ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বর্ণ জিতে অবসর নিতে চান শিল্পী

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

স্বর্ণ জিতে অবসর নিতে চান শিল্পী

রুমেল খান ॥ যে কোন কিছুতেই শিল্পী হওয়া অনেক কঠিন ব্যাপার। সেটা হোক গানে, চিত্রাঙ্কনে, খেলায়। কর্মে না হোক, মহিলা হ্যান্ডবলে একজন শিল্পী আছে স্বনামে। তার নাম শিল্পী আকতার। এই খেলা দিয়ে তিনি হতে চান যথার্থই এক শিল্পী। আসন্ন এসএ গেমস হ্যান্ডবলই হতে পারে তার শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট, যদি বাংলাদেশ শিরোপা জেতে। ২০১০ থেকে জাতীয় দলে খেলছেন তিনি। মোহামেডান, মেরিনার্স ও ঊষার হয়ে খেলেছেন ক্লাব পর্যায়ে। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলেছেন ২০১০ সালে জাতীয় দলের হয়ে ভারতের হলদিয়ায়, ২০১২ সালে নেপালে জুনিয়র দলের হয়ে আইএইচএফ ট্রফিতে এবং সর্বশেষ সিঙ্গাপুরে ২০১৫ সালে। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার সারিয়ালজাট গ্রামের মেয়ে তিনি। কৃষিজীবী বাবা আব্দুল কুদ্দুস, মা গৃহিণী আনোয়ারা বেগম। তিন ভাই-বোনের মধ্যে শিল্পী দ্বিতীয়। ‘স্কুলে পড়ার সময়ই অন্যদের খেলতে দেখে হ্যান্ডবল খেলার প্রেমে পড়ে যাই। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় একবার আমি ১০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নিয়ে প্রথম হই। আমার দৌড়ের গতি দেখে স্কুলের আবুল হোসেন স্যার আমাকে হ্যান্ডবল খেলতে উৎসাহিত করেন। এভাবেই এ খেলায় আসা। আমি অবশ্য ভলিবলও খেলতাম।’ হ্যান্ডবল খেলায় আসার গল্পটা এভাবেই বলেন তিনি। ২০০৮ সালে ফরিদপুরের হয়ে জাতীয় লীগ খেলেন তিনি। ভাল খেলার সুবাদে বিজেএমসিতে ডাক পান পরের বছর। ওখানেই তার চাকরি হয়। ওখানেই এখনও চাকরি করছেন। মা-বাবা খেলার ব্যাপারে বরাবর উৎসাহ জোগালেও আপত্তি ছিল মাদ্রাসায় পড়া বড় ভাইয়ের। ‘বড় ভাইয়ের সঙ্গে আগে যে ভালবাসার সম্পর্কটা ছিল, সেটা ফিকে হয়ে যায় আমি হ্যান্ডবল খেলার কারণে! আমাদের মধ্যে একটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়ে গেছে।’ আক্ষেপ ঝরে শিল্পীর কণ্ঠে। ‘তবে এটাকে আমি কখনই বড় করে দেখিনি। দেখলে হয়তো খেলতেই পারতাম না। কারণ আমার স্বপ্নই ছিল খেলোয়াড় হওয়ার।’ ক্যারিয়ারের স্মরণীয় ম্যাচ? ‘২০১২ সাল। লীগে মোহামেডানের হয়ে খেলি। প্রতিপক্ষ মেরিনার্স। আমি দারুণ ভাল খেলি এবং আমাদের দল শিরোপাও জেতে। এটা আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’ লেফট ব্যাক পজিশনে খেলা শিল্পীর স্মৃতিচারণ। ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বড় ইনজুরি? ‘২০০৭ সালে ধানম-ি মহিলা কমপ্লেক্সে কাদার মধ্যে খেলতে গিয়ে হাঁটুতে ভীষণ ব্যথা পাই। অনেকদিন সময় লাগে সেরে উঠতে। ওটাই এখন পর্যন্ত বড় ইনজুরি।’ পঞ্চগড় মহিলা কলেজে ¯œাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শিল্পীর হ্যান্ডবল নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনা হচ্ছে এসএ গেমসে দলীয়ভাবে স্বর্ণপদক জিতে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানা। মাত্র ২২ বছর বয়সে কেন অবসরের ভাবনা? ‘আমার স্বপ্ন হচ্ছে বড় ধরনের কোন টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতা এবং অবসর নিয়ে নতুনদের সুযোগ করে দেয়া। তবে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের অবসান ঘটালেও ঘরোয়া আসরে খেলা চালিয়ে যাব।’ শিল্পীর ভাষ্য। ডালিয়া আক্তার এবং রোজিনা খাতুনের খেলার ভক্ত শিল্পী, ‘তাঁদের কাছ থেকে সবসময়ই পরামর্শ পাই।’ এসএ গেমসের অনুশীলন প্রসঙ্গে শিল্পীর মন্তব্য, ‘দিদার স্যার আমাদের ভালভাবেই প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি তার নির্দেশ মোতাবেক খেলে এসএ গেমসে ভাল রেজাল্ট করতে। এসএ গেমসে এই প্রথম আমরা হ্যান্ডবল খেলবো, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে ফাইনাল খেলা। ভারত অনেক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। তারপরও আমরা আশাবাদী তাদের হারাতে। মোটকথা প্রথম আসরে ভাল ফল করে আসরটা স্মরণীয় করে রাখতে চাই।’ ভবিষতে পুরোপুরি হ্যান্ডবল খেলা ছাড়লে কোন স্কুলে হ্যান্ডবল গেম টিচারের দায়িত্ব পালন করার ইচ্ছে আছে। প্রায় বছর দুয়েক আগে কুষ্টিয়াতে বিয়ে হয় শিল্পীর। স্বামী আশিকুর রহমান খান হ্যান্ডবল-ক্রিকেট দুটোই খেলেন। স্ত্রীকে যথেষ্ট উৎসাহ দেন খেলায়, ‘শুধু আমার স্বামী নয়, আমার শ্বশুরবাড়ির সবাই আমাকে খেলতে দারুণ অনুপ্রাণিত করেন। আমি খুব ভাগ্যবতী।’ মহিলা হ্যান্ডবল দলের কোচ দিদার হোসেন বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পিং শুরু হয় গত ৮ আগস্ট থেকে ৩০ জনকে নিয়ে। পরে বাছাই করে চূড়ান্ত দলের জন্য রাখা হয় ১৪ জনকে। প্রতি পজিশনে দুজন করে খেলোয়াড় আছে আমাদের। আমাদের প্রাথমিক লক্ষ্য এসএ গেমসে ফাইনাল খেলা। গত ডিসেম্বরে আমরা সিঙ্গাপুরে একটি প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তৃতীয় হয়েছিলাম। ফলে খেলোয়াড়দের প্রস্তুতি মন্দ হয়নি। আসন্ন এসএ গেমসে তাদের নিয়ে আমি যথেষ্ট আশাবাদী।’ ভারতের গৌহাটির উদ্দেশ্যে আগামী ৮ জানুয়ারি রওনা হবে বাংলাদেশ মহিলা হ্যান্ডবল দল। তাদের প্রথম ম্যাচ ১০ জানুয়ারি ‘বি’ গ্রুপে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে। তারপর ১২ জানুয়ারি পাকিস্তান, ১৩ জানুয়ারি মালদ্বীপের বিরুদ্ধে। ‘গ্রুপে দুটি ম্যাচে জিতলেই সেমিতে উঠতে পারবো আমরা।’ দিদারের আশাবাদ। গৌহাটির আবহাওয়া এখন বাংলাদেশের মতোই ঠা-া, ফলে ওখানে গিয়ে আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কোন সমস্যা হবে না বলেই মনে করেন দিদার। জাতীয় দলের কোচ হিসেবে এটাই তার প্রথম পরীক্ষা। সে পরীক্ষায় সফল হয়ে বাজিমাত করার স্বপ্ন দেখছেন এখনও খেলোয়াড়ী জীবন চালিয়ে যাওয়া দিদার। কোচের স্বপ্নটা কি সফল করতে পারবেন শিল্পীরা?
×