ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা ঘোষণা

দক্ষিণ এশিয়াকে এক পরিবারের মতো একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

দক্ষিণ এশিয়াকে এক পরিবারের মতো একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার

সংসদ রিপোর্টার ॥ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা, অংশীদারিত্ব, সুশাসন, অন্তর্ভুক্তি, অংশগ্রহণ, অধিকার ও নিরাপত্তার ওপর জোর দিয়ে ‘ঢাকা ঘোষণা’-এর মাধ্যমে রবিবার শেষ হলো দুইদিনব্যাপী দক্ষিণ এশীয় স্পীকারদের প্রথম শীর্ষ সম্মেলন। সাম্প্রতিক সময়ে বিধ্বংসী রূপ নেয়া সন্ত্রাসবাদকে নির্মূলে এ অঞ্চলের দেশগুলোকে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। পুরো বিশ্বের সঙ্গে একাত্ম হয়ে দক্ষিণ এশিয়াকে একটি পরিবার হিসেবে একবিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করা হয় সম্মেলনে। পাশাপাশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র চর্চায় বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ায় প্রশংসা করা হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো-ফ্রি কিডসের সহযোগিতায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন’ শীর্ষক দুইদিনব্যাপী সম্মেলনের শেষ দিন রবিবার প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইপিইউ এর সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শ্রীলংকার পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পীকার থিলাঙ্গা সুমাথিপলা, আফগানিস্তানের ওলেসি জিগরার স্পীকার আব্দুল রউফ ইব্রাহিম, ভুটানের জাতীয় সংসদ সংগুর স্পীকার জিগমে জাংপো, মালদ্বীপের মজলিসের স্পীকার আব্দুল্লাহ মাসেহ মোহামেদ, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ভারতের লোকসভার স্পীকার সুমিত্রা মহাজন। সম্মেলনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, সচিব, মিশন প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। বছরে একবার এই ফোরামের বৈঠকের বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করা হয়। সম্মেলনের আলোচনায় পাঁচটি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়। সেগুলো হচ্ছে- দক্ষিণ এশিয়ায় এসডিজির গুরুত্ব, এসডিজি বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি পর্যালোচনায় পার্লামেন্টগুলোর ভূমিকা, এসডিজির স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি সংক্রান্ত লক্ষ্য-৩ এর অধীন সুযোগ, তামাক মহামারীর বর্তমান অবস্থা ও নিয়ন্ত্রণে কৌশল নির্ধারণ, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে তামাকের ব্যবহার কমিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় নীতিকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন। ঢাকা ঘোষণায় এসডিজি অর্জনে সুশাসনকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়। জোর দেয়া হয় জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও সংসদের কার্যকর ভূমিকা পালনের ওপর। ঘোষণায় বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর পার্লামেন্টকে জাতীয় পর্যায়ে এসডিজি অর্জনে কী কী বিষয়ে আলোকপাত করা জরুরী সে বিবেচনায় পরামর্শ দেয়া প্রয়োজন। লক্ষ্য অর্জনে কী প্রক্রিয়ায় আইনী সমর্থন দেয়া উচিত বা আইন ও নীতিমালা করা ও প্রয়োগ করা প্রয়োজন তা নিশ্চিত করতে হবে পার্লামেন্টকেই। এসডিজি অর্জনে সরকারের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে কী ধরনের অবকাঠামো প্রয়োজন কোন আকারে তা কার্যকর হবে সেটাও পার্লামেন্টের বিভিন্ন কমিটির সভা ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে তুলে ধরতে হবে। পার্লামেন্টকে নিশ্চিত হবে যে এসডিজি অর্জনে লিঙ্গ সাম্যতা রেখে বাজেট প্রণয়ন হচ্ছে কী না। উন্নয়ন কর্মকা-ের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় সঠিক ডাটার মাধ্যমে কাজের অগ্রগতি ও মূল্যায়ন হচ্ছে কী না সেটা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। লক্ষ্য রাখতে তা যেন জেন্ডার সংবেদনশীল হয়। বিশেষ কিছু বিষয়ে পরিবেশগত ঝুঁকির ক্ষেত্রে পার্লামেন্টকে ঝুঁকিকে সুযোগে রূপান্তরের পথ বের করার উপায় খুঁজতে হবে। এসডিজির স্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি সংক্রান্ত লক্ষ্য-৩ এর অধীন সুযোগকে কাজে লাগাতে সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। প্রতিরোধ সক্ষম রোগ বালাই ২০৩০ সালের আগে নির্মূল করার জন্য মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসে পার্লামেন্টকে আরও সক্রিয় হতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, তামাকজাত পণ্যের প্রাপ্যতা কমানো ও তামাকজাত পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর ওপর সক্রিয় হতে হবে পার্লামেন্টকে। সমাপনী ভাষণে শ্রীলঙ্কার ডেপুটি স্পীকার থিলাঙ্গা সুমাথিপলা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, এসডিজি অর্জনে একটি দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্রের চর্চা থাকা জরুরী। একটি রাজনৈতিক দল কেবল তা করতে পারবে না। এজন্য প্রয়োজন সম্মিলিত কাজ। তিনি এসডিজি অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। আফগানিস্তানের ওলেসি জিগরার স্পীকার আব্দুল রউফ ইব্রাহিম বলেন, প্রত্যেকটি দেশের নিজস্বতা রয়েছে। একেকটি দেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিও একেক রকম। তাই এসডিজি অর্জনে কৌশল নির্ধারণেও বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ একটি বড় সমস্যা। এ অবস্থা উত্তরণে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ভুটানের জাতীয় সংসদ সংগুর স্পীকার জিগমে জাংপো তার ভাষণে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলে উপস্থিতদের মুগ্ধ করেন। তিনি এসডিজি অর্জনে জনপ্রতিনিধিদের কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। মালদ্বীপের মজলিসের স্পীকার আব্দুল্লাহ মাসেহ মোহামেদ বলেন, পার্লামেন্টই পারে এসডিজি অর্জনে সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা রাখতে। সম্মেলন শেষ হচ্ছে। তবে সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত লক্ষ্য, প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার পালনে আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে সব সময়। জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এসডিজির ১৭টি উদ্দেশ্য এবং ১৬৯টি লক্ষ্য পূরণে সচেষ্ট হতে হবে। এ সম্মেলন এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করেছে যেখান থেকে এসডিজি অর্জনে একটি রোডম্যাপ এসেছে। সম্মেলন থেকে এসডিজি অর্জনে যে আলো এসেছে সে আলো যেন প্রত্যেকটি ব্যক্তির জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে সে লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছাও প্রয়োজন। বাংলাদেশ মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, নারী শিক্ষা, কমিউনিটি স্বাস্থ্য সেবা, ১০ টাকায় কৃষকদের ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলাসহ স্যানিটেশন ব্যবস্থায় উদাহরণ সৃষ্টি করার মতো উন্নয়ন ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, স্ব স্ব দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সহযোগিতা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে। সেক্ষেত্রে তিনি এসডিজি অর্জন নিশ্চিত করতে নিজ নিজ দেশের সংসদ সদস্যদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এবং সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদারের মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যু ও লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানান। সম্মেলনে ভারতের লোকসভার স্পীকার সুমিত্রা মহাজন শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। তার প্রমাণ দেশটির প্রধানমন্ত্রী, স্পীকার এবং বিরোধী দলীয় নেতা নারী। একটি দেশের নারী উন্নয়নে এটা তাৎপর্য বহন করে।
×