ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নারী নির্যাতন আইনে মামলা

ভার্সিটি ছাত্রীকে হয়রানি ও অনৈতিক প্রস্তাব, এক এসআই সাসপেন্ড

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ভার্সিটি ছাত্রীকে হয়রানি ও অনৈতিক প্রস্তাব, এক এসআই সাসপেন্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এবার রাজধানীর আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে হয়রানি ও অনৈতিক প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগে রাজধানীর আদাবর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রতন কুমার হাওলাদারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সোমবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে তাকে সাময়িক সাসপেন্ড করা হয় বলে তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার জানিয়েছেন। এদিকে এ ঘটনার পর ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে করা মামলাটির বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তেজগাঁও বিভাগের ডিসি বিপ্লব কুমার জানান, রবিবার রাতে ওই এসআইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েই প্রত্যাহারের আদেশ দেয়া হয়। এরপর সোমবার দুপুরে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি জানান, তদন্ত করা হচ্ছে। দোষ প্রমাণিত হলে স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। বিপ্লব কুমার জানান, কোন ব্যক্তির দায় পুরো বাহিনী নেবে না। অপরাধ করলে তার রেহাই নেই। পরবর্তী নির্দেশনা ও তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্ত এসআই কাজে যোগদান করতে পারবেন না। ঘটনা তদন্তে তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিদর্শক (এডিসি) আনিসুজ্জামানকে প্রধান করে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্য হচ্ছেন তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার (এসি) হাফিজ আল ফারুক। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান বিপ্লব কুমার। আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা ॥ রাজধানীর আদাবর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রতন কুমারের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে করা মামলাটির বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সোমবার বেলা একটার দিকে মোহাম্মদপুরের বেসরকারী আশা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন। এরপর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক সালেহ উদ্দিন আহমেদ ওই ছাত্রীর জবানবন্দী গ্রহণ করেন। বিরতি দিয়ে মামলাটির বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। মামলায় ৪ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। জবানবন্দীতে ওই ছাত্রী আদালতকে জানান, সোমবার বিকেল তিনটার দিকে মোহাম্মদপুরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লাস শেষে রিক্সায় করে ফেরার পথে শিয়া মসজিদের সামনে আদাবর থানার এসআই রতন কুমার রিক্সা থামিয়ে তাকে নামতে বলেন। এ সময় রতনের সঙ্গে দুই কনস্টেবল ছিলেন। এরপর শিয়া মসজিদের বিপরীতে একটি ইলেকট্রিকের দোকানে তাকে ঢুকতে বলেন ওই এসআই। ঢোকার পর এসআই রতন তার (ছাত্রী) কাছে ২০০ পিস ইয়াবা আছে বলে দাবি করেন। দোকান থেকে সবাইকে বের করে দিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা যাবত ওই দোকানে তার ব্যাগে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় তার জ্যাকেট খুলতে বলা হয় এবং নানা ধরনের কটূক্তি করেন। ওই ছাত্রী বলেন, আমি বারবারই বলছিলাম, আপনি আমাকে সার্চ করতে পারেন না। সার্চ করতে হলে আমাকে থানায় নিয়ে চলেন। তখন ওই এসআই উত্তেজিত হয়ে যায়। এভাবেই আমাকে শ্লীলতাহানি করে। আমি ন্যায়বিচার চাই। ওই ছাত্রীর আইনজীবী হাসানুজ্জামান হেলালী জানান, বিচারক তদন্ত শেষে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমকে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। অভিযোগের বিষয়ে এসআই রতন কুমার দাবি করেন, ওই ছাত্রীর স্বামী যুবদলের একজন নেতা। তিনি গত বছর একটি বিস্ফোরক মামলায় গ্রেফতার হয়েছিলেন। ওই মামলায় তিনি চার্জশীটভুক্ত আসামি। মামলার কাগজপত্রে তিনি যে ঠিকানা দিয়েছেন তা ভুল ছিল। এরপর রবিবার বিকেলে টহল ডিউটি পালনের সময় ওই ছাত্রীকে থামিয়ে তার স্বামীর কথা জানতে চান তিনি। এর চেয়ে বেশি কিছু না। স্বামী সাভারে আছে জানিয়ে সে চলে যায়। আমার বিরুদ্ধে হয়রানির যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। তবে ওই যুবদল নেতা বর্তমানে জামিনে আছেন। তার নামে কোন গ্রেফতারি পরোয়ানা নেই বলে স্বীকার করেন পুলিশ কর্মকর্তা রতন। গত মাসে মোহাম্মদপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী ও যাত্রাবাড়ীতে সিটি কর্পোরেশনের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাসকে নিপীড়নের অভিযোগের সুরাহা হওয়ার আগেই পুলিশের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ উঠল।
×