ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ধরপাকড় করেও থামানো যাচ্ছে না সাইবার ক্রাইম

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ধরপাকড় করেও থামানো যাচ্ছে  না সাইবার ক্রাইম

শংকর কুমার দে ॥ বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হওয়ার পর অন্তত দশবার হুমকি দেয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেসবুকে হত্যার হুমকির বিষয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এ ছাড়াও মন্ত্রী-এমপি, শিক্ষক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাসহ কেউই সাইবার ক্রাইমের আওতার হুমকি থেকে বাদ যাচ্ছে না। ধরপাকড় করেও থামানো যাচ্ছে না সাইবার ক্রাইমের আওতার হুমকিসহ নানা ধরনের অপরাধ। একের পর এক সাইবার হুমকি দেয়া হলেও দু’-একটি ঘটনা ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে শনাক্ত হচ্ছে না হুমকিদাতা সাইবার ক্রাইমের অপরাধীরা। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া স্বাধীনতা যুদ্ধের মীমাংসিত ৩০ লাখ শহীদের সংখ্যা নিয়ে বক্তব্য দেয়ার প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা অনুমোদন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিএনপি চেয়ারপার্সনের রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা অনুমোদনের পর এক দিনেই অন্তত দশবার হুমকি দেয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে। শনিবার হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত জেলা কমিটির বিশেষ সভায় সাইবার ক্রাইম প্রসঙ্গ টেনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেছেন নিজেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মোবাইল ফোনে আমাকেও দিনে দশবার হুমকি দেয়া হয়। শনিবার হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত জেলা কমিটির বিশেষ সভায় সাইবার ক্রাইম প্রসঙ্গ টেনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, এখানে (হবিগঞ্জে) আসার আগেও আমাকে হুমকি দেয়া হয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে আমার মনে হয়, সে জন্যই আমাকে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত অন্তত ১০ বার হুমকি দিয়ে ফেলেছে। সাইবার ক্রাইম দমনের জন্য আমাদের নজর রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানান, সাইবার অপরাধের শাস্তির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। সাইবার অপরাধের শাস্তি তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর ৫৬ ধারার ২ এর উপ-ধারায় এবং তথ্য প্রযুক্তি আইন ২০০৬-এর ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে, বলা হয়েছে : যদি কেউ এমন কোন কম্পিউটার সার্ভার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশ করার মাধ্যমে এর ক্ষতিসাধন করেন- যার তিনি মালিক বা দখলদার নন তাহলে তার এই কাজ হবে একটি হ্যাকিং অপরাধ। যদি কোন ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারে বা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যের মাধ্যমে কোন ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করা হয়, তাহলে তার এই কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে। কোন ব্যক্তি এই অপরাধ করলে তিনি অনূর্ধ ১০ বছর কারাদ-ে দ-িত হবেন। এক কোটি টাকা অর্থদ-েও দ-িত হতে পারেন বা উভয় দ- দেয়া হতে পারে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাইবার ক্রাইমের মধ্যে এখন সবেচেয় বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ‘ফেসবুক ক্রাইম’কে। সাইবার ক্রাইম প্রতিরোধে ইতোমধ্যেই সরকারের বিভিন্ন বিভাগে দক্ষ জনশক্তির সমন্বয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। ফেসবুকে হুমকি, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ ও জঙ্গী সংগঠনের কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত থাকায় অর্ধশত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে বাঁশের কেল্লার এডমিন জিয়া উদ্দিন ফরহাদ, শিবিরের কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ শাখার সভাপতি, প্রধানমন্ত্রীর ছবি বিকৃতি করার দায়ে রানা, আইএস জঙ্গী কানেকশনে শাকিব-বিন-কামাল, আমিনুল ইসলাম বেগ ও আব্দুল্লাহ আল গালিবকে গ্রেফতার করা হয়।
×