ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ডিজিটাল ট্রাফিক ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৩:৩৬, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ডিজিটাল ট্রাফিক ব্যবস্থা

কার্যত অকেজো হয়ে পড়ছে রাজধানীর ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা। সাধারণ সড়ক থেকে শুরু করে ভিআইপি সড়কগুলোতেও বেশিরভাগ ট্রাফিক সিগন্যাল এখন অকেজো। সিগন্যাল বাতিগুলো জ্বলছে-নিভছে তাদের মর্জিমতো। কোথাও জ্বলে, কোথাও জ্বলে না। এ অবস্থায় বিভিন্ন পয়েন্টে হাতের ইশারা আর বাঁশি ফুঁকে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকে। ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে ডিজিটাল পদ্ধতির সিগন্যাল স্থাপনে বিপুল অর্থ ব্যয় হলেও কার্যত ট্রাফিক ব্যবস্থা এখন চলছে এনালগ পদ্ধতিতে। সমন্বয়ের যথাযথ অভাব এবং মাত্রাতিরিক্ত যানজটের কারণে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। রাজধানীতে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে যানজট সমস্যা। কেবল পরিবহন বৃদ্ধিই নয়, এর সঙ্গে যুক্ত আছে ট্রাফিক ব্যবস্থার গাফিলতিও। যানজট নিরসনে সরকার বিভিন্ন সময়ে বহু প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কোনটি দীর্ঘমেয়াদী, কোনটি বা স্বল্পমেয়াদী। কিন্তু কোনটিই শতভাগ বাস্তবায়িত হয়নি। তারপরও বর্তমান সরকার রাজধানীর ট্রাফিক সিস্টেম ডিজিটাল করার চেষ্টায় সাত বছরে বিপুল অর্থ ব্যয় করেছে। ট্রাফিক ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ করা হলেও এর সুফল পাচ্ছে না রাজধানীবাসী। জানা যায়, ঢাকা মহানগরে কমপক্ষে ৭৫ পয়েন্টে ট্রাফিক সিগন্যাল রয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ সচল সিগন্যালের সংখ্যা ১২টি। আংশিক সচল সিগন্যালের সংখ্যা ৩৬ এবং অচল সিগন্যালের সংখ্যা ২৭টি। সিগন্যাল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে ট্রাফিক পুলিশ, কিন্তু সরঞ্জাম সরবরাহের দায়িত্ব ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের। ফলে ট্র্রাফিক ব্যবস্থা সচল রাখার ক্ষেত্রে ডিসিসি ও ডিএমপির মধ্যে প্রায়ই দড়ি টানাটানির অবস্থা। সিগন্যাল না মানার প্রবণতা ডিজিটাল সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু রাখার ক্ষেত্রে বিড়ম্বনা সৃষ্টি করছে। যে কারণে প্রতিদিনের ভয়াবহ এই যানজট। রাজধানীর যানজট নিরসনে ২০০০ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আরবান ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই প্রকল্পের আওতায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ ৭০টি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ পয়েন্টে ডিজিটাল সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়। প্রাথমিক কাজ শেষে ২০০৯ সালের ২২ নবেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু হয়। মোটরযানে ডিজিটাল নাম্বার প্লেট চালু করা হয়। সিগন্যাল পদ্ধতি মেনে চলার জন্য সচেতনতা সৃষ্টিসহ কঠোর শাস্তির ঘোষণাও দেয়া হয় পুলিশের পক্ষ থেকে। কিন্তু কিছু দিন পরই আগের অবস্থায় ফিরে আসে রাজধানীর ট্রাফিক ব্যবস্থা। সিগন্যাল ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ না করায় পুরনো ব্যবস্থাকেই অনুসরণ করতে শুরু করেন ট্রাফিক কর্তৃপক্ষসহ চালকরা। বলা হয় যানবাহনের চাপ বাড়ায় স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল পদ্ধতি অনুসরণ করে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। তাই এখন অবলম্বন সেই হাত ও বাঁশি। ট্র্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় না থাকলে কখনোই ট্রাফিক ব্যবস্থায় ডিজিটাল রূপান্তর সম্ভব নয়। যানজটের দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরিবহনে অতিরিক্ত জ্বালানি খরচ হচ্ছে। পরিবেশ দূষণ বাড়ছে। ছড়াচ্ছে শ্বাসকষ্টজনিত নানা রোগ। যানজট নিরসনে ডিজিটাল ট্রাফিক ব্যবস্থা যথাযথভাবে কার্যকর করা দরকার। এই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করা জরুরী।
×