ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ এশীয় স্পীকারদের সম্মেলনের শেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী

এসডিজি অর্জনেও বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকায় থাকবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এসডিজি অর্জনেও বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকায় থাকবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। একইভাবে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) বাস্তবায়নেও বাংলাদেশ থাকবে অগ্রণী ভূমিকায়। এই পথযাত্রায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি ন্যায়ভিত্তিক, সমৃদ্ধ, শান্তিপূর্ণ প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। রবিবার দক্ষিণ এশীয় স্পীকারদের প্রথম শীর্ষ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ অঙ্গীকার প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় তিনি এসডিজি অর্জনে সম্মেলনে গৃহীত ‘ঢাকা ঘোষণা’কে স্বাগত জানান এবং অংশগ্রহণকারী স্পীকারদের ঘোষণা ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থন জানান। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ও ক্যাম্পেইন ফর টোবাকো-ফ্রি কিডসের সহযোগিতায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন’ শীর্ষক দুদিনব্যাপী সম্মেলনের শেষ দিন রবিবার প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা আমাদের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য আমাদের ইচ্ছাশক্তি ও সম্পদকে নিবেদন করি। এ অঞ্চলের স্পীকারদের নেতৃত্বে এবং সংসদ সদস্যদের প্রাজ্ঞ পরামর্শে এসডিজি বাস্তবায়নে আমাদের পথচলা সুন্দর ও সফল হোক।’ আইপিইউর সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শ্রীলংকার পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পীকার থিলাঙ্গা সুমাথিপলা, আফগানিস্তানের ওলেসি জিগরার স্পীকার আব্দুল রউফ ইব্রাহিম, ভুটানের জাতীয় সংসদ সংগুর স্পীকার জিগমে জাংপো, মালদ্বীপের মজলিসের স্পীকার আব্দুল্লাহ মাসেহ মোহামেদ, বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ভারতের লোকসভার স্পীকার সুমিত্রা মহাজন। প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের উচ্চাভিলাষী ২০৩০ (এসডিজি ২০১৬-২০৩০) এজেন্ডা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ এমডিজি বাস্তবায়নের প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে এবং এমডিজির সাফল্যের ওপর ভর করে এসডিজি বাস্তবায়নে প্রস্তুত হচ্ছে। এজন্য দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের প্রয়োজন। এমডিজি পূরণে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। দেশে অতি দরিদ্রের হার অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে। শহর ও গ্রামীণ দুই ক্ষেত্রেই শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহ এবং পয়ঃসেবার মতো মৌলিক বিষয়ে অনেক সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ২০৩০ এজেন্ডা হচ্ছে একটি সম্মিলিত পথ পরিক্রমা। এর বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারী-বেসরকারী, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সব উৎস থেকে বেশি পরিমাণে সম্পদের সরবরাহ প্রয়োজন। বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার যেমন-নারী-পুরুষ, নাগরিক সমাজ, কমিউনিটি, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, যুবসমাজ ইত্যাদির সঙ্গে অংশীদারিত্ব, আলোচনা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে এসডিজি বাস্তবায়নের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার পার্লামেন্টগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি গড়ে তোলার ওপর জোর দিতে হবে। গণতন্ত্রের প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসাবে এসডিজি বাস্তবায়নে সংসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে এসডিজির পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য স্পীকার ও সংসদ সদস্যদের প্রয়োজনীয় বাজেট অনুমোদনের আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ অচিরেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও গত ৭ বছর ধরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপর ছিল। গত এক দশকে রফতানি আয় ৩ গুণের বেশি বেড়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে প্রায় ৮ গুণের কাছাকাছি। বিশ্বব্যাংকের মান অনুযায়ী, গত বছর বাংলাদেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। বর্তমান সরকার দেশকে ২০১২ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের জ্ঞানভিত্তিক ডিজিটাল অর্থনীতির দেশ হিসাবে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। এরপর আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করা। এভাবেই আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই। আমরা এমডিজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বকে যেমন তাক লাগিয়ে দিয়েছি, তেমনি এসডিজি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও আমরা অগ্রণী ভূমিকা পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করা হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে আইন প্রণয়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। প্রথম পদক্ষেপে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবহার করে একটি তহবিল গঠন করা হবে। এর মাধ্যমে দেশব্যাপী জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী নেয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক নীতি গ্রহণ করা হবে। এর উদ্দেশ্য হবে দেশে তামাকজাত পণ্যের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস এবং একইসঙ্গে সরকারের শুল্ক আয় বৃদ্ধি করা। সর্বোপরি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে সব ধরনের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, উন্নয়ন ও সুস্বাস্থ্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। তামাকজনিত রোগ বালাই এবং অসংক্রামক রোগের প্রকোপ হ্রাসে এ অঞ্চলের এবং এর বাইরে সংসদকে তৎপর হতে হবে।
×