ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রওশনপন্থী কেউ উপস্থিত ছিলেন না প্রেসিডিয়াম বৈঠকে

দিনক্ষণ ঠিক নেই তবে মন্ত্রিসভা ছাড়বেন এরশাদপন্থীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দিনক্ষণ ঠিক নেই তবে মন্ত্রিসভা ছাড়বেন এরশাদপন্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দিনক্ষণ ঠিক না হলেও মন্ত্রীপরিষদ থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। রবিবার দলের চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়াম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। দলের নতুন কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব করার সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে বৈঠকে পাস হয়েছে। তবে দু’বছরের বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে রওশন পন্থীদের কেউই উপস্থিত ছিলেন না। ৩৪ প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে ছিলেন ২৪ জন। তবে দলটির নেতারা জানিয়েছেন, তাদের মধ্যে কোন বিরোধ নেই। প্রেসিডিয়ামের সিদ্ধান্ত সবাই মেনে নেবেন বলেও জানান তারা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, দলের বেশিরভাগ নেতাই এরশাদকে পারিবারিক বিরোধ মেটানোর পরামর্শ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে জাপার নীতি পরিষ্কার করারও দাবি জানিয়ে তারা বলেছেন, সরকার ও বিরোধী দলে দলের অবস্থানের কারণে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা কমছে। তারা এখন আর আমাদের বিশ্বাস করেন না। তাই সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করতে হলে শক্তিশালী বিরোধী দলের ভূমিকা নেয়ার বিকল্প নেই। জবাবে এরশাদ বলেছেন, পারিবারিক বিভক্তি থাকবে না। আমি যে সিদ্ধান্ত নেব তাই মেনে নেবেন বিরোধী দলের নেতা ও আমার স্ত্রী রওশন। তাই এ নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। রওশন আমার সিদ্ধান্তের বাইরে যাবেন না। বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানিয়েছেন, শক্তিশালী বিরোধী দল চাইলে এখন থেকে জাপার ভবিষ্যত উত্তরসূরী হিসেবে জি-এম কাদেরকে দেশবাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। এজন্য দলের চেয়ারম্যানকে জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফর ও সমাবেশ করার পরামর্শ দেন তারা। এ ব্যাপারেও একমত পোষণ করেন সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদ। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে জি এম কাদের বলেন, মিটিংয়ে যারা উপস্থিত ছিলেন, তারা সবাই মতামত দিয়েছেন, রাজনীতির স্বার্থে মন্ত্রী পরিষদ থেকে বেরিয়ে আসাটা অত্যন্ত জরুরী। মাননীয় চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তীতে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। বেলা ১১টা ৪০মিনিট থেকে প্রায় দেড় ঘণ্টা এ বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সামনে আসেন এরশাদের ভাই জি এম কাদের। যাকে কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ করায় সম্প্রতি দলে নতুন করে বিদ্রোহের মুখে পড়েন সাবেক সামরিক শাসক এরশাদ। তবে এ বৈঠককে কেন্দ্র করে বনানীর রজনীগন্ধা কার্যালয়ের চারপাশে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। রবিবার স্পীকার সম্মেলনে যোগ দেন রওশন। এরশাদের পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ছিলেন চট্টগ্রামে। শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু আছেন কিশোরগঞ্জে। তিনি সেখানে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, দল সিদ্ধান্ত নিলে তারা মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসবেন। এছাড়া স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা আছেন দেশের বাইরে। সম্প্রতি মহাসচিবের পদ থেকে ছিটকে পড়া জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু আছেন চট্টগ্রামে। তারা কেউ বৈঠকে যোগ দেননি। বিরোধীদলীয় প্রধান হুইপ, তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও কাজী ফিরোজ রশিদের মতো জ্যেষ্ঠ প্রেসিডিয়াম সদস্যরা এ বৈঠকে ছিলেন না। এর আগে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় পার্টির সভাপতিম-লী শেষবার বৈঠকে বসে, যাতে রওশনও উপস্থিত ছিলেন। ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে নাটকীয়তার এক পর্যায়ে এরশাদ বিএনপির মতোই ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলে দলের একাংশ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। তাদের মধ্যে জি এম কাদেরও ছিলেন। বর্জন করেও এরশাদ আইনের মারপ্যাঁচে ভোটে জিতে যান। জাতীয় পার্টি সংসদের বিরোধী দল হয়, এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ হন বিরোধীদলীয় নেতা। এরপর বিভিন্ন সময়ে জাতীয় পার্টির সদস্যদের মন্ত্রিসভা থেকে বেরিয়ে আসার বিষয়টি আলোচনায় এলেও পার্টির সংসদীয় দলের আপত্তির কারণে তা ধোপে টেকেনি। রওশনপন্থীদের বিরোধিতার মধ্যেই সম্প্রতি এরশাদ নিজের ভাই জি এম কাদেরকে পার্টির কো-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন, মহাসচিব পদে ফিরিয়ে আনেন দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন রুহুল আমিন হাওলাদারকে। এ নিয়ে দলে বিদ্রোহের মধ্যেও এরশাদ বলেন, তিনি তার সিদ্ধান্তে মৃত্যু পর্যন্ত অটল থাকবেন। প্রেসিডিয়াম বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, সভায় জাপার ৩৪ সভাপতিম-লীর সদস্যের মধ্যে ২৪ জন উপস্থিত ছিলেন। তারা নতুন কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। আগামী ১৬ এপ্রিল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির জাতীয় সম্মেলন হবে। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলাভিত্তিক মনিটরিং সেল গঠন করা হবে।
×