ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;নিজামীর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষা

মীর কাশেম আলীর রায়ের বিরুদ্ধে আপীল শুনানি ২ ফেব্রুয়ারি শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

মীর কাশেম আলীর রায়ের বিরুদ্ধে আপীল শুনানি ২ ফেব্রুয়ারি শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদ-প্রাপ্ত বদর বাহিনীর তৃতীয় শীর্ষ নেতা তৎকালীন ইসলামী ছাত্র সংঘের সাধারণ সম্পাদক, চট্টগ্রামের বাঙালী খান, জামায়াতে ইসলামীর নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর রায়ের বিরুদ্ধে করা আপীল শুনানি ২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে। অন্যদিকে হত্যা, ধর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবী গণহত্যার দায়ে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াতে ইসলামীর আমির শীর্ষ নেতা আলবদর বাহিনীর প্রধান বিএনপি জামায়াত জোট সরকারের সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-াদেশ বহাল রেখে আপীল বিভাগ যে রায় প্রদান করেছেন তার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে। নিয়ম অনুয়ায়ী এই মামলার রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর তা ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হবে। ট্রাইব্যুনাল সেই পূর্ণাঙ্গ রায়টি হাতে পেলে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করবেন। সেই মৃত্যু পরোয়ানা ফাঁসির আসামিকে পড়ে শোনাবে কারা কর্তৃপক্ষ। পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করতে পারবে আসামিপক্ষ। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার এখন পর্যন্ত রায়ের বিরুদ্ধে আপীলে ছয়টি নিষ্পত্তি এবং চারটির দ- কার্যকর হয়েছে। এদিকে মানবতাবেিরাধী অপরাধের অভিযোগে আমৃত্যু কারাদ-াদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর খালাস চেয়ে আসামি পক্ষ এবং সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ করেছে। সে রিভিউয়ের জন্য এখন পর্যন্ত বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হয়নি। বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হলেই রাষ্ট্রপক্ষ শুনানির জন্য আবেদন করবেন বলে জানা গেছে। ৬ জানুয়ারি আপীল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক মৃত্যুদ-প্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর রায়ের বিরুদ্ধে করা আপীল শুনানির দিন ২ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করেছেন। ঐ দিন প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট বেঞ্চ এ আদেশ প্রদান করেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা ছিলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় মীর কাসেম আলীর পক্ষে এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন তুহিন গত বছর ৩০ নবেম্বর এ আপীল দায়ের করেন। মীর কাসেমের পক্ষে ১৮১টি গ্রাউন্ডে মৃত্যুদ- থেকে খালাস চেয়ে এ আপীল করা হয়েছে। দেড় শ’ পৃষ্ঠার মূল আপীলসহ ৫ ভলিয়মে এক হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠায় বিভিন্ন ডকুমেন্ট পেশ করা হয়েছে। ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর তাকে মৃত্যুদ- দিয়ে রায় ঘোষণা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল জনাকীর্ণ ট্রাইব্যুনালে এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হচ্ছেন বিচারপতি মোঃ মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। প্রসিকিউশন আনীত ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগে মীর কাসেম আলী দোষী প্রমাণিত হন। তবে ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে এসব অভিযোগ থেকে খালাস (অব্যাহতি) দেয়া হয়। মীর কাসেম আলীকে অভিযোগ ১১ ও ১২ তে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেছেন। চার্জ ১১ সর্বসম্মতিতে এবং চার্জ ১২ বাইমেজরিটিতে মৃত্যুদ- প্রদান করেছেন। প্রমাণিত অভিযোগগুলোর মধ্যে ২ নম্বর অভিযোগে তাকে ২০ বছরের কারাদ- দেয়া হয়। ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে তাকে ৭ বছর করে মোট ৪২ বছর কারাদ- দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১৪ নম্বর অভিযোগ ১০ বছরের কারাদ- দেয়া হয়েছে। এই ৮টি অভিযোগে তাকে সর্বমোট ৭২ বছর কারাদ- দেয়া হয়েছে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ॥ জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ এবং খালাস চেয়ে আসামি পক্ষ রিভিউ করেছে। ১২ জানুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষ সাঈদীর সাজা বৃদ্ধি অর্থাৎ মৃত্যুদ- চেয়ে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেছেন। ঐ দিন রাষ্ট্রপক্ষের এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে এ রিভিউ আবেদন জানান। ৩০ পৃষ্ঠার মূল আবেদনসহ ৬৫৩ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ফাঁসি পুনর্বহালে ৫টি যুক্তি দেয়া হয়েছে। “এতে আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি চাওয়া হয়েছে।” যুদ্ধাপরাধ মামলায় এই প্রথম রাষ্ট্রপক্ষ কোন আসামির সাজা বাড়ানোর জন্য পুনর্বিবেচনার আবেদন করেছেন। অন্যদিকে ১৭ জানুয়ারি আসামি পক্ষ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আমৃত্যু কারাদ-াদেশপ্রাপ্ত জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর খালাস চেয়ে রিভিউ করা হয়েছে। এতে এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড হিসেবে আছেন জয়নুল আবেদিন তুহিন। ৯০ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে ১৬টি গ্রাউন্ডে সব অভিযোগ থেকে সাঈদীর খালাস চাওয়া হয়েছে।
×