ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আরও সেরা হাসপাতাল চাই

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

আরও সেরা হাসপাতাল চাই

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ দেশের সেরা সরকারী হাসপাতাল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ কার্যালয়ের সহায়তায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) তত্ত্বাবধানে পরিচালিত স্বাস্থ্যসেবা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় এটি বিবেচিত হয়েছে। নির্ধারণ করা হয়েছে ৬টি মানদ-। যথাÑ স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থায়ন, ওষুধ, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির সরবরাহ, স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা সর্বোপরি নেতৃত্ব ও সুশাসন। তিনটি পৃথক শ্রেণীতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মোট ১৪৫টি হাসপাতালকে নেয়া হয়েছে বিবেচনায়। ঢামেকের সঙ্গে শীর্ষ পাঁচে স্থান পেয়েছে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। জেলা পর্যায়ে শীর্ষ স্থানে রয়েছে কুষ্টিয়া জেলা হাসপাতাল এবং উপজেলা পর্যায়ে প্রথম হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদী থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ২০১৫ সালের হেলথ বুলেটিনে এসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। প্রথমেই বলে নেয়া ভাল যে, এটি একটি ভাল উদ্যোগ। প্রকল্পটির উদ্দেশ্য হলো, বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে জনসাধারণের দোরগোড়ায় সরকারী স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়া। র‌্যাংকিংয়ের ফলে একদিকে যেমন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের স্টাফরা উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত হবে; অন্যদিকে অন্যান্য হাসপাতালের কর্মীরাও সেবার ক্ষেত্রে একটা প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবে। এ রকম হলে সার্বিকভাবে জনসেবার মান বাড়বে এবং জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি উন্নত হবে। সত্য বটে, দেশে জনস্বাস্থ্যসেবার মান সার্বিকভাবে উন্নত নয়। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তুলনার তো প্রশ্নই ওঠে না। জনসংখ্যা অনুপাতে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ খুব কম। এর পাশাপাশি নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিকস আয়া ও অন্যান্য। এমনকি ডাক্তার-নার্স অনুপাতও আশাব্যঞ্জক নয়। তদুপরি রয়েছে চিকিৎসার আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ রোগ নির্ণয়ের স্বল্পতা, প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সর্বোপরি ওষুধ-বিষুধ। দেশের চাহিদার অনুপাতে প্রায় ৯৮ শতাংশ ওষুধ স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হলেও কিছু জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ও আনুষঙ্গিক উপকরণ আনতে হয় বিদেশ থেকে। সে সবের দামও চড়া। ফলে দরিদ্র মানুষ উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয় প্রায়ই। এসব ক্ষেত্রে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে আরও কিছু করার রয়েছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বেসরকারী খাতে কয়েকটি ভাল মানের হাসপাতাল ও ক্লিনিক গড়ে উঠলেও সাধারণ মানুষের জন্য সেগুলো দুর্মূল্য ও সাধ্যাতীত। ফলে গরিব মানুষ তথা রোগীদের বাধ্য হয়ে ছুটতে হয় সরকারী হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। উপজেলা পর্যায়ে থানা হেলথ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বর্তমান সরকারের একটি ভাল উদ্যোগ নিঃসন্দেহে। কিছু ক্ষেত্রে ডাক্তার ও নার্স না পাওয়ার অভিযোগ থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে গ্রামের সাধারণ মানুষ এ থেকে উপকৃত হয়। রোগব্যাধি কিছু জটিল ও দুরারোগ্য হলে স্বভাবতই মানুষ ছোটে সরকারী হাসপাতালে। সব সরকারী হাসপাতালে হয়ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। তবে সাধারণ ডাক্তার ও নার্সের দেখা মেলে। পাওয়া যায় সহজলভ্য সাধারণ ওষুধ-বিষুধও। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ রোগব্যাধির জন্য এসবই যথেষ্ট। সরকারী হাসপাতালের সুবিধা হলো, এখানে রোগী রেফার করার সুবিধা আছে। ফলে গরিব রোগীদের ঢামেকসহ রাজধানীর বিভিন্ন বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার পথ সুগম থাকে। এও সত্য যে, ভিড় বেশি থাকায় অনেক সময় সব রোগী ভর্তি করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে র‌্যাংকিংয়ে সেবাদানের সক্ষমতা বিবেচনা করে পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সরকারী হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ও আনুষঙ্গিক সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে, সার্বিকভাবে দেশের চিকিৎসার মান উন্নীত হতে পারে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়েই অগ্রসর হবে বলে প্রত্যাশা।
×