ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব জলাভূমি দিবস আজ

নগরায়নে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে জলাশয়

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

নগরায়নে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে জলাশয়

সমুদ্র হক ॥ দেশজুড়ে ধাবমান নগরায়ন প্রক্রিয়ায় দ্রুত নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে জলাভূমি। বিরূপ প্রভাব পড়েছে প্রকৃতি ও পরিবেশের ওপর। ছোট নদীগুলো পরিণত হচ্ছে খাল, ডোবা-নালায়। অনেক ছোট নদী ও বিল অস্তিত্ব হারিয়ে মানুষের মুখে মুখে শুধু নাম নিয়েই বেঁচে আছে। একের পর এক চর আর বালিয়াড়ি হয়ে যাওয়ায় বড় নদীগুলোর ‘প্রমত্তা’ অধ্যায়টিকে আজ আর খুঁজে পাওয়া যায় না। বিপন্ন হয়ে পড়া জলের আধারে সঙ্কুচিত হচ্ছে মাছের বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র। সরাসরি হুমকির মুখে পড়েছে জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী এবং জীববৈচিত্র্য। এমনই এক অবস্থার মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশে আজ (মঙ্গলবার) পালিত হচ্ছে বিশ্ব জলাভূমি দিবস। এবারের থিম (বা প্রতিপাদ্য) হলো ‘বিশ্ব জলাভূমি হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যত : টেকসই জীবনযাপন’। একদিকে প্রকৃতির বিরূপতা এবং আরেকদিকে মানুষের সৃষ্ট দুর্যোগে জলাভূমি এতটাই বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে যে, হিমালয় থেকে নেমে আসা নদ-নদীগুলোর মধ্যে উত্তরাঞ্চলে অন্তত ৬০টি নদীর চিহ্নই খুঁজে পাওয়া যায় না। আঞ্চলিক ও গ্রামীণ সড়কের মধ্যে পার হয়ে যাওয়া একদার নদী বর্তমানের শুকনা ভূমির ওপর নির্মিত কনস্ট্রাকশন ব্রিজ ও বেইলি ব্রিজের এক কোনায় এঁটে দেয়া নদীর নাম দেখে ধরে নেয়া হয় সেখানে একদা নদী ছিল। বগুড়ার শিবগঞ্জের এমন এক শুকনা নাগর নদীর ভূমির ওপর মেলা ও হাট বসে। লোকজন গানের সুরে বলাবলি করে ‘এ নদী এমন নদী জল চায় একটু খানি...’। বগুড়া শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বিপন্ন করতোয়া নদীর ভূমি দখল ও ভরাট করে তার ওপর নির্মিত হচ্ছে অবকাঠামো। প্রকৃতির নিসর্গ নদী হত্যা করে তার ওপর গড়ে তোলা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন বহুতল শপিংমল। দেশজুড়ে এমন বহু নদী খুঁজে পাওয়া যাবে যা বিলীন হয়ে শুধু ভূমি। দেশের সবচেয়ে বড় চলনবিলের দিকে তাকালেই প্রশ্ন জাগে- এই কি সেই চলনবিল! ব্রিটিশরা যা দেখে বলত এটা নদী না বিল! বিশাল জলরাশির সেই বিল বা জলাভূমির জল শুকিয়ে কঙ্কালসার হয়ে গেছে। বনপাড়ায় চলনিবলের ওপর দিয়ে যে মহাসড়ক পাবনার দিকে গেছে তা দেখেই বলা যায়, হারিয়েই বুঝি গেল চলনবিল। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়- উনিশ শতকের (১৮শ’ সাল) শুরুর দিকে চলনবিলের আয়তন ছিল এক হাজার ৮৫ বর্গকিলোমিটার। ১৯শ’ ৯ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৩শ’ ৬৮ বর্গকিলোমিটার। চলতি বছর ২ হাজার ১৬ সালে মাত্র ৮৫ বর্গকিলোমিটারে কমবেশি পানি নিয়ে টিকে আছে এই বিল। বিলপারের বিলদহর ও চামারী ইউনিয়ন পর্যায়ে যে হারে নগরায়নের প্রভাব পাকা সড়ক ও হাটবাজার বসেছে সেখানে গিয়ে কল্পনাই করা যায় না এই নৌপথ ছিল দুর্গম বন্ধুর পথ।
×