ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর বিষয়টি ভাবছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর বিষয়টি ভাবছে সরকার

রশিদ মামুন ॥ বিশ্ববাজারে অব্যাহত দর পতনের মধ্যে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের চিন্তা করছে সরকার। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) কাছে আর্থিক অবস্থার একটি প্রতিবেদন চেয়েছে অর্থ বিভাগ। চলতি সপ্তাহে বিপিসি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদন জমা দেবে। তবে বিপিসি জ্বালানি তেলের দর সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত সরকারের ওপর ছেড়ে দিতে চায়। সূত্র বলছে, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের বিষয়টি সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে আসবে। এখানে বিপিসি সুপারিশ করলেও সুনির্দিষ্টভাবে দাম নির্ধারণের বিষয়টি এখানে থাকবে না। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এর আগে প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কাছে জ্বালানি তেলের দেশীয় বাজার পরিস্থিতির ওপর প্রতিবেদন চান। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে অর্থ বিভাগের বৈঠকের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এখন ৬৮ টাকা প্রতিলিটার ডিজেল এবং কেরোসিন বিক্রি করে বিপিসি সরকারকে ভ্যাট ট্যাক্স দেয়ার পরও ২৬ থেকে ২৭ টাকা লাভ করছে। প্রতিলিটার ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকায় বিক্রি করে একই পরিমাণ লাভ হচ্ছে। অন্যদিকে পেট্রোল ৯৬ টাকা আর অকটেন ৯৯ টাকায় বিক্রি করে লাভ করছে ৩৬ থেকে ৩৭ টাকা। অর্থ বিভাগের সচিব মাহবুব আহমেদ এ প্রসঙ্গে শনিবার জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা জ্বালানি তেলের বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়েছি। এখনও আমাদের হাতে প্রতিবেদনটি এসে পৌঁছায়নি। জ্বালানি বিভাগ বিস্তারিত প্রতিবেদন দেয়ার পর এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তিনি জানান, প্রতিদিনই আমরা জ্বালানি তেলের বিশ্ববাজার পর্যালোচনা করছি। একই সঙ্গে দেশেও জ্বালানি তেলের মূল্য সন্বয়ের বিষয়ে দুই ধরনের মতামত এসেছে। কোন কোন গবেষণা প্রতিষ্ঠান মনে করছে জ্বালানি তেলের দাম কমলে জিডিপি বৃদ্ধি পাবে। আবার কেউ কেউ মনে করছে এতে কোন সুফল পাওয়া যাবে না। সব বিষয় পর্যালোচনা করে আমরা একটি সিদ্ধান্ত নেব। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে সরকার চিন্তা করছে। এর মধ্যে বিপিসি লোকসান কাটিয়ে উঠেছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে সরকারের ওপর ব্যবসায়ীদের চাপও বাড়ছে। দেশে বিদ্যুত উৎপাদনের একটি বড় অংশ তেলভিত্তিক কেন্দ্র থেকে আসে। জ্বালানি তেলের দাম না কমানোতে বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। একদিকে সরকারের প্রতিষ্ঠান বিপিসি লাভ করলেও লোকশান গুনছে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সব বিষয় মাথায় রেখেই সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি। তবে সরকার এতদিন বিপিসিকে যে অর্থ ভর্তুকি হিসেবে দিয়েছে এখন অর্থ বিভাগ তা ঋণ হিসেবে দেখিয়ে ওই অর্থ ফেরত চাইছে। অর্থ ফেরত দিতে হলে এ মুহূর্তে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা কঠিন হবে। কারণ এর পরিমাণ ২৬ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, গত সপ্তাহে বিপিসি চেয়ারম্যান এ এম বদরুদ্দোজা অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদের সঙ্গে জ্বালানি তেলের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে অনির্ধারিত একটি বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে বিপিসির তরফ থেকে এ যাবতকাল বিপিসিকে দেয়া অর্থ ভর্তুকি হিসেবে বিবেচনা করতে অনুরোধ করেন বিপিসি চেয়ারম্যান। বৈঠকে অর্থসচিব বিপিসির সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলেন। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, দেশে সর্বশেষ জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয় ২০১৩ সালের ৪ জানুয়ারি। তখন আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম ১২০ থেকে ১২৫ মার্কিন ডলারে ওঠানামা করছিল। তখন দেশে দাম বাড়িয়ে প্রতি লিটার অকটেন ৯৯ টাকা, পেট্রোল ৯৬, ডিজেল ও কেরোসিন ৬৮ এবং ফার্নেস অয়েল ৬০ টাকা করা হয়। এখন পর্যন্ত ওই দামেই জ্বালানি তেল বিক্রি হচ্ছে। তবে এখন আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে ২৮ ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ববাজারের অব্যাহত পতনের মধ্যে দেশে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। বিগত ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অব্যাহতভাবে কমতে শুরু করে। প্রায় দু’বছর ধরেই জ্বালানি তেলে লাভ করেছে বিপিসি। বিপিসি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জ্বালানি তেল বিক্রিতে তারা লাভ করেছে ১০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।
×