ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ ॥ প্রাচ্যনাটের ‘বন মানুষ’

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ ॥ প্রাচ্যনাটের ‘বন মানুষ’

সাজু আহমেদ ॥ বিশ্বব্যাপী ক্রমশই বিস্তার করছে পুঁজিবাদ। সেই সুবাদে বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরে শ্রেণী বৈষম্য বেড়েই চলেছে। পুঁজিবাদীরা ক্রমাগতভাবে গিলে খাচ্ছে মানবিকতা। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য ভয়াবহ সঙ্কট তৈরি করছে উন্নত দেশের নানামুখী বিধ্বংসী পদক্ষেপ। বিশেষ করে এ শ্রেণীর মানুষগুলোর অহেতুক হস্তক্ষেপে উন্নয়নকামী দেশগুলো দিন দিন সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ছে। যার প্রভাব পড়ছে দেশের অভ্যন্তরে। সমাজের সবচেয়ে শোষিত শ্রেণী দিনমজুর মানুষগুলোকে উপরতলার মানুষেরা অসভ্য জানোয়ার বলে মনে করছে। জাতিগত পর্যায় থেকে পরিবার কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায় পর্যন্ত অবিরত চলছে পুঁজিবাদের চর্চা। যদিও সেই গোপন চর্চা বিশ্বায়নের নামে প্রকাশ্য দানবরূপে গ্রাস করছে পৃথিবীকে। সমসাময়িক সামাজিক, রাষ্ট্রিক এমনকি বৈশ্ব্যিক সঙ্কট ওঠে আসে নাটকে। তাই একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম সমস্য পুঁজিবাদের থাবা মানবিকতাকে কতটা অবগুণ্ঠিত করছে সেই চিত্র বাদ যায়নি মঞ্চ নাটকে। পুঁজিবাদের বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ প্রাচ্যনাটের দর্শকনন্দিত প্রযোজনা ‘বন মানুষ’। রাজধানীর জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় মঞ্চায়ন হবে প্রাচ্যনাটের নাটক ‘বন মানুষ’। এটি প্রাচ্যনাটের ২৭তম প্রযোজনা। আমেরিকান নাট্যকার ইউজিন ও নিলের লেখা ‘দ্য হেয়ারি এপ’ নাটকটি ‘বন মানুষ’ নামে নির্দেশনা দিয়েছেন বাকার বকুল। নাটকটির কোরিওগ্রাফি করেছেন পারভীন সুলতানা কলি, মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা এ বি এস জেম। নাটকের বিভন্ন চরিত্র রূপদান করবেনÑ শশাংক সাহা, তৌফিকুল ইসলাম ইমন, সাদিকা স্বর্ণা, আজাহার উদ্দিন রিয়াজ, সোহেল ম ল, এবিএস জেম, সোহেল রানা, রুহুল আমিন, পারভীন পারু, হাসনাত রিপন, আরিফ রেজা খান, শাহরিয়ার রানা জুয়েল, ফুয়াদ, নাইমি নাফসীন মুস্তাফা, শাফিন আহমেদ, মাসুদ রানা প্রমুখ। ‘বন মানুষ’ নাটকের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে জাহাজের খোলের ভেতর দাঁড়িয়ে ইঞ্জিনের চুল্লিতে কয়লা ভরে এমন কয়েকজন শ্রমিককে ঘিরে। তাদেরই একজন ইয়াংক। নাটকে তার তীব্র বেদনা বোধ ও ক্ষোভের মধ্য দিয়ে পৃথিবীর লাঞ্ছিত-নিপীড়িত মানুষের আর্ত হাহাকার ও ক্ষোভ ফুসে উঠেছে। দেখতে প্রায় বনমানুষের মতো কালিঝুলি মাখা অবস্থায় তাকে আরও বন্য মনে হয়। অন্যদিকে পুঁজিপতির আদুরের কন্যা মিলড্রেড ডগলাস, যে পুঁজিপতি আবার এ জাহাজের পরিচালকম-লীর অন্যতম। ডগলাস এ জাহাজের যাত্রী। সে একবার জাহাজের খোলে নেমে ইয়াংককে দেখে ভয়ে চিৎকার দেয়। আর ইয়াংক যখন বুঝতে পারে তাকে উপলক্ষ করেই এ চিৎকার, তখন তীব্র ঘৃণাবোধ জন্ম নেয় তার মধ্যে। ডগলাসকে কেন্দ্র করেই সারা দুনিয়ায় পুঁজিপতিদের ঘৃণা করতে থাকে সে। ভাঙতে চায় পুঁজিপতিদের স্বর্গতুল্য প্রাসাদ। জাহাজ বন্দরে ভিড়লে এক সঙ্গীকে নিয়ে সে শহরে ঘুরতে বের হয়। শহরের জৌলুস ও উচ্চবিত্তের জাঁকজমক তাকে ক্ষিপ্ত করে তোলে। নানারকম পাগলামি প্রকাশ পায় তার মধ্যে। শেষে সে জেলে প্রেরিত হয়। জেল থেকে পালিয়ে সে সরাসরি চিড়িয়াখানায় বন মানুষের খাঁচার কাছে গিয়ে জন্তুটাকে ডাক দেয়। তার নিজের সঙ্গে হাত মেলানোর জন্য। শেষে বন মানুষের আক্রমণে নিহত হয় সে।
×