ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এসএম মুকুল

সমৃদ্ধির সোপানে প্লাস্টিক শিল্প

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

সমৃদ্ধির সোপানে প্লাস্টিক শিল্প

একটা সময় ছিল, যখন হাতির দাঁতের তৈরি চিরুনি ব্যবহৃত হতো। তখন সাধারণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে ছিল না চিরুনি। প্লাস্টিক উদ্ভাবিত হওয়ার পর এটি চলে আসে মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। শুধু চিরুনি নয়- এখন নিত্য ব্যবহার্য পণ্য, ঘরে খাট, আলমিরা, শোকেস, খেলনাসামগ্রী থেকে করে মানুষের জীবনযাত্রার প্রায় সব রকম প্রয়োজন মেটাচ্ছে প্লাস্টিকসামগ্রী। প্লাস্টিক বর্তমান দুনিয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ শিল্পের ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯৫২ সাল থেকে প্লাস্টিক শিল্পের যাত্রা শুরু হয়েছে। এ শিল্পের প্রায় ৯৯ শতাংশ লোকই ঢাকা ও নোয়াখালী অঞ্চলের। দেশে বর্তমানে ক্ষুদ্র-মাঝারিসহ তিন হাজার প্লাস্টিক কারখানার ৮০ ভাগই পুরনো ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত। জানা গেছে, এসব কারখানায় নাকি বছরে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিকসামগ্রী তৈরি হয়। এর মধ্যে স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয় চার হাজার কোটি টাকার পণ্য এবং বাকিটা রফতানি হয়। ২০ থেকে ২৩ জানুয়ারি সম্পন্ন হলো ১১তম আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক মেলার ২০১৬। বাংলাদেশ প্লাাস্টিক গুডস্ ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ) এবং তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠান চ্যান চাও ইন্টারন্যাশনালের যৌথ উদ্যোগে চার দিনব্যাপী এ মেলার আয়োজন করে। বাংলাদেশসহ ১৩ দেশের তিনি শতাধিক প্লাস্টিক পণ্য, প্যাকেজিং ও প্রিন্টিং সামগ্রী, যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবনকারী প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়েছে। পরিবেশের শত্রু নয় প্লাস্টিক প্লাস্টিকসামগ্রী দিয়ে এখন দেশে কাঠের বিকল্প ফার্নিচার, টেবিল-চেয়ার থেকে শুরু করে গৃহসামগ্রী উৎপাদিত হচ্ছে। দিন দিন এর ব্যাপক ব্যবহার ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্লাস্টিক দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের পাশাপাশি বিশ্বে এখন ক্যান্সারের ওষুধও প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কৌশলের (ইএমএস) যথাযথ বাস্তবায়ন হলে প্লাস্টিক ক্ষতিকর নয় বরং প্লাস্টিকের কৌশলগত রিসাইক্লিং বিপুল অর্থ সাশ্রয় করতে পারে। প্লাস্টিক রিসাইক্লিং করার ফলে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিবহনের ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের প্রতি বছর তিন কোটি আট লাখ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে এবং প্লাস্টিক রিসাইক্লিং দুই-তৃতীয়াংশ জ্বালানি সাশ্রয়, পরিবেশ দূষণ এবং পানি ব্যবহার প্রায় ৯০ শতাংশ হ্রাস করেছে। বিভিন্ন তথ্যে জানা গেছে, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বর্তমানে প্রতিদিন ১৩০ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হচ্ছে এবং এর ৭০ শতাংশ (প্রায় ৯০ টন) রিসাইকেল হয়ে নতুন পণ্য হিসেবে বাজারে ফিরে আসছে। রিসাইক্লিংয়ের ফলে বর্তমানে প্রতি বছর ডিসিসি এলাকায় ০.৫ কোটি ১০ লাখ ডলার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। ফলে প্লাস্টিক আমদানি হ্রাস পাওয়া ছাড়াও মহানগরীতে ৩০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। কৃষিতে সেচ পাইপ, এগ্রিকালচারাল, পলিথিন, ড্রামসিডার প্যাকেজিংসহ অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে প্লাস্টিক শিল্প। রফতানি সম্ভাবনা অফুরন্ত বর্তমানে বাংলাদেশে রফতানি আয়ের দিক দিয়ে প্লাস্টিক পণ্য রফতানি খাতের স্থান হচ্ছে ১২তম। আশা করা হচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক পণ্য রফতানি খাত অন্যতম শীর্ষ রফতানি খাতে পরিণত হবে। তা হলে এ খাতে রফতানি দাঁড়াবে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্লাস্টিক পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত বিভিন্ন দেশসহ সমগ্র ইউরোপে এবং এশিয়ার চীন, ভারত, নেপালসহ অন্যান্য দেশে রফতানি হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে প্লাস্টিকের তৈরি পণ্যের প্রচ্ছন্ন রফতানির পরিমাণ বছরে প্রায় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এখাতে সরাসরি রফতানি হচ্ছে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি। এ খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন প্লাস্টিক শিল্পে পণ্য বৈচিত্রকরণ, বহুমুখীকরণসহ প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা পেলে এ শিল্প খাতে রফতানি আয় ২০২১ সালের মধ্যে ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করা সম্ভব। আমরা নিজেরা যদি কাঁচামাল উৎপাদন করতে পারি, তবে একদিকে আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে, পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয় কমবে। ফলে পরনির্ভরতা কমবে। উপরন্তু কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি হবে। সময়ের প্রয়োজনে কাঠের বিকল্প প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার দেশে-বিদেশে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
×