ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গ্যাস নিয়ে ভাবনা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

গ্যাস নিয়ে ভাবনা

আকস্মিকভাবেই গ্যাসের সঙ্কট চলছে। এ কারণে একদিকে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শিল্প কারখানার উৎপাদন। অপরদিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে মারাত্মক গ্যাস সঙ্কটের কারণে আবাসিক পর্যায়ে বাড়ছে গ্যাসের জন্য হাহাকার। কোথাও কোথাও মধ্যরাতে এবং দিনের বেলায় টিম টিম করে জ্বলে চুলা। গ্যাস প্রবাহ হ্রাস পাওয়ায় বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে শিল্প-কারখানা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ বিঘিœত হচ্ছে। সঙ্কটের মাত্রা বৃদ্ধির কারণে বেড়েছে গ্যাস সিলিন্ডারের দাম। তাও অনেক ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। সিএনজি স্টেশনগুলোর অবস্থাও করুণ। আবাসিক, বিদ্যুত কেন্দ্র, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও সিএনজি স্টেশন মিলিয়ে দৈনিক গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ অনেক কমে গেছে। তাই প্রতিদিন থেকে যাচ্ছে গ্যাসের ঘাটতি। কারণ হিসেবে জানা গেছে, গ্যাস লাইনের জাতীয় গ্রিডের একটা বড় অংশে ময়লা জমে যাওয়া। তবে এই ময়লা পরিষ্কার হলেই গ্যাস সঙ্কট পুরোপুরি কাটবে এমন কথা এখনও বলা যাচ্ছে না। ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা সঙ্কট তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। জাতীয় গ্রিডের প্রায় ১০০ কিলোমিটার জুড়ে ময়লা জমার ঘটনাটি একদিনে হয়নি। পরিস্থিতি এই পর্যায়ে যেতে দেয়ার প্রশ্নের কোন জবাব মেলে না। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সাধারণত শীতকালে গ্যাসের কিছুটা সঙ্কট দেখা দেয়। উপরন্তু প্রতিদিন ৫ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি ঘাটতি থাকছে। শীতে গ্যাসের ব্যবহারও বাড়ে। পাশাপাশি গ্যাস সরবরাহ কোন না কোনভাবে বিঘিœত হয়। প্রাকৃতিক গ্যাসের সহজাত তরল হাইড্রোকার্বন জমে পাইপ লাইনে মরচে ধরে। ফলে পাইপ লাইনে গ্যাস থাকলেও তা চুলা পর্যন্ত পৌঁছায় না। ঢাকায় অধিকাংশ গ্যাস লাইন স্থাপিত হয়েছে বহু বছর আগে। গ্যাস হচ্ছে প্রাকৃতিক সম্পদ। যার রয়েছে সীমাবদ্ধতা। বর্তমান সরকার গ্যাসের উৎপাদন বাড়িয়েছে অনেক। তবে এর সঙ্গে চাহিদাও বাড়ছে প্রতিদিন। ইতোমধ্যে বহু নতুন কূপ খনন করা হয়েছে। গ্যাস অনুসন্ধানও চলছে। বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য ব্লক চিহ্নিত করে দরপত্র দেয়া হয়েছে। এসব ভবিষ্যতের কথা। কিন্তু বর্তমানে গ্যাসের অপ্রতুলতা বহুমাত্রিক সঙ্কট তৈরি করে চলেছে। অবশ্য জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘গ্যাসের সঙ্কট আছে, এটা অস্বীকার করছি না। এই সঙ্কট দূর করতে চেষ্টা করছি। সঙ্কট কাটাতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই পরিস্থিতিকে সামনে রেখে আবাসিক খাতে আগামী তিন বছরের মধ্যে আবাসিক গ্রাহকদের ৭০ শতাংশ এলপিজি ব্যবহার অথচ বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে গ্যাস বা জ্বালানি ক্ষেত্রে নতুন কৌশল ও সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে। আর এলপিজি যেন সবার জন্য হয় সাশ্রয়ী এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে সেদিকটাকে বিবেচনায় নিতে হবে। পেট্রোবাংলার তথ্যানুযায়ী ২৭৪ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলনের সক্ষমতার মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ২৭০ কোটি ঘনফুট উত্তোলন হচ্ছে। ওই গ্যাস বাসার চুলায় ব্যবহারের জন্য ব্যয় হয় প্রতিমাসে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায়। বাজারে প্রতি সিলিন্ডার ক্রয়ে ব্যয় হয় দেড় হাজার ঢাকায়। সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার যে পন্থাই অবলম্বন করুক না কেন, তা যেন জনগণকে দুর্ভোগের দিকে ঠেলে না দেয়, এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।
×