরল দৃশ্য। বলল, ‘কেমন হলো বল?’ আমি বললাম, ‘ঠিক তো হলো, কিন্তু তোমার প্রথম ভাষণটা এ রকম চড়া গলায় ধমকের সুরে না বললে কি হতো না?’ বলল, ‘শাটআপ। এটা তো কেবল শুরু। দেখ না আমি কিভাবে সব ব্যাটাকে ডিসিপ্লিন শিখিয়ে দেই।’ বললাম ‘দোস্ত, একটু ধীরে চল্।’ ‘শফিউল্লাহর ৎবধপঃরড়হ কী?’ তার জিজ্ঞাসা। বললাম, ‘এখনো কথা হয়নি। দেখি কী বলে।’ চা পর্ব শেষ করে যখন তার কাছ থেকে উঠলাম তখন দারুণ মুডে সে। ততক্ষণে দু-একটি টেলিফোনও আসতে শুরু করেছে। কনগ্রাচুলেশন স্যার! ওদিকে শফিউল্লাহ এ ব্যাপার সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অন্ধকারে। সে তখনও কোনো চিঠিই পায়নি। সে কিছুই জানে না। চলবে...
×