ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পটুয়াখালীতে যুগ যুগ ধরে চলছে কর না দেয়ার রেওয়াজ

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

পটুয়াখালীতে যুগ যুগ ধরে চলছে  কর না দেয়ার রেওয়াজ

মোঃ মোখলেছুর রহমান, নিজস্ব সংবাদদাতা ॥ পটুয়াখালী জেলার ৮টি উপজেলায় সরাসরি কর দেয় মাত্র তিন হাজার মানুষ। আর নিবন্ধিত কর দাতার সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। অথচ জেলার করদাতার এ সংখ্যার কয়েক গুণ বেশি আছে শুধু পটুয়াখালী জেলা শহরে। যদিও পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় পর্যটন কেন্দ্র, মহিপুর-আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রসহ বড় বড় ব্যবসায়ীক অঞ্চল রয়েছে এ জেলায়। আরও অবাক করা বিষয় জেলায় মোট ৭৩ জন ব্যক্তি রয়েছেন যারা কিনা বছরে ১০ লাখ টাকার উপরে আয়কর দেন। অপর দিকে পটুয়াখালী শহরে কোটিপতি রয়েছেন প্রায় শতাধিক। অভিযোগ রয়েছে আবার এই ৭৩ জনের যে সম্পদ রয়েছে, রিটেনে তার সামন্য দেয়া আছে। এ অবস্থার কারণে সরকার কোটি কোটি টাকার আয়কর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শুধু পটুয়াখালী জেলা থেকে। সূত্রমতে পটুয়াখালী কর অফিসের কার্যক্রমকে পটুয়াখালী সদর, মির্জাগঞ্জ, দুমকি, বাউফল, দশমিনা, গলাচিপা, কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালি উপজেলাকে ৪টি সার্কেলে ভাগ করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সার্কেল ৪টি হচ্ছে, সার্কেল-১৮ (পটুয়াখালী সদর, বাউফল, দুমকি ও মির্জাগঞ্জের সকল চাকরিজীবী), ১৯ (গলাচিপা রাঙ্গাবালি ও দশমিনার সকল করদাতা), ২০ (কলাপাড়ার সকল করদাতা) ও ২১ (পটুয়াখালী সদর, মির্জাগঞ্জ, বাউফলের সকল ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীরা)। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এসব সার্কেলে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ওই সময়ে আদায় হয়েছে ১০ কোটি ৭৮ লাখ ১৯ হাজার ৮৭২ টাকা। ১৮ সার্কেলর পটুয়াখালী শহরের পুরাতন ফেরিঘাট থেকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত রাস্তার দক্ষিণ পাশ গলাচিপার সীমানা পর্যন্ত এবং দুমকির ব্যবসায়ীরা)। গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সার্কেলে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৬ লাখ টাকা। এ সময়ে আদায় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৮২ লাখ টাকা। এই কর দাতাদের মধ্যে ১০ লাখ টাকার উপরে আয় করেন এমন লোকের সংখ্যা ২১ জন। এক লাখ এক টাকা থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত আয় করেন এমন লোকের সংখ্যা ১ হাজার ৫শ’। মোট করদাতা ১ হাজার ৫৪০ জন। এদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৫৮ লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৯ টাকা। ১৯ সার্কেলের (গলাচিপা রাঙ্গাবালি ও দশমিনার সকল করদাতা), গত বছর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে প্রায় ৮৪ লাখ টাকা। এই করদাতাদের মধ্যে ১০ লাখ টাকার উপরে আয় করেন এমন লোকের সংখ্যা ৮ জন। ১০ লাখ পর্যন্ত আয় করেন এমন লোকের সংখ্যা ৯৯৭ জন। মোট নিবন্ধিত করদাতা ৩০৪৫ জন। করদাতা ১ হাজার ৬৪৫ জন। যার মধ্যে গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রিটার্ন দাখিল করেছেন ৫৫৭ জন। ২০ সার্কেলের (কলাপাড়ার সকল করদাতা) গত বছর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। ওই সময়ে আদায় হয়েছে প্রায় সোয়া কোটি টাকা। এই করদাতাদের মধ্যে ১০ লাখ টাকার উপরে আয় করেন এমন লোকের সংখ্যা ৫ জন। ১০ লাখ পর্যন্ত আয় করেন এমন লোকের সংখ্যা ৩শ’ জন। এখানে নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ১ হাজার ৫শ’। করদাতা ৫শ’ জন। ২১ সার্কেলের (পটুয়াখালী সদর, মির্জাগঞ্জ, বাউফলের সকল ঠিকাদার ও ব্যবসায়ীরা)। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। আদায় হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। এ সার্কেলে মোট নিবন্ধিত করদাতা ৩ হাজার ৫শ’ ৯২ জন। এর মধ্যে রিটার্ন দাখিল করেছেন ২০২৫ জন। এই করদাতাদের মধ্যে ১০ লাখ টাকার উপরে আয় করেন এমন লোকের সংখ্যা ৪০ জন। ১০ লাখ পর্যন্ত আয় করেন এমন লোকের সংখ্যা ১ হাজার ৯৮৫ জন। পটুয়াখালী কর বিভাগের আওতায় গত গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যার মধ্যে আদায় হয়েছে ১০ কোটি ৭৮ লাখ ১৯ হাজার ৮৭২ টাকা। অথচ কুয়াকাটায় বড় বড় হোটেল মোটেল রয়েছে প্রায় শতাধিক। সেখানে করদাতার সংখ্যা মাত্র ৫ জন। এ ব্যাপারে পটুয়াখালী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মোঃ গিয়াস উদ্দিন জানান, পটুয়াখালীতে করদাতাদের সংখ্যা সন্তোষজনক নয়। ট্রেডলাইসেন্স প্রদানকারী সংস্থা, কর অফিস ও প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় করা গেলে এ সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়ানো সম্ভব। এ ব্যাপারে পটুয়াখালী উপ-কর কমিশনার মোঃ জাকারিয়া হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, করদাতা শনাক্ত করার কাজ (সার্ভে) চলছে। তবে ৪টি সার্কেলে একজন ইন্সপেক্টর দিয়ে করদাতা শনাক্ত করা সহজ কোন কাজ নয়। এ জন্য জনবল বাড়ানো দরকার।
×