ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সন্দেহজনক ঘোরাফেরা

খালেদার বাসার সামনে পাকি হাইকমিশনের কর্মচারী আটক

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

খালেদার বাসার সামনে পাকি হাইকমিশনের কর্মচারী আটক

শংকর কুমার দে ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবন ‘ফিরোজা’র সামনে সন্দেহজনক ঘোরাঘুরির অভিযোগে সোমবার দুপুরে ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রেস সচিবের পিএস আবরার আহমেদ খানকে আটক করেছে পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশ তাকে তাৎক্ষণিক জিজ্ঞাসাবাদ করে। এরপর তাকে গুলশান থানায় নেয়া হলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনে কাজ করেন। এরপর তাকে পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আটক ওই ব্যক্তি বাংলাদেশী নম্বরপ্লেট ব্যবহার করে একটি মোটরবাইক চালান। তার কোন লাইসেন্স নেই। জানা যায়, আবরার আহমেদকে গত প্রায় দেড় থেকে দুই মাস ধরে বিএনপির গুলশান কার্যালয়ের সামনে কিছু নির্দিষ্ট সময় ধরে নিয়মিত দেখা যেত। তিনি প্রায় তিন/চার ঘণ্টা সেখানে অবস্থান করতেন। যেন তিনি সেখানে কোন বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত। নিয়মিত এই গতিবিধি লক্ষ্য করার পর গোয়েন্দাদের নজরে আসে বিষয়টি। এরপর গোয়েন্দারা তাকে নজরদারির আওতায় আনে। তার যে মোটরবাইকটি ছিল, সেটিতে পাকিস্তান হাইকমিশন যে ধরনের নম্বরপ্লেট ব্যবহার করে তা ছিল না। তিনি বাংলাদেশী একজনের মতো করে থাকতেন, ঘুরতেন। একটি বেসরকারী টিভি চ্যানেল সূত্রে আরও জানা যায়, পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদকালে পাকিস্তানী হাইকমিশনের লোকজন থানায় এসে উপস্থিত হন। জানা যায়, ওইদিন পাকিস্তান হাইকমিশনের সেকেন্ড অফিসার জামিল আখতার খান থানা এলাকা থেকে নিজ গাড়িতে করে ওই স্থান ত্যাগ করেন। তখন তার জিম্মাতেই মূলত আটক আবরার আহমেদকে ছেড়ে দেয়া হয়। হাইকমিশন ওই কর্মকর্তা তাকে থানা থেকে নিয়ে যান বলে জানা গেছে। কোন রকম মুচলেকা ছাড়াই তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। বিষয়টি রহস্যজনক বলে মনে হয়েছে। আবরার আহমেদের কাছ থেকে একটি ব্লু পাসপোর্ট এবং তার মোটরবাইকের মধ্যে সাড়ে তিন হাজার ভারতীয় রুপী পাওয়া গেছে। অথচ হাইকমিশনের কর্মী হিসেবে তার কাছে লাল পাসপোর্ট থাকার কথা। ‘এমএম ক্ষমতা’ দেয়া ছিল বলেই পুলিশ তাকে আটকে রাখতে পারেনি বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে পুলিশ একেবারেই মুখ খোলেনি। গোয়েন্দা সূত্র মতে, গোয়েন্দা নজরদারির মধ্যে থাকা বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ফিরোজার সামনে থেকে আবরার আহমেদ খান নামে পাকি হাইকমিশন কর্মকর্তাকে আটক করেছে পুলিশ। তার গতিবিধি ছিল সন্দেহজনক। সোমবার দুপুরের দিকে সন্দেহজনক গতিবিধির কারণে গুলশান থানা পুলিশ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আটক ব্যক্তি ঢাকার পাকিস্তানী হাইকমিশনের তথ্য সচিবের ব্যক্তিগত সহকারী বলে জানা গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলেছে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা। ডিএমপির উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা পাকি হাইকমিশনের কোন কর্মকর্তা আটকের বিষয়টি স্বীকার বা অস্বীকার কোনটাই করছেন না। এর আগেও ঢাকায় পাকিস্তান হাইকমিশনের ভিসা কর্মকর্তা মাযহার খান ও ‘সেকেন্ড সেক্রেটারি’ (রাজনৈতিক) পদমর্যাদার ফারিনা আরশাদকে জঙ্গী তৎপরতায় মদদদান, জাল নোট পাচারসহ কূটনীতিবিরোধী কর্মকা-ে জড়িত থাকায় বহিষ্কার করা হয়েছে। পুলিশের হাতে আটক জেএমবি নেতা ইদ্রিস শেখ ম্যাজিস্ট্রেটকে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বাংলাদেশে জঙ্গী তৎপরতায় হাইকমিশনের ওই মহিলা কূটনীতিকের সাথে তার যোগসাজশের কথা জানিয়েছে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, ভারতে জাল নোট পাচার ও জঙ্গীদের অর্থ যোগানোর কাজ করার কথাও জানানো হয়। ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি পাকিস্তান হাইকমিশনের সহকারী ভিসা অফিসার মাযহার খানকে বনানীর একটি বিপণিকেন্দ্রে জনৈক ‘বাংলাদেশী’ মুজিবর রহমানের সঙ্গে গোপন বৈঠকের সময় ভারতীয় জাল টাকাসহ পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টার ভেতর পাকিস্তান হাইকমিশনের প্রথম সচিব ‘কূটনৈতিক দায়মুক্তি’র অজুহাত দেখিয়ে তাকে বনানী থানা থেকে নিয়ে যান। এরপর ৩১ জানুয়ারি এই ব্যক্তি সপরিবারে পিআইএ’র একটি ফ্লাইটে পাস্তিানে ফিরে গেছেন। জঙ্গীদের অর্থদাতা, তৎপরতা, জাল রুপী তৈরি ও বাংলাদেশে নাশকতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত পাকি হাইকমিশনের দুই কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে দেশী ও আন্তর্জাতিক যেসব জঙ্গী সংগঠনকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে তার মধ্যে আছেÑ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং জামায়াত-শিবিরের নাম। এসব তৎপরতার সঙ্গে গত বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে হঠাৎ করেই স্বাধীনতা যুদ্ধের মীমাংসিত ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া যে বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দেন তার সঙ্গে যোগসাজশ থাকার বিষয়টি খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দারা। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা অনুমোদন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারপর থেকে একের পর এক বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা গয়েশ্বর রায়, নজরুল ইসলাম, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, রিজভীসহ বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা শহীদের সংখ্যা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মীমাংসিত বিষয় বিতর্কিত করে তোলার পেছনে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই এবং পাকিস্তানী হাইকমিশনের কারও কারও যোগসাজশ, মদদে তৎপরতা চালানো হতে পারে বলে মনে করছে ঢাকার গোয়েন্দারা। ঢাকার এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজ, আবদুল আলীমকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে রাজাকার, আলবদরদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবেই এখন তার সহধর্মিনী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া শহীদের সংখ্যা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার বিষয়ে বিতর্কের অবতারণা করে চলেছেন। এর আগে প্রথমে জিয়া-খালেদা দম্পতির পুত্র বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসে স্বাধীনতা ও স্বাধীনতার জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের নামে মিথ্যা, বানোয়াট, কল্পিত কুৎসা রটিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতা রক্ষা করে এখন যুদ্ধাপরাধীদের খুশি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তারা শহীদদের সংখ্যা, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা নিয়ে কোন প্রশ্ন তুললেন না কেন ?
×