ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যটন পল্লী গঙ্গামতিতে জমি দখল

সংরক্ষিত বনে গাছ নিধন

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সংরক্ষিত বনে গাছ নিধন

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ৩১ জানুয়ারি ॥ পর্যটনপল্লী গঙ্গামতি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ছইলা-কেওড়া গাছ নিধনের তা-ব চলছে। সাতদিন ধরে চলছে গাছ কাটার এ তা-ব। সংরক্ষিত বনাঞ্চলটির ৫০ বছরের প্রাচীন শতাধিক গাছ কেটে বনের মধ্যে রাখা হয়েছে। এখনও গাছ কাটার তা-ব চলছে। দু’চার দিনের মধ্যে কাটা গাছ ট্রলারযোগে পাচার হওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় বনপ্রজাসহ বাসিন্দারা। তাদের ভাষ্য, ‘এই রহম গাছ কাটতে আগে কোনসময় দেহি নাই।’ বনাঞ্চলের ৩৩ কানি নামক স্থানের পূর্বদিকে এভাবে শতাধিক গাছ কেটে ওই বনে রাখা হয়েছে। লাশের মতো পড়ে আছে প্রাচীন গাছগুলো। তিন-পাঁচ হাত বেড়। ৫০ ফুট উঁচু গাছগুলো নিচ থেকে এক দেড়ফুট রেখে করাত দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে। ইলেকট্রিক করাত দিয়ে গাছগুলো কাটা হয় বলে ধারণা স্থানীয়দের। মাত্র দুই কিলোমিটার অদূরে গঙ্গামতি বনবিভাগের বিট অফিস থাকায় এলাকার মানুষের অভিযোগ, তাদের প্রত্যক্ষ যোগসাজশে এ গাছ কেটে সাবাড় করা হচ্ছে। বিগত সিডর, আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে প্রাথমিকভাবে এ বনাঞ্চলটি মানুষ ও তাদের সম্পদকে রক্ষা করেছে। যেখানে বনায়ন রক্ষায় সরকার সদাসচেষ্ট সেখানে বন উজাড়ের এ দৃশ্য দেখলে হতবাক বনে যাওয়ার কথা। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে যেন, গঙ্গামতি বনাঞ্চলটি এখন বনদস্যুদের নিজস্ব সম্পতি হয়ে গেছে। দুই হাজার একর বনভূমির সংরক্ষিত এ বনাঞ্চলটি পড়েছে নিশ্চিহ্নের কবলে। ভূমিদস্যুরা এ গাছগুলো কেটেছে স্থানীয় জানায়। সরেজমিনে দেখা গেছে, অন্তত ৫০Ñ৬০ বছর আগে শতাধিক ছইলা-কেওড়া গাছ কেটে রাখা হয়েছে। স্থানীয়দের ধারণা, রাতেই এ গাছগুলো ট্রলারযোগে পাচার করা হবে। প্রতিরাতেই গাছ কাটা হচ্ছে বলেও তারা জানালেন। বনপ্রজাসহ স্থানীয় জেলেরা জানালেন, অন্তত সাতদিন ধরে গাছ কাটা চলছে। মাত্র কুড়ি মিনিটের পথ দূরে রয়েছে বনবিভাগের বিট অফিস। এভাবে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের গাছ কাটা অব্যাহত থাকলে সব বিরাণ ভূমিতে পরিণত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ১৯৯৮ সালে গঙ্গামতি এলাকায় পর্যটন পল্লী গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে বিশাল এলাকাজুড়ে সাগরপাড় ঘেঁষা এ সংরক্ষিত বনাঞ্চলটির গুরুত্ব বহুলাংশে বেড়ে যায়। বনাঞ্চলটি ধুলাসার এলাকার হাজার হাজার পরিবারকে জলোচ্ছ্বাসের ঝাঁপটা থেকে প্রাথমিকভাবে রক্ষা করে। চোখ ধাঁধানো সুন্দরের সমাহার এ বনাঞ্চলটি দেখতে প্রতিদিন শত শত পর্যটক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। বনটির মাঝখান দিয়ে মনোরম লেক রয়েছে। যেখানে ঘুরে বেড়ায় আগতরা। যেখানে বনটি রক্ষায় বনবিভাগের বিশেষ নজরদারি থাকা প্রয়োজন। সেখানে উল্টো বনের প্রাচীন গাছ কাটার তা-ব চলছে। ৭০ বছর বয়সী জেলে আব্দুস সালাম বলেন, ‘ জীবনে এই রহম গাছ কাডা দেহি নাই।’ একই মন্তব্য আব্দুর রহিম ও রিয়াজের। বাগানটির গাছ নিধনযজ্ঞ দেখলে আঁৎকে ওঠে যে কেউ। বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মহিপুর রেঞ্জের অধীন গঙ্গামতি এ ক্যাম্পটির আয়তন দুই হাজার ছয় দশমিক ৮৩ একর। যার মধ্যে সংরক্ষিত বনভূমি রয়েছে এক হাজার এক শ’ ২৮ একর। যা এখন বনরক্ষকদের কাছে অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। বনবিভাগ গঙ্গমতির বিট কর্মকর্তা পারভেজ জানান, আমাকে বিপদে ফেলার জন্য এবং গাছ কেটে জমি দখলের জন্য একটি চক্র এভাবে গাছ কেটেছে। এজন্য রহমান সরদার নামের একজনকে অভিযুক্ত করে থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। বনবিভাগ মহিপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা ফারুক হোসেন জানান, এ ঘটনায় কলাপাড়া থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে। গভীর রাতে মূলত জমি দখলের জন্য চিহ্নিত চক্র গাছ কেটে ফেলেছে। তাদের কয়েকজন নিরস্ত্র বনকর্মী দিয়ে বনাঞ্চল রক্ষা এখন দুরূহ হয়ে উঠেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। পটুয়াখালী বিভাগীয় বনকর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র জানান, আমি শুনেই দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি।
×