ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘ তিন বছর পর গতি পেল প্রস্তাবিত নীতিমালা

সীমাহীন নৈরাজ্য ঠেকাতে অবশেষে ওষুধনীতির খসড়ায় অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সীমাহীন নৈরাজ্য ঠেকাতে অবশেষে ওষুধনীতির খসড়ায় অনুমোদন

নিখিল মানখিন ॥ প্রায় তিনবছর ফাইলবন্দী থাকার পর অবশেষে প্রস্তাবিত নতুন ওষুধনীতির খসড়া অনুমোদন দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে এক সভায় প্রস্তাবিত ওষুধ নীতি ২০১৩-এর খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নতুন ওষুধনীতিতে বলা হয়েছে, চিকিৎসা ছাড়পত্র ছাড়াও যেসব ওষুধ (ওটিসি) খুচরা দোকানে বিক্রি করা হয় তার তালিকা তৈরি করে নিয়ম নির্ধারণ করা হবে। ডাক্তারী প্রেসক্রিপশন (চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র) দেখে ওষুধ বিক্রির বিভিন্ন শর্ত তুলে ধরা হবে। নিম্নমানের নকল ভেজাল চোরাচালানের ওষুধ ব্যবহার করে ক্ষতিগ্রস্ত ভোক্তাদের জন্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। সব বিভাগীয় শহরে ওষুধ পরীক্ষাগার স্থাপন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অনুমোদিত নতুন ওষুধনীতির খসড়টি ভেটিংয়ের (খসড়াটির আইনগত বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখতে) জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে ফেরত এলে তা পাসের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাঠানো হবে। সভায় অনুমোদিত হলে আইনটি পাসের জন্য সংসদে উত্থাপিত হবে। সংসদে পাস হলে কার্যকর হবে নতুন ওষুধনীতি। নতুন ওষুধনীতি প্রণয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত সাব-কমিটির অন্যতম সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ও ওষুধ বিশেষজ্ঞ আ ব ম ফারুক জানান, ওষুধ সেক্টরের সার্বিক উন্নয়নে এবারই প্রথমবারের মতো এ্যালোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথিক, ইউনানি, আয়ুর্বেদিকসহ সকল প্রকার ওষুধকে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন ওষুধনীতি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ ও শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি। গ্রহণযোগ্য নতুন ওষুধনীতি প্রণয়নের বিষয়টি ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনের ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি ছিল। ২০১১ সালে একটি গ্রহণযোগ্য ওষুধনীতি প্রণয়নের লক্ষ্যে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তৎকালীন মহাপরিচালককে প্রধান করে ১৪ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। কমিটিতে সাংসদ, ডাক্তার, ফার্মাসিউটিক্যালস্ কোম্পানির প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ফার্মাসিস্টরা ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, কমিটির সদস্যরা ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে খসড়া ওষুধনীতি প্রণয়ন করে মন্ত্রণালয়ে জমা দিলেও এতদিন সেটি ফাইলবন্দী হয়ে পড়েছিল। ২০১২ সালের নবেম্বরে নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছিল। নীতিমালার ওপর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে মতামত চেয়েছে। এরপর নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির এক সদস্যের আপত্তি ও আদালতে মামলা করার পর তা আর আলোর মুখ দেখেনি। নীতিমালা যুগোপযোগী না করায় ও ওষুধ বিক্রির গেজেট প্রকাশ না করায় এখন বাজারে নকল ও ভেজাল ওষুধের ছড়াছড়ি। ক্রেতারা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হচ্ছেন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য। প্রস্তাবিত নীতিমালায় বলা হয়েছে, সব স্বীকৃত পদ্ধতির ওষুধের সর্বোত্তম তাত্ত্বিক পরিচয়কে চিকিৎসক ও ফার্মাসিস্ট উভয়ের কাছে সহজ করে তোলা হবে। এ লক্ষ্যে ওষুধের বাণিজ্যিক নামের পাশাপাশি স্পষ্টভাবে জেনেরিক নামে উৎপাদন ও বিপণন করতে হবে।
×