ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শেরপুর সীমান্তে র‌্যাবের অভিযান;###;পাওয়া গেছে ২ হাজার বিমান বিধ্বংসী গোলাবারুদ, ৪৩ হাজার গুলি, ভারি মেশিনগান, একে-৪৭ রাইফেল ইত্যাদি

গহিন অরণ্যে মাটি খুঁড়ে বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

 গহিন অরণ্যে মাটি খুঁড়ে বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার

রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর, ১ ফেব্রুয়ারি ॥ এবার শেরপুর সীমান্তে ২ হাজার বিমান বিধ্বংসী গোলা-বারুদসহ ৪৩ হাজার গুলি, ভারি মেশিনগান ও একে-৪৭ সহ কিছু আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। ১ ফেব্রুয়ারি সোমবার সকাল ৮টা থেকে র‌্যাব হেডকোয়ার্টার ও র‌্যাব-৫ এর একটি বিশেষ দল গারো পাহাড়ের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্তী বুরুঙ্গা কালাপানি এলাকায় অভিযান চালিয়ে গহিন অরণ্যের মাটির নিচ থেকে ওই গুলি উদ্ধার করে। এর মধ্যে রয়েছে বিমান বিধ্বংসী কামানের গোলা (এন্টি এয়ারক্রাফট এমুনিশন) ২ হাজার, ২২ হাজার মেশিনগানের গুলি, ১৭ হাজার এলএমজির গুলি ও ম্যাগজিন ৩৭টি, ওয়াকিটকি ৬টি, বন্দুক পরিষ্কারের যন্ত্র ৮টি, ওয়ারলেস চার্জার ২টিসহ বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম। উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে রয়েছে একটি একে-৪৭, ২টি ভারি মেশিনগান, বিমান বিধ্বংসী মেশিনগান, ২টি পিস্তল ও ২টি এসএলআর। সব অস্ত্রই প্যাকেট ভর্তি অবস্থায় মাটির নিচে ছিল। এছাড়া ইমিটর কম্পাস, এএমজির বেল্টবক্স, এইচএমজির বেল্টবক্স, ড্রামসহ মজুদের অন্যান্য সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত ওইসব অস্ত্রগুলো সাধারণত সামরিক বাহিনীরা ব্যবহার করে থাকে। তবে এসব গুলি কারা সেখানে রেখেছে সে বিষয়ে কোন তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি। বিকেলে র‌্যাবের মিডিয়া উইং ও লিগ্যাল এইডস’র কমান্ডার মুক্তি মাহমুদ সংবাদ সম্মেলনে জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজশাহী র‌্যাব-৫ এর কোম্পানী কমান্ডার মোবাশ্বের হোসেন খান ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে মধুটিলা ইকোপার্কের পাশে ও ভারতের মেঘালয় সীমানা সংলগ্ন ওই এলাকায় অভিযান চালায়। র‌্যাবের চৌকস দল বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সীমান্তের গহিন অরণ্যের ওইসব স্থানগুলো নির্ধারণ করে। ওই সময় র‌্যাব-১৪-এর পাশাপাশি পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা অংশ নেয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি আরও জানান, কে বা কারা কতদিন যাবত ওইসব গোলাবারুদ মজুদ করেছিল তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা বলা যাবে। আশঙ্কা কর হচ্ছে, এ এলাকায় আরও অস্ত্র ও গোলাবারুদ মজুদ থাকতে পারে। এজন্য ওই অভিযান শেষ হয়নি। আরও অভিযান চলবে। এছাড়া উদ্ধার কাজ শেষ হলে মামলা দায়ের করা হবে। র‌্যাব সূত্র জানায়, নালিতাবাড়ী সীমান্তের চেংবেড় নামক পাহাড়ী টিলার ৪টি গর্তের মাঝে ৩টি ড্রামে ভর্তি ওইসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ছিল। বর্তমানে ওই পাহাড়ী এলাকাটি র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি ঘিরে রেখেছে। ওই ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। এ ব্যাপারে শেরপুরের পুলিশ সুপার মোঃ মেহেদুল করিম জানান, নালিতাবাড়ী সীমান্ত থেকে র‌্যাবের অভিযানে বিপুল পরিমাণ গুলিসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি উদ্ধার কাজে পুলিশের সহায়তা ছিল। তবে ওই ঘটনায় এখনও কোন মামলা দায়ের হয়নি। মামলা হলে তদন্তে দেখা যাবে ওইসব গোলাবারুদ ও অস্ত্র কে বা কারা কি উদ্দেশ্যে রেখেছিল। এবারের উদ্ধারই রেকর্ড ॥ ইতোপূর্বে শেরপুর সীমান্ত থেকে দফায় দফায় ভারি গুলি, রকেটলঞ্চার, গ্রেনেড মাইনসহ অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা ঘটলেও সকল উদ্ধারের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এবারের উদ্ধার। ২০০১-২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মেয়াদে শেরপুর সীমান্তের ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড় অঞ্চল ছিল ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ‘সংযুক্ত মুক্তি বাহিনী অসম’ বা ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফার) অবাধ বিচরণস্থল। উলফা নেতা রঞ্জুর বিচরণ ছিল সীমান্তের গ-ি পেরিয়ে প্রশাসনের গদি পর্যন্ত। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পিছু হটে উলফা। এরপর থেকেই ঝিনাইগাতী সীমান্তের বাঁকাকুড়া, গজনীসহ কিছু এলাকা থেকে দফায় দফায় উদ্ধার হতে থাকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ। ওইসব উদ্ধারের মধ্যে ২০১০ সালে সীমান্তবর্তী বাঁকাকুড়া গুচ্ছগ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয় ১৩ হাজার রাইফেলের গুলি। এটিই ছিল ওই সময়ের বড় উদ্ধার। আর ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে ঝিনাইগাতীতে ভারত সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে অন্তত ৫০ হাজার গুলি, রকেট, মাইন ও বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র উদ্ধার হয়। ২০১২ সালে নালিতাবাড়ীর এক গ্রাম থেকে উদ্ধার করা হয় একে-৪৭ রাইফেল ও গুলি। মাইন উদ্ধারের পর ২০১০ সালে বিজিবির পক্ষ থেকে ধারণা করা হয়েছিল, সেগুলো অসমে উলফার ফেলে যাওয়া গোলাবারুদ।
×