ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সাদা ফুলে ছেয়ে গেছে পাহাড়ী জনপদ

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সাদা ফুলে ছেয়ে গেছে পাহাড়ী জনপদ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ তামাক পাতার উৎকন্ঠ গন্ধ এখন আর চোখে পড়ছে না। মাঠের পর মাঠ, বিস্তীর্ণ পাহাড়ী এলাকায় চোখে পড়ছে শুধু সাদা আর সাদা ফুল। আগ্রহসহকারে ভিটা, পরিত্যক্ত জায়গাটুকু এবং পাহাড়ে দেদারছে লাগিয়ে চলছে এই সাদা ফুলের লাভবান গাছ। এসব সাদা ফুলগুলো হচ্ছে তুলা ফুল। এদৃশ্য কক্সবাজারের উখিয়ার তেলখোলা, টেকনাফের হ্নীলা, বাহারছড়া এবং জেলার পার্শ্ববর্তী পার্বত্য উপজেলা লামা, নাইক্ষ্যংছড়ির। তামাকের বদলে ওরা এখন তুলা চাষে আগ্রহী হয়ে পড়েছে পাহাড়ী অধিবাসীরা। এই তুলা চাষ করে অনেক পাহাড়ীর জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বদলে দিয়েছে। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এর পরিধি আরও বাড়বে এমনটাই আশা করছেন স্থানীয় অধিবাসী উপজাতিসহ স্থানীয়রা। তারা তুলা চাষে সরকারী সহযোগিতা কামনা করেছেন। এ বছর ১৩শ’ ৬০ মেট্রিক টন পাহাড়ী তুলা ও ২শ’ ৭০ মেট্রিক টন সমভূমি তুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড। যা দেশের মোট চাহিদার এক পঞ্চমাংশ এখানকার তুলা দিয়ে মেঠানো সম্ভব হবে। কক্সবাজারের পার্শ্ববর্তী লামা উপজেলার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের লাইক্ষ্যং, নাইক্ষ্যং ও গজালিয়ায়, সদর উপজেলার রেইচা ইউনিয়নসহ বান্দরবানের সাত উপজেলার পাহাড়ী ও সমভূমিতে তুলা চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। ক্ষতিকর তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তুলা চাষ করছেন ওরা। কক্সবাজারের পার্শ্ববর্তী বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় মাঠের পর মাঠ, বিস্তীর্ণ পাহাড়ী এলাকায় দেশী তুলার পাশাপাশি হাইব্রিড জাতের তুলা চাষও করা হয়েছে। যেখানে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে আগ্রাসী তামাক চাষ করা হতো, সেখানে বর্তমানে তুলা চাষ করা হচ্ছে দেদারছে। এতে আগ্রহও বাড়ছে স্থানীয়দের। সরেজমিনে দেখা গেছে, লামা উপজেলার চাষীরা তামাক চাষে অভ্যস্ত ছিল। ভরে গিয়েছিল সবুজ তামাকে মাঠের পর মাঠ। সময় পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কৃষিপণ্য উৎপাদনের ধরন পাল্টিয়েছে। এখন জুমিয়ারা (জুম চাষী) মিশ্র ফসলের পাশাপাশি তুলা চাষও করছে। অত্যধিক লাভবানও হচ্ছেন তারা। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর হাইব্রিডের পাশপাশি দেশে উদ্ভাবিত উন্নত জাতের তুলা চাষ করছেন ওসব কৃষকরা। এ অঞ্চলের মাটি তুলা চাষের উপযোগী হওয়ায় চাষীরা তুলা চাষের দিকে ঝুঁকছেন বেশীরভাগ। তবে সরকারী সহায়তা পেলে পাহাড়ে তুলা চাষের সম্ভাবণাকে কাজে লাগিয়ে পার্বত্য এলাকায় পতিত জমিতে ব্যাপক তুলা চাষ করা যাবে। সদর উপজেলার রেইচা ইউনিয়নের তুলা চাষী চিংনুপ্রু মার্মা জানান, ইতোপূর্বে সমভূমিতে ব্যাপক হারে তামাক চাষ করা হতো। তুলা চাষে সাফল্য পাওয়ায় এখন বিস্তীর্ণ মাঠে উন্নত জাতের তুলার চাষ করা হচ্ছে। এক বিঘা জমিতে তুলা চাষ করতে ১০ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। বিঘাপ্রতি ১১ থেকে ১২ মণ তুলা উৎপাদন করা যায়। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩০ হাজার টাকার চেয়ে বেশী। বান্দরবান জেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহাব জানান, দেশের মোট উৎপাদনের এক পঞ্চমাংশ তুলা বান্দরবানের ওই সব উপজেলা থেকে সংগ্রহ করা যাবে। চলতি মৌসুমে বান্দরবান জোনের অধীনে জেলা সদরসহ সাতটি উপজেলায় ৫ হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে পাহাড়ী তুলা ও ১৮০ হেক্টর জমিতে সমভূমি জাতের তুলা চাষ হয়েছে। এ বছর ১ হাজার ৩৬০ মেট্রিক টন পাহাড়ী তুলা ও ২৭০ মেট্রিক টন সমভূমি তুলা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা দেশের মোট চাহিদার এক পঞ্চমাংশ এখানকার তুলা দিয়ে মেটানো সম্ভব হবে। তিনি আরও জানান, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের রেকর্ড মতে বান্দরবানে সাড়ে ৪ হাজার চাষী বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ নিয়ে মাঠে তুলা উৎপাদন করছে। প্রশিক্ষণে তাদের উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাত করণের বিষয়ে ব্যাপক ধারণা দেয়া হয়। যেহেতু বন্দরবানে তুলা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে, তাই পরিকল্পিত এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এখানে তুলা চাষ করা যেতে পারে। তার মতে, পাহাড়ের ঢালে তুলা চাষ খুবই লাভজনক। পাহাড়ের মাটি ও পরিবেশ তুলা চাষের জন্য উপযোগী।
×