ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভিটামিন-এ ও আয়োডিন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ভিটামিন-এ ও আয়োডিন

দেশের মানুষের সার্বিক খাদ্য চাহিদা মোটামুটি পূরণ হলেও স্বীকার করতে হবে যে, জনস্বাস্থ্যে প্রয়োজনীয় ভিটামিনস ও মিনারেলসের স্বল্পতা বা ঘাটতি রয়েছে। ফলে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্য থেকে পুষ্টিজনিত সমস্যা একেবারে দূর করা যায়নি এখনও। তবে সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়ে চেষ্টা চলছে নিরন্তর। এরই অংশ হিসেবে শিল্পমন্ত্রী গত মাসে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে। সেখানে সবরকম ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ মেশানো বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ভিটামিন এ মেশানোর জন্য ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী তথা রিফাইনারির মালিকদের প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিসহ এ ভিটামিন সরবরাহের প্রতিশ্রুতিও প্রদান করা হয়। মাঠপর্যায়ে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি আজ পর্যন্ত। অর্থাৎ, বাজারে নামীদামী ব্রান্ডের যেসব ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে, তা সে খোলা, প্যাকেট অথবা বোতলজাত, যাই হোক না কেন, সেসবে ভিটামিন এ মেশানো হয়নি আদপেই অথচ দেশে বুদ্ধিদীপ্ত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ সমৃদ্ধকরণ আইন পাস করে ২০১৩ সালে। সর্বশেষ শিল্পমন্ত্রী ৭২ ঘণ্টার সময়সীমা তথা আলটিমেটাম বেঁধে দেন ভোজ্যতেল সংশ্লিষ্টদের। তাতেও কোন কাজ হয়নি। ৩০টি রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান শিল্প মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে চুক্তি করলেও, তা মানছে না। এক হিসাবে জানা যায়, দেশে প্রতিবছর ভোজ্যতেলের চাহিদা কমবেশি ২০-২২ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় বড়জোর ২-৪ লাখ টন। সিংহভাগ আমদানি করা হয় বিভিন্ন দেশ থেকে। এখানেও রয়েছে শুভঙ্করের ফাঁকি। নিয়ম হলো বিদেশ থেকে সয়া দানা আমদানি করে তা দেশে প্রক্রিয়াজাত করে ভোজ্যতেলে রূপান্তরিত করা। তাতে তেলের দাম পড়ে আরও কম। দুঃখজনক হলো, তেল ব্যবসায়ীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে আমদানি করে থাকে অপরিশোধিত তেল, পাম স্টিয়ারিং অয়েল ইত্যাদি। ভেজাল মেশানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় সেখান থেকেই। বাজারে যেসব ভোজ্যতেল পাওয়া যায় সেসবের অধিকাংশই মানহীন, ভেজালমিশ্রিত সর্বোপরি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও পুষ্টিবিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে থাকেন প্রায়ই। দুঃখজনক হলো, ভেজালের দৌরাত্ম্য কমছে না। এর পাশাপাশি তেলও বিক্রি হচ্ছে উচ্চমূল্যে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম ৫৩ শতাংশ কমলেও দেশে তার কোন প্রতিফলন নেই। কিছুদিন আগে তেল ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে প্রতি লিটার তেলের দাম পাঁচ টাকা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও কথা রাখেননি। ফলে ভোজ্যতেলের বাজারে অরাজকতা চলছেই অথচ ভোজ্যতেলে ভিটামিন এ মেশাতে সাকল্যে খরচ হয় মাত্র ২০ পয়সা। অনুরূপ হয়েছে আয়োডিনমিশ্রিত লবণের ক্ষেত্রে। ইউনিসেফ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে কয়েক বছর আগে লবণে আয়োডিন মিশানো বাধ্যতামূলক করা হলেও বাজারে প্রাপ্ত অধিকাংশ লবণ আয়োডিনবিহীন অথচ প্রতিকেজি লবণে আয়োডিন মিশাতে খরচ হয় মাত্র পঞ্চাশ পয়সা। ব্যবসায়ীদের অসততা এবং মুনাফার প্রবণতা কোন্ পর্যায়ে গেলে জনস্বাস্থ্যকে এভাবে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন সম্ভব? মূলত মুষ্টিমেয় কয়েকটি গোষ্ঠী তথা সিন্ডিকেটের কবলে দেশের খাদ্যপণ্য আমদানি ও বাজারজাতকরণ প্রায় জিম্মি হয়ে পড়ায় হয়েছে এহেন দুরবস্থা। সেক্ষেত্রে সরকার, সংশ্লিষ্ট খাদ্য, বাণিজ্য, শিল্প ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ বিএসটিআইকে আরও কঠোর মনোভাব ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। জনস্বাস্থ্যের এই বিষয়টিকে আদৌ অবহেলার দৃষ্টিতে দেখা উচিত হবে না।
×