ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাধীনতার পর গঠিত আঠারটি কমিশনের কোনটিরই কার্যক্রম আলোর মুখ দেখেনি ;###;উপরন্তু প্রশাসনের ভারসাম্য নষ্ট করেছে অপরিকল্পিত কিছু সিদ্ধান্ত ;###;ক্রমান্বয়েই ঝিমিয়ে পড়ছে প্রশাসনযন্ত্র

বদলায় না আমলাতন্ত্র ॥ সংস্কারের সব উদ্যোগই থমকে যায়

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বদলায় না আমলাতন্ত্র ॥ সংস্কারের সব উদ্যোগই থমকে যায়

তপন বিশ্বাস ॥ ঔপনিবেশিক ধাঁচে গড়া আমলাতন্ত্র দিয়েই চলছে দেশ। পশ্চাতমুখী এই প্রশাসনিক ব্যবস্থার সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হলেও বারবার তা থমকে গেছে। আধুনিক গণমুখী আমলাতন্ত্র গড়ে না ওঠায় ক্রমান্বয়ে ঝিমিয়ে পড়ছে প্রশাসনযন্ত্র। স্বাধীনতার পর ১৮টি কমিশন/কমিটি গঠন এবং প্রশাসনিক সংস্কারের নানাবিধ উদ্যোগ নেয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি কখনও। পাশাপাশি অপরিকল্পিত কিছু ব্যাচ প্রশাসনের ভারসাম্য নষ্ট করেছে। নিয়োগবিধি লঙ্ঘন করে কোন কোন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে শীর্ষপদে বসানো হয়েছে অতীতে বহুবার। এখনও চলছে। এতে মাথাভারি হয়ে পড়েছে জনপ্রশাসন। ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ায় প্রশাসনের কর্মকর্তারা পদোন্নতি ও ভাল পোস্টিং পেতে রাজনৈতিক আশ্রয় খুঁজেই চলেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক সরকারও এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রশাসনকে কুক্সিক্ষগত করার অপচেষ্টা করেছে। এতে প্রশাসন যেমন ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। তেমনি রাষ্ট্র ও দেশের জনগণও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েই চলেছে। এ ব্যাপারে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. সা’দত হুসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রশাসনিক সংস্কারের উদ্যোগ অনেক দিন ধরে চলে আসছে। কিন্তু তা হচ্ছে না। সংস্কারের লক্ষ্যে স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত ১৮টি কমিটি/কমিশন গঠন করা হয়েছে। কোন উদ্যোগই সফল হয়নি। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি আমলাদেরও সদিচ্ছা থাকতে হবে। তবে তোড়জোড় করে সংস্কার করতে গেলে মূল কাঠামোও পরিবর্তন হতে পারে। লক্ষ্য স্থির করে দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে সংস্কার করতে হবে। প্রশাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রশাসনযন্ত্রই একটি দেশের প্রধান চালিকা শক্তি। যে দেশের প্রশাসন যত শক্তিশালী ও স্বচ্ছ, সে দেশ তত গতিশীল। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের প্রশাসনযন্ত্রকে গতিশীল করতে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও তা বাস্তবে রূপলাভ করেনি। শীর্ষ কর্মকর্তারাও এড়িয়ে গেছেন বারবার। এ নিয়ে কোন সরকারকেও তেমন মাথা ঘামাতে দেখা যায়নি। বরং বিভিন্ন সময়ে সরকারের হটকারী সিদ্ধান্ত প্রশাসনযন্ত্রকে বিকল করার কাজ তরান্বিত করেছে। এর সঙ্গে ব্যক্তি সুবিধা নিতে যুক্ত থেকেছে বিভিন্ন সময়ে কর্মকর্তারা। প্রশাসনের ভবিষ্যত নিয়ে কারও কোন মাথা ব্যথা নেই। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাচে কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ সকল নিয়োগে সরকারের সুদূরপ্রসারি কোন লক্ষ্যই ছিল না। আর এর দায়দায়িত্ব বহন করতে হচ্ছে রাষ্ট্র ও দেশের জনগণকে। মূলত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ দেশ শাসনের লক্ষ্যে ঔপনিবেশিক কাঠামোর আমলাতন্ত্র গড়ে তোলে। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারণ রাজনৈতিক সরকারের নামে হলেও প্রকৃত অর্থে মূল কাজটি করে থাকেন আমলারাই। এর প্রধান কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক সরকারের মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যানসহ রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রায় সর্বাংশে আমলানির্ভর। রাজনৈতিক কর্মকা-ে অধিকতর মনোনিবেশের কারণে তারা প্রশাসনিক কাজে সময় কম ব্যয় করেন। কালক্রমে ব্রিটিশদের অসৎ উদ্দেশ্যে তৈরি করা আমলাতন্ত্র স্বাধীন বাংলাদেশে আরও শক্ত খুঁটির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক শক্তির নিয়ন্ত্রক হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গতিশীল প্রশাসন গঠনের কাজে হাত দিয়েছিলেন। এতে আমলাদের স্বার্থহানি এবং ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। ঠিক এ রকম সময়ে পঁচাত্তরের বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটানো হয় এবং সংস্কার কাজ থামিয়ে দেয়া হয়। ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্র ॥ বাংলাদেশের বর্তমান জনপ্রশাসন ব্রিটিশ শাসকের তৈরি জনপ্রশাসনের উত্তরাধিকার বহন করছে। দেশ ভাগের পর পাকিস্তান আমলেও জনপ্রশাসনে পরিবর্তন আনা যায়নি। ইস্ট ইন্ডিয়া প্রশাসনিক কাজ শুরু করার সময় তেমন কোন প্রশাসনিক কাঠামো ছিল না। তবে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (১৭৬৫-১৮৫৮) আমলেই। পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ রাজ সরাসরি ভারতবর্ষের ক্ষমতা গ্রহণ করলে (১৮৫৮-১৯৪৭) ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র গঠন ও রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সিভিল সার্ভিস গঠন ও উন্নয়ন জরুরী হয়ে পড়ে। ১৭৮৬ সালের পূর্ব পর্যন্ত ‘সুপারভাইজার’ নামে অভিহিত কোম্পানির স্থানীয় বাণিজ্যিক অফিসারদের মাধ্যমে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভূখ-গত মালিকানা পরিচালিত হতো। কোম্পানির সিভিল সার্ভেন্টদের বলা হতো কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভেন্ট। এ সার্ভিসের সদস্যরা ভারতে চাকরির জন্য ভারত সচিবের সঙ্গে চুক্তিতে আবদ্ধ হতেন বিধায় এ চাকরির নাম হয়েছিল কভেন্যান্টেড সিভিল সার্ভিস (সিসিএস)। ফোর্ট উইলিয়ামের প্রেসিডেন্সি কাউন্সিলের সভাপতি রবার্ট ক্লাইভ দেওয়ানি বিষয়ে বঙ্গদেশে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হয়ে দাঁড়ান। নায়েব দেওয়ান ও কোম্পানির মধ্যে ক্ষমতার ভাগাভাগির ভিত্তিতেই প্রারম্ভিক পর্যায়ের সিভিল সার্ভিস গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছিলেন ক্লাইভ। ক্লাইভের এ ডায়ার্কি বা দ্বৈতশাসনের ফলে বাংলায় ১৭৬৮-৬৯ সালের মহামন্বন্তর সৃষ্টি হয়। ১৭৭২ সালে ডায়ার্কি বা দ্বৈতশাসনের অবসান হয়। এর কিছুদিন পর ১৭৮৪ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পিটস ইন্ডিয়া এ্যাক্ট পাস হয়। পিটস আইনে নতুন সাম্রাজ্যের ক্ষমতা ও দায়িত্ব নির্দেশ করে কাউন্সিলের গবর্নর জেনারেল হিসেবে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধে পরাজিত অথচ জনপ্রিয় জেনারেল লর্ড কর্নওয়ালিসকে নিয়োগ করা হয়। ১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস ৪৮টি রেগুলেশন জারি করেন, যা একত্রে ‘কর্নওয়ালিশ কোড’ নামে অভিহিত। ১৭৯৩ সালে নতুনভাবে বিন্যাস করা আমলাতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য ছিল প্রশাসন থেকে বাণিজ্যের আলাদাকরণ, আকর্ষণীয় বেতন এবং দেশীয়দের প্রশাসন থেকে বাদ দেয়া। এই রেগুলেশনের মাধ্যমে একচ্ছত্র জেলা প্রশাসনের জন্ম হয়েছিল। ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষাগুলো ১৯২২ সাল থেকে যুগপৎ ইংল্যান্ড ও ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়া শুরু হয়। আইসিএস সদস্যদের বলা হতো ‘স্বর্গীয়’ সন্তান। যদিও ১৮৯৩ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট আইসিএস পরীক্ষা একই সঙ্গে ইংল্যান্ড ও ভারতে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু স্বর্গীয় সন্তানরা ১৯২২ সালের আগ পর্যন্ত সে ব্যবস্থা চালু করতে দেয়নি। দেশ ভাগের পর আমলাতন্ত্র ॥ ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া নিপীড়নমূলক জনপ্রশাসনই বহাল থাকে। দেশ ভাগের পর সিভিল সার্ভিসের ভারত অংশে ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস থাকলেও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে করা হয় সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তান (সিএসপি)। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সিভিল সার্ভিস আমলাতন্ত্রের এলিটদেরই প্রতিনিধিত্ব করত। মহকুমা, জেলা ও সচিবালয়ের সর্বোচ্চ পদগুলোতে তারাই নিয়োজিত থাকতেন। রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ এবং সামরিক নেতৃত্ব কর্তৃক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের ফলে রাজনীতিকদের ওপর আমলাতন্ত্রের কর্তৃত্ব ও প্রভাব প্রবলতর হয়। আমলাদের মনোযোগ পাওয়ার জন্য তৎকালীন এক প্রধানমন্ত্রী (লিয়াকত আলী) আমলাদের জনগণের মনিব হিসেবে আখ্যায়িত করতেন। অথচ ১৯৪৮ সালে জওহরলাল নেহরু ভারতের আইসিএসদের জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন। অডিট সার্ভিসের ডাকসাইটে আমলা গোলাম মোহাম্মদ পাকিস্তানের প্রথম অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত হন। একই সার্ভিসের অপর সদস্য চৌধুরী মোহাম্মদ আলী পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের (সিএসপি) সবচেয়ে প্রভাবশালী সচিব হন। পরবর্তী সময়ে এই আমলার জন্য সরকারকে সেক্রেটারি জেনারেলের পদ সৃষ্টি করতে হয়েছিল এবং তার অবসরের পর এ পদটি বিলুপ্তও হয়েছিল। লিয়াকত আলী খান খুন হওয়ার দু’বছর পর ১৯৫৩ সালে গোলাম মোহাম্মদ পাকিস্তানের গবর্নর জেনারেল এবং চৌধুরী মোহাম্মদ আলী হয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। প্রায় এক বছর পর গোলাম মোহাম্মদের জায়গায় গবর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন ভারতীয় পুলিশ সার্ভিসের সদস্য ইস্কান্দার মির্জা। তাদের সরাসরি আহ্বানেই ১৯৫৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন সেনাশাসক আইয়ুব খান। স্বাধীন বাংলাদেশে জনপ্রশাসন এবং আমলাতন্ত্র ॥ ১৯৭২ সালের ১৫ মার্চ বাংলাদেশ সরকার প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য প্রশাসন ও চাকরি পুনর্গঠন নামে একটি কমিটি গঠন করে। ভবিষ্যত প্রশাসনিক কাঠামো এবং বেসামরিক চাকরির পদ্ধতি সম্পর্কে সরকারের নীতি কী হবে, সে ব্যাপারে পরামর্শদানের জন্য এ কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ১৯৭৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে গঠিত রশিদ কমিশন অনেক যুগান্তকারী পদক্ষেপের সুপারিশ করে। জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, রশিদ কমিশন অত্যন্ত আলোচিত এবং সবসময়ের জন্য যুৎসই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রস্তাব করে। তা হলো সিনিয়র সার্ভিস পুল (এসএসপি) নামে একটি পৃথক ক্যাডার সৃষ্টি যেখানে উপসচিব পর্যায়ে সরকারী কর্মকমিশন কর্তৃক পরিচালিত লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নিয়োগ প্রদান করা হবে এবং তা সব ক্যাডারের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। সিনিয়র সার্ভিস পুলকে (এসএসপি) একটা পৃথক ক্যাডার হিসেবে গঠনের ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনীয় বিধি প্রণয়ন করে এবং ১৯৭৯ সালে সেই বিধি বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করে। তবে এসএসপিতে রিক্রুটমেন্টের জন্য লিখিত পরীক্ষার পাঠ্যসূচী নিয়ে সরকারী কর্মকমিশনের সঙ্গে একমত হতে সরকারের দীর্ঘ ১০ বছর সময় লেগে যায়। অনেকে মনে করেন, এ কালক্ষেপণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। ১৯৮৯ সালের ১২ জুলাই এসএসপি বিলুপ্ত হয়ে যায়। বিসিএস (প্রশাসন) ও বিসিএস (সচিবালয়) একীভূত করার ফলে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের ক্যাডারের বর্তমান সংখ্যা ২৯। রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের পর এরশাদ বিচার এবং প্রশাসনিক কাজকর্মের সুবিধা জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য উপজেলা পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। উপজেলা আদালতের বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ’৮৩ সালে ৬৫০ জনের বিশাল একটি ব্যাচ নিয়োগ দেয়া হয়। ওই ব্যাচের কর্মকর্তাদের লিখিত পরীক্ষা ছাড়া শুধু এমসিকিউর মাধ্যমে নিয়োগ করা হয়। নিয়োগের শর্ত ছিল এরা উপজেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবেই অবসরে যাবেন। কিন্তু রাজনৈতিক তদবিরে এ শর্ত প্রত্যাহার করে এদের সিভিল প্রশাসনের ধারাবাহিকতায় যুক্ত করা হয়। ’৮৩ সালের পর ’৮৪ ব্যাচে ৪৫০ এবং ও ’৮৫ ব্যাচে ৫৫০ জনকে নিয়োগ প্রদান করা হয়। কাছাকাছি সময়ে উপর্যুপরি তিনটি ব্যাচে অপরিকল্পিতভাবে অধিকসংখ্যক কর্মকর্তা নিয়োগের ফলে সিভিল সার্ভিসে অপেক্ষাকৃত দুর্বলরাও প্রবেশের সুযোগ পেয়ে যান। ওই সময় নির্বাচন অফিসার ও সেনানিবাসের নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও সিভিল প্রশাসনে আত্মস্থ করার ফলে প্রশাসন নড়বড়ে হয়ে পড়ে। অন্যদিকে আত্মস্থ হওয়া প্রশিক্ষণবিহীন অফিসারদের পেশাদার মনোবৃত্তির ঘাটতির কারণে প্রশাসন ক্রমান্বয়ে দুর্নীতিপ্রবণ হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের জনপ্রশাসন সঠিকভাবে কাজ না করা এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও পেশাদার চেহারা না গড়ে ওঠার পশ্চাতে অনেক কারণ আছে। রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা এবং অতিরিক্ত আমলানির্ভরতা অন্যতম প্রধান কারণ। এছাড়া আছে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী না করতে পারা, ন্যাপোটিজম, সিএসপি-বিসিএস দ্বন্দ্ব, দুর্নীতি, ব্যাচে ব্যাচে কোন্দল, ক্যাডার বৈষম্য, কাঠামোহীন কর্মপদ্ধতি এবং প্রশিক্ষণ এবং মোটিভেশনের অভাব। প্রশাসনকে গতিশীল এবং জনকল্যাণমুখী করার জন্য অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের স্পয়েল সিস্টেমের মতো একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলেন। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭১ থেকে সামরিক শাসনসহ বিভিন্ন সরকারের সময়ে গঠিত হয়েছে মোট ১৮টি কমিশন। এর মধ্যে ১৯৯৭ সালে গঠিত হওয়া এটিএম শামসুল হকের কমিশন কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব পেশ করেছে। এ কমিশন নিউ পাবলিক ম্যানেজমেন্টের (এনপিএম) ধারণা সংবলিত মোট ১৩৭টি সংস্কারের প্রস্তাব দেয়। কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ হলো স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক প্রশাসন, পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমমনা মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে ক্লাস্টার্স সিস্টেমের প্রচলন করে কর্মকর্তাদের ওই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে বদলি সীমিত করা। সিনিয়রিটি, যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতি ও পদায়নের জন্য সুপিরিয়র ম্যানেজমেন্ট পুল (এসএমপি) গঠন করা এবং কোটাপ্রথা বাতিলের সুপারিশ করা হয়। স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন, প্রতিষ্ঠান ও জনশক্তির আধিক্য কমানো এবং স্বাধীন ও শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন গঠনেরও প্রস্তাব করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক আমলে সংস্কারের উদ্যোগ ॥ বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রশাসনিক সংস্কার সংক্রান্ত নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর মধ্যে ছিল মন্ত্রণালয়গুলোকে চার গুচ্ছে বিভক্তকরণ। পরে তা আবার ছয়টি গুচ্ছে বিভক্ত করার সুপারিশ করা হয়। এটি এখনও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জানা গেছে, ১৯৭৩ সাল থেকে ওই প্রস্তাবটি ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছে। সরকার আসে, সরকার য়ায় কিন্তু প্রস্তাবটি বাস্তবায়ন হয় না। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অধিকাংশ সরকারের সময় ওই প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া প্রশাসনকে গতিশীল করতে নানা বিধি-বিধান বদল, কর্মকর্তাদের প্রত্যেকের জন্য প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা, ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ডেভেলপ করা, বিশেষ করে কর্মকর্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও টেম্পারিং রোধে নতুন এসিআর পদ্ধতি চালু করা, পদোন্নতির নতুন বিধিমালা তৈরিÑ এতে ছিল পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতা নির্ধারণ, পদ শূন্য না থাকলেও নির্ধারিত সময়ে পদোন্নতি প্রদান, কাজের গতি বাড়াতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জন্য সাবেক সচিবদের জন্য বিশেষজ্ঞ টিম গঠন, প্রশাসনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করার জন্য সিভিল সার্ভিস কমিশন গঠন, প্রশাসনের স্থবিরতা নিরসনে ভিজিল্যান্স টিম গঠন, রিসোর্স পারসনস পুল গঠনসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেয়া কোন পদক্ষেপই আলোর মুখ দেখেনি। প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত অধিকাংশ প্রস্তাব বাস্তবায়িত না হওয়ায় প্রশাসন ক্রমান্বয় গতিহীন ও অস্বচ্ছ হয়ে পড়ছে। প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা বলেন, ১৯৭২ সালে গঠন করা প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস কমিটি প্রশাসনকে গতিশীল করতে বিস্তারিত সুপারিশ করে। এতে সার্বিক বিষয়ে ধারণা দেয়া হয়। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য কতগুলো বেতন-স্কেল করা প্রয়োজন তাও ওই সুপারিশে উল্লেখ ছিল। ওই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত হলে প্রশাসনের এ হাল হতো না। বিগত আমলে প্রস্তাবগুলো যেভাবে ঝুলে যায় ॥ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে মোজাফফর কমিটি কাজের ধরন অনুযায়ী মন্ত্রণালয়গুলোকে বিভিন্ন গুচ্ছে (ক্লাস্টার) বিভক্তির প্রস্তাব দেয়। এর পর দীর্ঘ সময় এ নিয়ে সরকারের কোন উচ্চবাচ্য না থাকায় ক্লাস্টারিং প্রথা তৈরির প্রক্রিয়া ঝিমিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে পাবলিক এ্যাডমিনিস্ট্রেশন রিফর্মেশন কমিটি (পার্ক) ২০০০ সালে মন্ত্রণালয়গুলোকে বিভিন্ন গুচ্ছে বিভক্ত করার জন্য জোরেশোরে কাজ শুরু করে। এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ আলোকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সুশাসন বিষয়ে গুড গবর্নেন্স সেল তৈরি করা হয়। তখন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রণালয়গুলোকে ৫টি গুচ্ছে বিভক্ত করার প্রস্তাব করা হয়। পরে অনুমোদনের জন্য এটি মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ প্রস্তাবকৃত ৫টির পরিবর্তে মন্ত্রণালয়গুলোকে ৪টি গুচ্ছে বিভক্ত করার অনুমতি দেয়। ২০০৪ সালে অনুমোদন দেয়া ওই প্রস্তাবের পর কোন মন্ত্রণালয় কোন গুচ্ছের অধীনে থাকবে তা নির্ধারণ করতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। কমিটি ব্যস্ত থাকে ফাইল চালাচালি নিয়ে। এরপর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ উদ্যোগ নেয়ার পর আবার তা যাচাইবাছাই শুরু হয়। যাচাইবাছাই শেষে এবার মন্ত্রণালয়গুলো ৬টি গুচ্ছে বিভক্তের সুপারিশ করে জনপ্রশাসন (সংস্থাপন) মন্ত্রণালয়। কিন্তু সেটিও আলোর মুখ দেখে না। সিভিল সার্ভিস কমিশনও ঝুলে যায় তখন। প্রশাসনকে গতিশীল করতে জনপ্রশাসন (সংস্থাপন) মন্ত্রণালয় পদোন্নতি ও নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন এবং ক্যারিয়ার প্ল্যানিং রূপরেখা প্রণয়ন সংক্রান্ত প্রস্তাব করে ২০০৭ সালের গোড়ার দিকে। এটি বাস্তবায়নের জন্য হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট কমিটি একটি উপকমিটি গঠন করে দেয়। খসড়া প্রণয়ন করে উপকিমিটি এ কমিটির কাছে তা জমা দেয়। কিন্তু রহস্যময় কারণে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা এগুলো অগ্রসর না করার জন্য পরামর্শ দেয়। ২০০৪ সালে রিসোর্স পারসনস পুল তৈরির জন্য ২০৬ জনের প্রাথমিক তালিকা নিয়ে কাজ শুরু করে। কিন্তু রিসোর্স পারসনস তালিকা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। দক্ষতার ভিত্তিতে পুল গঠন করে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও উপযুক্ত স্থানে তাদের পদায়নের জন্য এ পদক্ষেপ নেয়া হয়। এছাড়া ২০০৭ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সিভিল প্রশাসন থেকে ইউএন মিশনে কর্মকর্তা পদায়নের নীতিমালা তৈরির কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ নীতিমালা, সিআর অধিশাখার সঙ্গে এসিআর মূল্যায়ন পদ্ধতিতে সম্পৃক্ততা করার জন্য নেয়া উদোগসহ বিভিন্ন প্রস্তাব আজও আলোর মুখ দেখেনি। ইতোপূর্বে গঠিত কমিশন ও কমিটি ॥ বাংলাদেশে অভ্যুদয়ের পর সরকারের জন্য সংগঠন কাঠামো প্রণয়নের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে গঠন করা হয় প্রশাসনিক পুনর্গঠন কমিটি (এআরসি), সার্ভিস কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালে গঠিত হয় প্রশাসনিক ও সার্ভিস কাঠামো পুনর্গঠন কমিটি, একই বছর ১৯৭২ সালে গঠন করা হয় জাতীয় বেতন কমিশন, এরপর সার্ভিস কাঠামো ও বেতনসংক্রান্ত বিষয়াবলী সমাধানের লক্ষ্যে ১৯৭৭ সালে গঠন করা হয় বেতন ও সার্ভিস কমিশন, এরপর ১৯৮২ সালে মন্ত্রণালয়/বিভাগ/ পরিদফতর ও অন্যান্য সংস্থার সাংগঠনিক কাঠামো পরীক্ষাসংক্রান্ত সামরিক আইন কমিটি গঠন করা হয়। এর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সরকারী খাতের সংস্থাসমূহের সংগঠন ও জনবল যৌক্তিকীকরণ। একই বছর ১৯৮২ সালে জেলা/উপজেলা ও মাঠপর্যায়ের প্রশাসনের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গঠিত হয় প্রশাসনিক সংস্কার ও পুনর্গঠন কমিটি, ১৯৮৪ সালে গঠন করা হয় তৃতীয় বেতন কমিশন, পদোন্নতি বিষয়াবলী সংক্রান্ত বিষয়ে ১৯৮৫ সালে গঠন করা হয় প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি, সিনিয়র সার্ভিস পুল কাঠামোকে (এসএসপি) উদ্দেশ্য করে ১৯৮৫ সালে গঠন করা হয় সিনিয়র সার্ভিস পুল কাঠামো পুনর্বিবেচনা সংক্রান্ত বিশেষ কমিটি, ১৯৮৭ সালে গঠন করা হয় মন্ত্রিপরিষদ উপকমিটি। উদ্দেশ্য ছিল এসএসপি পর্যালোচনা ও পদোন্নতির বিভিন্ন বিষয়, কতিপয় সরকারী দফতর রাখা বা না রাখার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় এ লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে গঠন করা হয় পরিবর্তিত অবস্থার আলোকে কতিপয় সরকারী দফতর রাখার প্রয়োজনীয়তা পুনঃপরীক্ষা কমিটি, একই বছর ১৯৮৯ সালে গঠিত হয় চতুর্থ জাতীয় বেতন কমিশন, ১৯৯১ সালে গঠন করা হয় স্থানীয় সরকার পর্যালোচনা কমিশন, ১৯৯৬ সালে গঠন করা হয় পঞ্চম জাতীয় বেতন কমিশন, মন্ত্রণালয়/অধিদফতর ইত্যাদি কাঠামো ও জনবল যৌক্তিকীকরণ বিষয়ে ১৯৯৬ সালে গঠন করা হয় প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাস কমিটি (এআরসি), স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে গঠিত হয় স্থানীয় সরকার কমিশন। এরপর ২০০৫ ও ২০০৯ সালে ষষ্ঠ ও সপ্তম পে-কমিশন বাস্তবায়ন করা হয়। এটিএম শামসুল হক কমিশনের রিপোর্টে সিভিল সার্ভিসে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি ক্রম বিলোপ করার সুপারিশ করা হয়। এছাড়া পাবলিক সার্ভিস পরীক্ষায় বস্তুনিষ্ঠতা বাড়ানো (ঐচ্ছিক বিষয় বাদ দেয়া, পৃথক মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা), নির্ধারিত মেয়াদে (যোগ্যদের) অটোপদোন্নতি প্রদান করা, মন্ত্রণালয়গুলোকে বিভিন্ন গুচ্ছে বিভক্ত করা, চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৬০ বছরে উন্নীত করা, কাজের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা, সুশাসনের প্রতিশ্রুতি সংবলিত একটি বেতন নীতি চালু করাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করে। জনপ্রশাসনে বঞ্চনা ॥ স্বাধীন বাংলাদেশে একটি সুষম সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে উঠবে, এ রকম একটি স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বিসর্জন দিতে হয়েছে ত্রিশ লাখ জীবন আর লাখ লাখ নারীর সম্ভ্রম। আর এজন্য জনকল্যাণমুখী, সমাজবান্ধব, জবাবদিহিমূলক, দুর্নীতিমুক্ত একটি জনপ্রশাসন প্রয়োজন। অথচ ঘটেছে সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনা। জনপ্রশাসনে প্রশাসনবহির্ভূত অন্য ক্যাডার বা অবশিষ্ট ২৮টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন থেকে নানাভাবে উপেক্ষিত হয়ে আসছেন। সময়মতো পদোন্নতি না পাওয়াসহ আছে নানা বঞ্চনা। উপসচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ২৫% কোটা কখনও মানা হয় না। প্রশাসন ক্যাডারের জুনিয়রদের সঙ্গে অন্যান্য ক্যাডারের কয়েকটি ব্যাচ সিনিয়রদের পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হয়। যুগ্মসচিব পদে বর্তমানে ৩০% কোটা না থাকলেও পদোন্নতি দেয়ার ক্ষেত্রে কোন সমনীতি অনুসরণ করা হচ্ছে না। প্রত্যেক ক্যাডারের নিজ নিজ লাইনপোস্ট রয়েছে। এ হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারেরও লাইনপোস্ট আছে। কিন্তু ক্যাডার সৃষ্টি হওয়ার শুরু থেকে সাবেক সচিবালয় ক্যাডার ও প্রশাসন ক্যাডার সবচেয়ে প্রভাবশালী ক্যাডার হওয়ায় সচিবালয়ে সরকারের সহকারী সচিব থেকে সচিব এবং সমমর্যাদার প্রায় সব পদ একচেটিয়া তাদেরই দখলে। প্রকৃচির (প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও চিকিৎসক) আন্দোলনের মুখে সচিবালয়ের এ পদগুলোতে ক্যাডারের রেশিও অনুযায়ী সিনিয়র সার্ভিস পুল গঠন করে উপসচিব থেকে কিছু কিছু করে কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে সরকার সিনিয়র সার্ভিস পুল ভেঙ্গে দিয়ে ২০০২ সালে উপসচিব থেকে সচিব পর্যায়ে পদোন্নতি দেয়ার জন্য বিধিমালা প্রণয়ন করে। সেখানে অন্যান্য ক্যাডারের জন্য উপসচিব পদে ২৫% এবং যুগ্মসচিব থেকে তদুর্ধ পর্যায়ে ৩০% পদোন্নতির কোটা রাখা হয়। কোটা পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করা হলে হাইকোর্ট কোটা পদ্ধতি অবৈধ ঘোষণা করেন। সরকার এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করলে আপীলের রায়ে উপসচিব পদে ২৫% কোটা বহাল রেখে তদুর্ধ পর্যায়ে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি রহিত করা হয়।
×