ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানিতে কৃত্রিম সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানিতে কৃত্রিম সঙ্কট

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ ঈশ্বরদীর রংপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রয়োজনীয় বোন্ডার পাথর আমদানি নিয়ে কৃত্রিম জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এই জটিলতা একেবারে মূল উৎপাদন কেন্দ্র ভারতের বিহার রাজ্যের পাকুড় ও সোনামসজিদ স্থল বন্দরের বিপরীতে অবস্থিত ভারতের মালদহস্ত মহদিপুর স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের। ফলে এ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ হতে পাথর আমদানিতে ধস নেমেছে। এখানকর একাধিক আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান জানান ভারতীয় রপ্তানিকারকরা বড় ধরনের লাভের আশায় এই মুহূর্তে জিম্মি করতে চান বাংলাদেশের পাথর আমাদানিকারকদের। তাই তারা খেয়াল খুশিমতো দফায় দফায় মূল্যবৃদ্ধিসহ মহদিপুর স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে হাত মিলিয়ে বাংলাদেশে পাথরের ট্রাক প্রবেশে অযথা দেরি ও বিড়ম্বনা সৃষ্টি করেছে। পদ্মার মূল সেতু এবং নদী শাসনের কাজে ভারত থেকে সিংহভাগ বোল্ডার পাথর চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থল বন্দর দিয়ে আমদানি করা হচ্ছে। এতদিন শুধুমাত্র পদ্মা সেতুর চাহিদা মোতাবেক পাথর আনা হচ্ছিল। নতুন করে ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে প্রয়োজনীয় চাহিদামাফিক পাথর ভারতের এই স্থান পাকুড়ে অর্ডার যাওযায় ও আনা শুরু হলে ভারতের পাথর রপ্তানিকারকরা নতুন করে প্যাচ কষতে শুরু করে। তারা বুঝে নিয়েছে বাংলাদেশের বৃহত দুটি উন্নয়ন প্রকল্পের পাথর তাদের এখান থেকে নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। উল্লেখ্য, প্রতিদিন ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের উন্নয়ন কাজে যে পাথরের প্রয়োজন পড়ে বাংলাদেশের দুটি উন্নয়ন প্রকল্পের তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি পাথর প্রয়োজন হচ্ছে। তাই পাকুড়ে পাথর উত্তোলনের পরিমাণও বেড়ে গেছে। আর এই সুযোগকে গ্রহণ করে ভারতীয় পাথর রপ্তানিকারকরা চাচ্ছে বিশাল পরিমাণ লভ্যাংশ করার। তাই তারা দফায় দফায় পাথরের মূল্য বৃদ্ধি করে চেলেছে। সর্বশেষ কোন কারণ ছাড়াই বাংলাদেশ প্রবেশের মুখে ভারতীয় স্থল বন্দর মহদিপুরে একাধিক পাথর ভর্তি ট্রাককে আটকিয়ে রেখে দিচ্ছে তাদের বন্দরে। উদ্দেশ্য একটাই দীর্ঘ জানজট সৃষ্টি ও ডাম্পিংয়ের মাধ্যমে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে ড্যামারেজ ফি বাড়ানো। অবৈধ সিন্ডিকেট সৃষ্টি করে এসব পাথরের ট্রাককে ৬/৭ দিন করে বন্দরে (মহদিপুর) আটকিয়ে রাখছে। অথচও আগে পাকুড় থেকে সরাসরি মহদীপুর হয়ে সোনামসজিদ স্থল বন্দরে পাথরের ট্রাক প্রবেশ করেছে। এসব পাথর যেহেতু উন্নয়ন প্রকল্প কাজের সেহেতু ট্রাক সোনামসজিদ বন্দরে প্রবেশ করা মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দ্রুত আনলোড করে গন্তব্যে পাঠিয়ে দেয়া হতো। ৭০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পাথর বোঝাই ট্রাক মহদিপুর বন্দরে পৌঁছলেও হীনউদ্দেশ্যে সে সব ট্রাক সোনামসজিদ বন্দরে প্রবেশ করতে না দিয়ে ফেলে রেখেছে তাদের বন্দরে। উদ্দেশ্য একটাই ভারতীয় পাথর রপ্তানিকারকদের মূল্যবৃদ্ধি করা। এখানকার আমদানিকারক বিপ্লব কুমার সরকার জানান ভারতীয় রপ্তানিকারকরা সরাসরি বলেছে মূল্য বৃদ্ধি করলে তাদের ট্রাক মহদিপুরে পড়ে থাকবে না। এখানেই শেষ নয় অধিক চাহিদাকে সামনে রেখে বাধ্য করা হচ্ছে নিম্নমানের পাথর গ্রহণ কারতে। এখানকার অপর একজন আমদানিকারক ননী গোপাল ঘোষ জানান বোল্ডার পাথরের সাথে সাথে ছোট পাথর ও মাটি মিশিয়ে পাঠাচ্ছে। এতে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। তিনি আরও জানান, এই অবস্থায় ব্যবসায়ীরা যদি চাহিদা মাফিক পাথর সরবরাহ করতে না পারে তবে উন্নয়ন কাজ বাধাগ্রস্ত ও পিছিয়ে পড়তে পারে। অথচও পাথর সরবরাহে ব্যবসায়ীদের কার্যদেশের যে মূল্যদর আছে সে অনুযায়ী সময়মত তা সরবরাহে তারা বাধ্য। কিন্তু বাধাগ্রস্ত করছে একেবারে প্রবেশমুখে তাদের স্থলবন্দর মহদিপুরে। প্রতিদিন কয়েকশ পাথরের ট্রাক সোনামসজিদে প্রবেশ করতে না দিয়ে অযথা হয়রানি করছে। জনৈক আমদানিকারক জানান, সরকারের কাছে জোরদাবি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা হোক। তানা হলে পদ্মা সেতুর পাথর সময়মতো সরবরাহ করা না গেলে যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হবে তা খুবই ভয়াবহ। তাই ভারত থেকে পদ্মা সেতুর জন্য যেসব পাথরের গাড়ি আসবে সেগুলো মহদিপুরে পার্কিং কিংবা আনলোড না করে সরাসরি বাংলাদেশে প্রবেশ করলে ২০১৮ সালের মধ্যে সরকারের চ্যালেঞ্জিং প্রকল্প পদ্মা সেতু তৈরি করা সহজ ও সম্ভব হবে। তানা হলে এ ধরনের কৃত্রিমভাবে বাধাগ্রস্ত হলে সেতু নির্মাণের ব্যয় বেড়ে যাবে আবার কয়েকগুণ। এ ব্যাপারে মহদিপুর স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার সুকুমার ঘোষ জনকণ্ঠকে জানান, পাকুড় থেকে আসা ট্রাকে বাংলাদেশে প্রবেশের মুখে তাদের (ভারতীয়) বন্দর মহদিপুরে বর্তমানে যে সমস্যা হচেছ তা নানান কারণে আইনের আওতায় করা। তবে এই ব্যবস্থা খুবই অস্থায়ী। শীঘ্রই এই অবস্থার অবসান হবে। বর্তমান অসুবিধাকে দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে না। সুসম্পর্ক আরো বৃদ্ধির পথ খোঁজা হচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশের পাথর আমদানিকারকরা ইতোমধ্যেই ভারতীয় রপ্তানিকারকদের দফায় দফায় মূল্য বৃদ্ধিসহ বাংলাদেশে প্রবেশে যে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে তার বিস্তারিত লিপিবদ্ধ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ সহযোগী সংগঠনগুলোর সহযোগিতাসহ আশু সমাধান চেয়েছেন।
×