ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাগরিক সম্পৃক্ততার উপায় খুুঁজতে বৈঠক ৪ ফেব্রুয়ারি

সরকারী ক্রয়ে থার্ড পার্টি মনিটরিং

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

সরকারী ক্রয়ে থার্ড পার্টি মনিটরিং

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ সরকারী ক্রয়ে থার্ড পার্টি মনিটরিং (তৃতীয় পক্ষের তদারকি) বাড়ানো হচ্ছে। এ বিষয়ে কিভাবে নাগরিক সম্পৃক্ততা সৃষ্টি করা যায় সে উপায় বের করতে বৈঠকে বসছে পাবলিক-প্রাইভেট স্টেকহোল্ডার কমিটি (পিপিএসসি)। আগামী চার ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনামন্ত্রী ও পিপিএসসির সভাপতি আহমত মুস্তফা কামাল। এর মধ্যদিয়ে সরকারী ক্রয় ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং নাগরিক সম্পৃক্ততার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে সেন্টার প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) সূত্রে জানা গেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের আওতায় সিপিটিইউর মহাপরিচালক গোলাম ফারুক এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে জানান, পাবলিক প্রকিউমেন্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এর সঙ্গে জনগণের অংশগ্রহণ অন্যতম একটি বিষয়। কেননা জনগণই করদাতা, তাদের টাকায়ই সরকারী কেনাকাটা সম্পন্ন হয়ে থাকে। তাই পাবলিক প্রকিউরমেন্টের কোন কোন পার্ট সিক্রেট থাকে, সেই পার্ট বাদ দিয়ে আমরা চাচ্ছি অন্য পার্টগুলোতে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ যারা সরকারী ক্রয়ের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন, তারা অংশগ্রহণ করুক বা এ বিষয়ে সচেতন থাকুক। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটাকে থার্ড পার্টি মনিটরিং বলা যেতে পারে। সিপিটিইউ সূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই সরকারী ক্রয় ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং সরকারী ক্রয়ে নাগরিক সম্পৃক্ততা সৃষ্টির লক্ষ্যে সুশীল সমাজ, উন্নয়ন সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী, টেন্ডারার, গণমাধ্যম এবং পাবলিক খাতের সদস্যদের সমন্বয়ে পাবলিক-প্রাইভেট স্টকহোল্ডার কমিটি গঠিত হয়েছে। সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়ায় নাগরিক সম্পৃক্ততা সৃষ্টির উপায় নির্ধারণে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রিফর্ম প্রজেক্টের (পিপিআরপি-২) আওতায় এ উদ্যোগ নেয়া হয়। শুরুতে এ কমিটিতে ২৭ সদস্য থাকলেও বতমানে তা বেড়ে ৪২ সদস্যে দাঁড়িয়েছে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন পিপিআরপি-২ এর আওতায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গবর্নেন্স এ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) সামাজিক জবাবদিহিতা বিষয়ক পরামর্শক হিসেবে পিপিএসসির বৈঠক আয়োজনসহ সরকারী ক্রয়ে নাগরিক সম্পৃক্ততা সৃষ্টির উপায় নির্ধারণে পিপিএসসিকে সহায়তার জন্য কাজ করছে। সরকারী ক্রয়ে পিপিএসসির কার্যপরিধির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্র্যাকটিসসহ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধিমালায় প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনয়নের জন্য পরামর্শ প্রদান করা, সরকারী তহবিলের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহার ও জনসেবা প্রদানের জন্য পলিসি সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান এবং ক্রয় প্রক্রিয়াকরণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণের জন্য স্টেকহোল্ডারদের সম্পৃক্ততা সংক্রান্ত সুপারিশ প্রদান করা। সূত্র জানায়, দিন দিন আরও শক্তিশালী বাংলাদেশের হচ্ছে সরকারী ক্রয় কার্যক্রম। সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (সিসিজিপি) ক্রয় অনুমোদন কার্যক্রম ইলেকট্রনিক গবর্নমেন্ট (ই-জিপি) প্রকিউরমেন্ট প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে। ফলে দ্রুত ই-টেন্ডারিং কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব হবে। এর আগে এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ পরিপ্রেক্ষিতে কিভাবে সিসিজিপিকে এর সঙ্গে যুক্ত করা যায় সেসব বিষয়ে সরকারের পরামর্শে সিপিটিইউ শীঘ্রই একটি কর্মশালার আয়োজন করতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মধ্য দিয়ে একটি দিক নির্দেশনা তৈরি করা হবে। বর্তমান সরকার ২০২১ সাল নাগাদ ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের যে অঙ্গীকার করেছে এরই অংশ হিসেবে দেশের সকল সরকারী ক্রয় কার্যক্রম ২০২০ এর মধ্যে ই-জিপির আওতায় নিয়ে আসার জন্য সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) ব্যাপক পরিকল্পনা নিয়েছে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় সরকারী ক্রয় সংস্কার প্রকল্পের আওতায় দেশে ই-জিপি বাস্তবায়ন করছে। তবে ই-জিপিতে এখনও ৫০ কোটি টাকার উর্ধে পূর্তকাজ ও পণ্য ক্রয় এবং ১০ কোটি টাকার উর্ধে বুদ্ধিবৃত্তিক ও পেশাগত সেবা ক্রয় চালু করেনি। সিসিজিপি ৫০ কোটি টাকার উর্ধে ক্রয় কার্যক্রমের সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ। সিসিজিপির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রী চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত সিসিজিপির এ প্রক্রিয়া ও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন যাতে অনলাইনে করা যায় সেজন্য পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে লেখা চিঠিতে দেশে ই-জিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি তুলে ধরেছেন। একই সঙ্গে সিসিজিপির ক্রয় সংক্রান্ত কার্যক্রম ই-জিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কয়েকটি প্রস্তাব তুলে ধরেন। সিপিটিইউ সূত্র জানায়, ই-জিপি কার্যক্রমের সুবিধাগুলো হচ্ছে পুরো সরকারী ক্রয় কার্যক্রমের একটি কেন্দ্রীয় ও জাতীয় ইলেক্ট্রনিক প্লাটফরম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারী ক্রয়ে দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ ও আইন/বিধির প্রতিপালন পরিবীক্ষণে একটি ইলেক্ট্রনিক ক্রয় ব্যবস্থাপনা তথ্য পদ্ধতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতি চালুর ফলে ক্রয় কার্যক্রমে বিভিন্ন ধরনের বিদ্যমান জটিলতা পরিহার করা সম্ভব হচ্ছে। অধিকসংখ্যক দরদাতা অবাধে ক্রয় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারে বিধায় অধিকতর প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হচ্ছে। প্রচলিত পদ্ধতিতে টেন্ডার বাক্সে দরপত্র জমাদানের বিদ্যমান নিয়ম ই-জিপির ক্ষেত্রে অবলুপ্ত হয়েছে। সরকারী ক্রয়ের গুণগত মান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্রয় কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বেসরকারী খাতে কম্পিউটার স্বাক্ষর জনগোষ্ঠীর জন্য ব্যবসার সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সিপিটিইউ সূত্র জানায়, ২০১১ সালে চারটি টার্গেট এজেন্সিতে ই-জিপির সফল পাইলটিংয়ের মাধ্যমে ই-জিপির যাত্রা শুরু হয়েছে।
×