ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ ॥ শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরস্কার ও কারুমেলা

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ ॥ শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরস্কার ও কারুমেলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের হারিয়ে যাওয়া হস্ত ও কারুশিল্প অন্বেষণ, ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার এবং কারুশিল্পীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ কারুশিল্পী পুরস্কার ও কারুমেলা প্রবর্তন করে। সেই ধারাবাহিকতায় এ বছর চারটি শিল্পমাধ্যমে চারজন শ্রেষ্ঠ শিল্পীকে সম্মাননা জানানো হবে। প্রত্যেককে সম্মাননা স্মারক, প্রশংসাপত্র ছাড়াও নগদ ৫০ হাজার টাকা করে অর্থ পুরস্কার দেয়া হবে। চলতি বছর এ পুরস্কার পাচ্ছেন আদি টাঙ্গাইল বয়নশিল্পী রাজ্জাক, শঙ্খশিল্পী অনুপ নাগ, শোলাশিল্পী নিত্য মালাকার ও চিত্রিত মাটির পুতুলের শিল্পী বিজলী রানী পাল। পুরস্কারগুলো শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন, পটুয়া কামরুল হাসান, শিল্পী রশিদ চৌধুরী এবং অধ্যক্ষ তোফায়েল আহমদকে উৎসর্গ করা হয়েছে। আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ৪টায় ধানম-ির জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠে অনুষ্ঠিতব্য কারুশিল্পী পুরস্কার ও কারুমেলা ১৪২২ যৌথভাবে উদ্বোধন করবেন মানবাধিকার কর্মী এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল এবং লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরের পরিচালক রবীন্দ্র গোপ। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন চাকমা বয়নশিল্পের কারুশিল্পী শরৎমালা। ৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে মেলা চলবে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্তÑ প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। পুরস্কারপ্রাপ্ত চারটি মাধ্যমসহ মেলায় ১১টি মাধ্যমে কারুপণ্য বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শিত হবে। মাধ্যমগুলো হলোÑ শঙ্খ, শোলা, চিত্রিত মাটির পুতুল, তাঁতের শাড়ি, আদিবাসী কারুশিল্প, পাটজাত শিল্প, কাঁথাশিল্প, গামছা ও লুঙ্গি, ধাতবশিল্প, বাঁশজাত শিল্প ও হাতে আঁকা পটচিত্র। এ আয়োজনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কারুশিল্পীদের বাছাই করে, কারুমেলায় অংশগ্রহণের জন্য তাদের ঢাকায় এনে নগরীর বিপণন ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করা। বাংলাদেশ জাতীয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে প্রায় ছয় মাস আগে জরিপ চালিয়ে সারাদেশে ঐতিহ্যবাহী অথচ প্রায় বিলীন শিল্পমাধ্যমগুলোকে চিহ্নিত করা হয়। বাজারের আকর্ষণে যারা নিজের কাজের মান বা শিল্পগুণ কখনও খাটো করেননি, বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত প্রশিক্ষণ ও শিল্পবোধকে ম্লান হতে দেননি; অথচ পরিবর্তিত সামাজিক-অর্থনৈতিক আবহে যাদের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদেরই খুঁজে বের করে পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন করা হয়। বলাবাহুল্যÑ প্রতিবছর এমন কারুশিল্পীদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। মেলার লক্ষ্য কারুশিল্পীদের উৎসাহিত করা, নগরীর বিপণন ব্যবস্থার সঙ্গে তাদের যুক্ত করা এবং লোকশিল্পের বিভিন্ন ধারাকে জনপ্রিয় করে তোলা। কারুমেলার জন্য যেসব কারুশিল্পীকে বাংলাদেশের বিভিন্ন (বহু ক্ষেত্রে প্রত্যন্ত) অঞ্চল থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয় তাদের আসা-যাওয়া ও ঢাকায় অবস্থানকালীন থাকা-খাওয়া-যাতায়াতের সম্পূর্ণ ব্যয় কারুশিল্প পরিষদ ও বেঙ্গল ফাউন্ডেশন বহন করে। মেলার সমুদয় ব্যবস্থাপনা এ প্রতিষ্ঠানদ্বয় করে থাকে। কারুশিল্পীরা মেলায় যা আয় করেন তার পুরোটাই নিজের জন্য সংরক্ষণ করেন। কারুমেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত কারুশিল্পীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ প্রতিবছর এ আয়োজনে নতুন মাত্রা সঞ্চার করে থাকে। কারুশিল্পীদের সৃষ্টিদক্ষতা সবার সামনে তুলে ধরতে পেরে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি। এ প্রয়াস ক্ষুদ্র হলেও কারুশিল্পীদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, সৃজনী উদ্যোগে এটি নতুন গতিবেগ সঞ্চার করে। কারুশিল্পে হাজার বছরের ঐতিহ্যকে সমকালীন প্রেক্ষাপটে উপলব্ধির একটা সুযোগ এখানে তৈরি হয়। এ উপলব্ধির মধ্য দিয়েই হয়ত কারুশিল্পে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ব্যাপ্ত দীক্ষা, প্রজ্ঞা, লালিত রুচি ও নান্দনিক বোধের সঙ্গে পরিমিত মাত্রায় যুক্ত হবে আধুনিক মনন ও বোধ। কারুশিল্প যথার্থভাবে বেঁচে থাকার পক্ষে সহায়ক একটি সংবেদ তৈরি হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
×