ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করলে শাস্তি- নতুন আইন হচ্ছে ॥ আইনমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করলে শাস্তি- নতুন আইন হচ্ছে ॥ আইনমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ মহান মুক্তিযুদ্ধকে কোন ব্যক্তি অবমাননা করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মুক্তিযুদ্ধ অবমাননা আইন নামের নতুন একটি আইন প্রণয়নের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। এছাড়া সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে জামায়াতের বিচার করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) এ্যাক্ট, ১৯৭৩-এর সংশোধনের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। রবিবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে সরকারী দলের সংসদ সদস্য ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল এবং বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির পৃথক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক। মন্ত্রী জানান, খুব দ্রুতই আইনটি প্রণয়ন সরকারের উদ্দেশ্য। তবে সুনির্দিষ্টভাবে সময় বেঁধে দিতে পারব না। মন্ত্রী জানান, ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধ ও তৎকালীন সময়ের ইতিহাস বিকৃত করার প্রবণতা কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন রাজনীতিবিদদের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে কোন ব্যক্তি যদি মুক্তিযুদ্ধ এবং তৎকালীন সময়ের ইতিহাস বা স্বীকৃত ঘটনাবলী সম্পর্কে অযাচিত বা অসত্য তথ্য পরিবেশন করেন বা এ সম্পর্কে কোন অসত্য বক্তব্য প্রদান করেন বা বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রকাশ করেন অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে মহান মুক্তিযুদ্ধকে কোন ব্যক্তি যদি অবমাননা করেন, তা হলে উক্ত ব্যক্তির কর্মকা-কে অপরাধ গণ্য করে মুক্তিযুদ্ধ অবমাননা আইন প্রণয়নের বিষয়টি সরকারের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে। জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমানের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী পুনর্বার বলেন, সংবিধানের কোন অনুচ্ছেদে অবসর গ্রহণের পর কোন বিচারপতি রায় লিখলে তা অসাংবিধানিক হবে- তা লেখা নেই। আর সুপ্রীমকোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের রুলস অনুযায়ী অবসরের পর রায় লেখা বেআইনীও নয়। সরকারী দলের সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, প্রতিটি অপরাধের বিচার নির্দিষ্ট আইন দ্বারা নির্ধারিত। আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে যারা নির্বিচারে মানুষ হত্যা করেছে, তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে। এ ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িতদের বিচারে সরকার বদ্ধপরিকর। এ ধরনের অপরাধের বিচারকার্য দ্রুত শেষ করা হবে মর্মে আশা করা যায়। মেজর জেনারেল (অব) সুবিদ আলী ভুঁইয়ার প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, বর্তমান সরকার দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে দলমত নির্বিশেষে সকলকে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার নিমিত্তে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। দারিদ্র্য/অসহায় জনগোষ্ঠীকে আইনের সহায়তা দেয়ার জন্য ৬৪টি জেলায় লিগ্যাল এইড অফিস স্থাপন করা হয়েছে। মন্ত্রী জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে এবং এর বিচার কার্যক্রম চলমান রয়েছে। দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির লক্ষ্যে উচ্চতর ও নিম্ন আদালতে বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও ঢাকায় একটি সাইবার ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করা হয়েছে। তিনি জানান, বর্তমানে বিশেষভাবে আলোচিত মানবপাচার রোধে দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরে ট্রাইব্যুনালে গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। উপরন্তু, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য মানবাধিকার কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট অপরাপর সংস্থাও এ কার্যে ব্যাপৃত রয়েছেন। তিনি বলেন, এসব কার্যক্রম গ্রহণ করার ফলে সকল শ্রেণীর মানুষের ন্যায় বিচার প্রাপ্তির সুবর্ণ সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে এবং সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থা গ্রহণে বদ্ধপরিকর। সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী জানান, সাক্ষী সুরক্ষা আইনের খসড়া বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আমরা আশাবাদী, খুব শীঘ্রই খসড়াটি চূড়ান্ত করে অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে।
×