ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সুচির নেতৃত্বে পার্লামেন্টে যোগ দেন এনএলডির সদস্যরা

অর্ধ শতাব্দী পর গণতন্ত্রের যুগে মিয়ানমার

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

অর্ধ শতাব্দী পর গণতন্ত্রের যুগে মিয়ানমার

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রায় অর্ধশতাব্দী পর এক নতুন রাজনৈতিক যুগে প্রবেশ করল মিয়ানমার। সোমবার প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগ দেন নোবেলজয়ী নেত্রী আউং সান সুচির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্র্যাসি বা এনএলডির নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যরা। তবে দেশটির পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। খবর বিবিসি, এএফপি ও নিউ লাইট অব মিয়ানমারের। দশকের পর দশক সামরিক শাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট মিয়ানমারের শান্তিকামী মানুষ সুচির নেতৃত্বে যে নতুন মিয়ানমারের স্বপ্ন বুনছিল সোমবার পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে তা একধাপ এগোল। এনএলডির নির্বাচিত কয়েক শ’ এমপি সোমবার পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগ দিতে রাজধানী নেপিদোতে জড়ো হন। তাদের শরীরে ছিল হালকা কমলা রঙের বিশেষ ধরনের পোশাক। গত বছরের নবেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিপুল বিজয় অর্জন করে এনএলডি। ওই নির্বাচনের পর সোমবারই প্রথম পার্লামেন্ট অধিবেশনে বসলেন নির্বাচিতরা। অন্য সকলের মতো অধিবেশনে যোগ দেন মিয়ানমার গণতন্ত্রের মধ্যমণি ৭০ বছর বয়সী আউং সান সুচি। তবে পার্লামেন্ট অধিবেশনে যোগ দেয়ার আগে তিনি কোন কথা বলেননি। শপথ অনুষ্ঠান দেখতে নির্ধারিত আসনে বসেন সুচি। এ সময় নিম্নকক্ষের স্পীকার ওয়ে মিন্ত সংসদ সদস্যদের শপথ পড়ান। শপথের পর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, আজ মিয়ানমারের রাজনীতিতে একটি ঐতিহাসিক দিন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ মিয়ানমার গণতন্ত্রের নতুন যুগে প্রবেশ করল। এনএলডির পর নবেম্বরে নির্বাচিত অন্যান্য দলের সদস্যরা শপথ পড়েন। এই অধিবেশনে স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত করা হবে। পার্লামেন্ট ভবনে উপস্থিত হয়ে এনএলডির এমপি নেইন থিত বলেন, মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও শান্তির জন্য আমরা কাজ করব। কিন মং মিন্ত নামে এনএলডির অপর এক পার্লামেন্ট সদস্য বলেন, আমি স্বপ্নেও ভাবিনি এভাবে পার্লামেন্টে বসতে পারব। আবার জনগণও এটা ভাবতে পারেনি। আমরা এখন উন্নত মিয়ানমারের জন্য কাজ করব। সেনা সমর্থিত মিয়ানমারের বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের মেয়াদ মার্চ মাসে শেষ হবে। ওই মাস থেকেই আনুষ্ঠানিকভাব এনএলডি নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করবে। এর আগে ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন প্রক্রিয়া শেষ হতে পারে বলে খবরে বলা হয়েছে। নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য সংসদের উভয় কক্ষ থেকে একজন করে প্রার্থী এবং সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে একজন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হবে। এর পর ভোটের মাধ্যমে মনোনীত তিন প্রার্থীর মধ্যে একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন এবং বাকি দু’জন ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করবেন। মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী সুচির হাত ধরেই দেশটিতে গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। যদিও নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এই নেত্রীর প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে সাংবিধানিক বাধা রয়েছে। সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে এখনও সুচির নাম প্রস্তাব করা হয়নি। জান্তা সরকার প্রবর্তিত সংবিধান অনুযায়ী, স্বামী কিংবা সন্তান বিদেশী নাগরিক এমন কোন ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সুচির প্রয়াত স্বামী ও একমাত্র ছেলে ব্রিটিশ নাগরিক। সোমবার পার্লামেন্ট ভবনে প্রবেশ এবং বের হওয়ার সময় প্রেসিডেন্ট পদ নিয়ে কোন কথা বলেননি সুচি। যদিও ভোটে জয়লাভের পর তিনি স্পষ্ট করেছিলেন যে, সরকার পুরোপুরি তার নিয়ন্ত্রণেই থাকবে। নির্বাচিত এনএলডির পার্লামেন্ট সদস্যরা দেশটিকে কতটুকু এগিয়ে নিতে পারবেন এ বিষয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। কেউ বলছেন এনএলডির অধিকাংশ আইন প্রণেতা পার্লামেন্টে একেবারেই নতুন ও অনভিজ্ঞ। আবার পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসন এখনও সেনাবাহিনীর হাতে রয়েছে। তারা আরও বলেছেন, দীর্ঘদিনের জান্তা সরকারের শাসনে ভঙ্গুর অর্থনীতি মোকাবেলা করতে হবে এই নতুন ও অনভিজ্ঞ সরকারকে। এটি তাদের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হবে।
×