ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে শান্তির প্রত্যাশায় শুরু জাতীয় পথনাট্যোৎসব

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে শান্তির প্রত্যাশায় শুরু জাতীয় পথনাট্যোৎসব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সব সময়ই প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে নিয়েছে পথনাটক। অশুভ আর অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সোচ্চার থেকেছে এই শিল্পমাধ্যমটি। প্রতিবাদের পাশাপাশি মানবকল্যাণেও উচ্চকিত এই মাধ্যম। তাই কল্যাণমূলক সমাজ কিংবা রাষ্ট্র গঠনে রয়েছে এই শিল্পের বিশেষ ভূমিকা। সেই সূত্রে জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার উচ্চারণ আর শান্তির সপক্ষে বার্তা দিয়ে শুরু হলো জাতীয় পথনাট্যোৎসব। এবারের সেøাগান ‘জঙ্গীবাদ রুখে দাঁড়াও, বিশ্ব শান্তির পতাকা উড়াও’। ঢাকাসহ সারাদেশের ৪৪টি নাট্য সংগঠনের পথনাটক দিয়ে সাজানো হয়েছে এ বছরের উৎসব। রবিবার শীতের বিকেলে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন আয়োজিত আট দিনব্যাপী উৎসবের সূচনা হয়। উৎসব প্রাঙ্গণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে একগুচ্ছ বর্ণিল বেলুন উড়িয়ে উৎসব উদ্বোধন করেন অতিথিরা। পথনাটক পরিবেশনার পাশাপাশি বাঁশির সুরে শিল্পীর ছবি আঁকা, সঙ্গীত পরিবেশনা ও গানের সুরে গণজাগরণমূলক কোরিওগ্রাফির উপস্থাপনায় বর্ণিল হয়ে ওঠে প্রথম দিনের আয়োজন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন অতিথিরা। এর পর শহীদদের স্মরণে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। উদ্বোধনী আনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউটের (আইটিআই) সাম্মানিক সভাপতি নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার ও চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেনÑ ফেডারেশনের সভাপতিম-লীর সদস্য ঝুনা চৌধুরী, সৈয়দ দুলাল, সুচরিত দাস খোকন ও পাপিয়া সেলিম। সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আকতারুজ্জামান। উৎসবের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ফেডারেশনের এ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল চন্দন রেজা। ঘোষণাপত্রে বলা হয়, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রচেষ্টারত মুক্তিযুদ্ধের সরকার আন্তর্জাতিক আদালত গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যখন একটার পর একটা বিচারকার্য সম্পন্ন হচ্ছে, তখনই আবার দেশীয় দোসরদের নিয়ে সারাদেশে একাত্তরের মতোই ধ্বংসযজ্ঞ চালায় জঙ্গীবাদী গোষ্ঠী। ওরা জাতীয় সম্পদ নষ্টসহ সাধারণ মানুষ পুুড়িয়ে মেরেছে। অথচ তথাকথিত কিছু চাটুকার ও বুদ্ধিজীবী যৌক্তিকতা দাঁড় করাচ্ছে সহিংসতার পক্ষে। সেই সঙ্গে অতিসম্প্রতি মুক্তিযুুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়েও কটূক্তি করেছেন কয়েকজন রাজনীতিক। আমরা ক্ষোভের সঙ্গে এমন কটূক্তির বিরুদ্ধে ঘৃণা জানাই, ধিক্কার জানাই, প্রতিবাদ জানাই। প্রতিবাদ জানাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাম্প্রদায়িক অপশক্তি কর্তৃক সংঘটিত তা-বের। ২ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ফেডারেশনের উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হবে। স্বাগত বক্তব্যে আকতারুজ্জামান বলেন, সাম্প্রদায়িক শক্তি সংস্কৃতির শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহিংসতা ঘটিয়েছে। এই ধর্মান্ধ অপশক্তিকে নিশ্চিহ্ন না করা পর্যন্ত অর্জিত হবে না কাক্সিক্ষত অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। নিশ্চিত হবে না বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীর শান্তিপূর্ণ অবস্থা। বক্তারা বলেন, নাটকের মধ্য দিয়ে অতীতে সকল অন্যায়-অবিচার ও কূপম-কতাকে ঘৃণা জানানো হয়েছে। এবারও নাটকের মধ্য দিয়ে জঙ্গীবাদসহ সকল যড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে। একই সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে পরাজিত করে ছড়িয়ে দেয়া হবে শান্তির বার্তা। উদ্বোধনী আয়োজনের সূচনা হয় সুবচন নাট্য সংসদের শিল্পীদের পরিবেশিত তিনটি গানের মাধ্যমে। গাওয়া হয় বাউলসাধক শাহ আবদুল করিমের গান ‘বসন্ত বাতাসে সই গো’, ‘ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপক্সক্ষী নাও’ ও ‘কাছে থাকো ভালো থাকো যাইও না দূরে’। গান শেষে কোরিওগ্রাফির আশ্রয়ে একাত্তরের রণাঙ্গনের সম্মুখযুদ্ধ ও মুক্তির উল্লাস শ্রোতা-দর্শকদের সামনে তুলে ধরে লোক নাট্যদল (সিদ্ধেশ্বরী)। দলটির কোরিওগ্রাফির সূচনা হয় ‘একাত্তরের মুক্তি সেনা জাগো জাগো’ গানের মাধ্যমে। শেষ হয় ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা’ গানের মধ্য দিয়ে। এছাড়াও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় আরও অংশ নেয় মহাকাল নাট্য সম্প্রদায় ও লোক নাট্যদল (বনানী)। উদ্বোধনী কথনের আগে ছিল বিশেষ একটি পর্ব। মনিরুজ্জামানের বাঁশির সুর ও সোবহানের ঢোলের বোলে ছবি আঁকেন চিত্রশিল্পী কালিদাস কর্মকার। ১৫ মিনিটের সুর-বাদ্যের লহরার সঙ্গে তাল মিলিয়ে ক্যানভাস রাঙিয়ে তোলেন কালিদাস। দর্শকদের মাঝে ছড়িয়ে দেন মুগ্ধতার বীজ। উদ্বোধনীর আনুষ্ঠানিকতায় পরিবেশিত হয় দুটি পথনাটক। মমতাজউদদীন আহমদ রচিত ও হামিদুর রহমান পাপ্পু নির্দেশিত স্বাধীনতা সংগ্রাম নামের নাটক পরিবেশন করে পদাতিক নাট্য সংসদ টিএসসি। প্রাচ্যনাট পরিবেশন করে মোহাম্মদ রফিকের ভাবনা ও প্রয়োগে নির্মিত পথনাটক পুতুল মানব। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল চারটা ছয়টি করে নাটকের প্রদর্শনী হবে। উৎসবের দ্বিতীয় দিন আজ সোমবার সংলাপ থিয়েটার পরিবেশন করবে ‘খ্যাপা পাগলার প্যাচাল’, বাতিঘর ‘গরু’, নাট্যভূমি ‘কানার হাটবাজার’, বহুবচন থিয়েটার ‘জয়বাংলা’, ইউনিভার্সেল থিয়েটার ‘ছাড়পত্র’ ও ঝিনাইদহের বনলতা নাট্য সংসদ ‘জন্মান্ধ’। কথক আন্তর্জাতিক কবি সম্মেলন ॥ কথক বাংলাদেশের উদ্যোগে রবিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হলো কথক আন্তর্জাতিক কবি সম্মেলন। কথক আন্তর্জাতিক পোয়েট সামিট শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য কবিগণ অংশগ্রহণ করেন। কবিতা নিয়ে বিশ্বের এই শীর্ষস্থানীয় সম্মেলনে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় কবি ছাড়াও নবীন কবিরা অংশগ্রহণ করেন। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের মোট ৯ জন বিদেশী কবি প্রতিনিধিত্ব করেন। এছাড়া বাংলাদেশের ৬ জন জনপ্রিয় কবি এবং অনেক সাহিত্যিক ও শিল্পী উপস্থিত ছিলেন।
×