ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ করাতকলে সয়লাব

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

অবৈধ করাতকলে সয়লাব

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ হঠাৎ করে জেলায় করাতকল স্থাপনের হিড়িক পড়েছে। জেলা-উপজেলাসহ বিভিন্ন হাটবাজার এলাকায় এসব করাতকল স্থাপন করা হচ্ছে। এমনকি বরেন্দ্র অঞ্চলের উপজেলা হেড কোয়ার্টার ও সংলগ্ন এলাকায় এসব করাতমিল স্থাপন করা হচ্ছে। জানা গেছে, জেলার বাইরের বনাঞ্চল এলাকার একটি সংঘবন্ধ সিন্ডিকেট যারা অবৈধভাবে বনের নানা জাতের মানসম্পন্ন গাছ কেটে উজাড় করে থাকে তারাই নানানভাবে প্রলোভন ও অর্থ বিনিয়োগ করে এসব করাতকল স্থাপন করছে। এছাড়াও শহর এলাকায় আগে থেকেই যেসব করাতমিল রয়েছে তাদের অর্থ যোগান দিয়ে মিলের শক্তি বৃদ্ধি করছে। উদ্দেশ্য, একটাই আইন ও প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে চোরাই কাঠ অপ্রসিদ্ধ এলাকায় নিয়ে এসে সাইজ করে ফাঁড়িয়ে বাজারজাত করা। এই অপ্রসিদ্ধ এলাকা হিসেবে বেছে নিয়েছে সীমান্ত এলাকা চাঁপাইনবাবগঞ্জকে। কারণ এখানে কাঠ কাটা বা চেরাই মিলের প্রতি প্রশাসনের তেমন একটা নজর নেই। এখানে বনাঞ্চল না থাকলেও উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের বনভূমি এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল রয়েছে। তাই কাঠ চোরাই সিন্ডিকেট চাঁপাইনবাবগঞ্জকে বেছে নিয়ে এসে দেদারসে কাঠ চেরাই সাইজ করে বাজারজাত করছে। তাছাড়া এখানে বন বিভাগের অফিস থাকলেও তেমন নজরদারি না থাকায় নতুন মিল করতে হলে লাইসেন্সের প্রয়োজন পড়ে না। আবার দ্রুত বিদ্যুত সংযোগ মেলে বাড়তি পয়সা খরচা করলে। ফলে বাঁচছে করাতকল লাইসেন্স ফি বাবদ দুই হাজার টাকা। লাইসেন্স না থাকায় বছরের পর বছর নবায়ন করার তাগিদ থাকছে না। নবায়ন করলে পাঁচশত টাকা লাগত প্রতিবছর। সোশ্যাল ফরেস্টি জোনের কোন অফিস নেই চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে। ফলে ঢাকা সংলগ্ন নারায়ণগঞ্জ জয়দেবপুর বনাঞ্চলের দামীদামী বনজ ও ফলজ কাঠ এখানে আসছে চট্টগ্রাম ও খুলনা জোন থেকে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে বনাঞ্চল না থাকলে সংলগ্ন জেলা নওগাঁ ও রাজশাহী অঞ্চলে বনাঞ্চল রয়েছে। গত ২৫ বছরে এই অঞ্চলে বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বন সৃষ্টির লক্ষ্যে যে কয়েক লাখ কড়াই, শাল, মেহগনিসহ নানা জাতের দামী বনজ গাছ লাগানো হয়েছিল তার সিংহভাগ অবৈধভাবে কাটা হয়েছে ও হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের বনসম্পদ সাবাড়কারী চক্র বা সিন্ডিকেট প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে এই অঞ্চলে পকেট থেকে অর্থ দিয়ে মিল তৈরি করা চোরাই কাঠ নিয়ে আসছে। নিজস্ব সংবাদদাতা, ভালুকা ময়মনসিংহ থেকে জানান, উপজেলার কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের আশপাশে ১২টি অবৈধ করাতকলসহ অন্যান্য এলাকায় শতাধিক অবৈধ করাতকলে আকাশমনি ও গজারীসহ বন বিভাগের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রাতের আঁধারে কেটে নিয়ে অসাধূ করাতকল মালিক ও কাঠ ব্যবসায়ীরা দিনদুপুরে চেরাই করে নির্বিঘেœ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে জাতীয় উদ্যানসহ এক সময়ের বন এলাকা হিসেবে খ্যাত ভালুকা বর্তমানে বন শূন্য হয়ে পড়েছে। জানা যায়, বৃক্ষ সম্পদ সংরক্ষণ ও পর্যটন সুবিধাদী উন্নয়নের জন্য ভালুকা রেঞ্জের কাদিগড় বিটে, কাদিগড় ও পালগাঁও মৌজার সাড়ে আটশ’ একর ভূমির সংরক্ষিত বনাঞ্চলকে কাদিগড় জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ইতোমধ্যেই কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের পার্শ্ববর্তী কাচিনা, বাটাজোর, পালগাঁও, তামাট ও ঢাকুরিয়া গ্রামে বন বিভাগের নীতিমালাকে উপেক্ষা করে স্থাপন করা হয়েছে ১২টি করাতকল। আর এসব করাতকল দিয়ে প্রকাশ্যে সংঘবদ্ধ কাঠ পাচারকারী দল কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের শালবনের বড় বড় গাছ চুরি করে কেটে নিয়ে চেরাই করে আশপাশ এলাকায় অবস্থিত ফার্নিচারের দোকানসহ বিভিন্ন এলাকায় পাচার করছে। ফলে হুমকির মুখে পড়েছে সংরক্ষিত কাদিগড় জাতীয় উদ্যান। সংরক্ষিত বন এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন নিষিদ্ধ থাকলেও বন বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের অলিখিত অনুুমতি সাপেক্ষে স্থাপন করা হয়েছে ১২টি করাতকল। জাতীয় উদ্যানের পার্শ্ববর্তী বাটাজোর বাজারের পশ্চিম পাশে স্থানীয় ইউপি মেম্বার জাহাঙ্গীর আলমের করাতকল ফার্নিচার ব্যবসায়ী আজাহার, ওষুধ ব্যবসায়ী আবুল হোসেন, পলাশ তালুকদার, নজরুল, এমরুল তালুকদার, আতিক ম-ল ও সেলিম তালুকদারের করাতকলসহ মল্লিকবাড়ি বাজারে ৪টি, চামিয়াদী গ্রামে ৪টি, উথুরা বিট অফিস সংলগ্ন বাজারে ১টি, নিঝুরী গ্রামে ১টি, ভরাডোবা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ৭টি, ডাকাতিয়া বাজার এলাকায় ৩টি, রাজৈ বোর্ডবাজারে ১টি, পারুলদিয়া বাজারে ১টি, বিরুনীয়া মোড় ও বাজার এলাকায় ৬টি, ভালুকা মল্লিকবাড়ি মোড় গজারী বনের ভেতর ৭টিসহ অর্ধশত অবৈধ করাতকল রয়েছে। এসব করাতকল মালিক ও অসাধু কাঠ ব্যবসায়ীরা বন বিভাগের সঙ্গে অলিখিত মাসিক চুক্তিতে রাতের আঁধারে বন বাগানের আকাশমনি ও কাদিগড় জাতীয় উদ্যানের গজারী গাছ কেটে নিয়ে নির্বিগ্নে দিনদুপুরে চিরাই করছে। আর এসব চেরাইকৃত কাঠ আশপাশের বাজারে অবস্থিত ফার্নিচারের দোকানসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফার্নিচার ব্যবসায়ী ও করাতকল মালিক স্থানীয় মেম্বার জাহাঙ্গীর আলম জানান, সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে ম্যানেজ করেই আমি করাতকল পরিচালনা করছি।
×