ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সাড়ে ৩ লাখকে বৈধতা দেয়ায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানালেন মোহাম্মদ নাসিম

মালয়েশিয়া আগামী তিন বছরে আরও ১৫ লাখ দক্ষ শ্রমিক নেবে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

মালয়েশিয়া আগামী তিন বছরে আরও ১৫ লাখ দক্ষ শ্রমিক নেবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালয়েশিয়ায় কর্মরত সাড়ে তিন লাখ বাংলাদেশী শ্রমিককে বৈধতা দেয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বর্তমানে মালয়েশিয়ায় পাঁচ দিনের সফরে রয়েছেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মরত সাড়ে ৩ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিককে বৈধতা দেয়ার পর দেশটির আইনসভায় চূড়ান্ত ঘোষণা দিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দাতুক সারি নাজিব বিন আব্দুল রাজাক। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের একটি বড় কূটনৈতিক সাফল্য। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের ভ্রাতৃপ্রতিম বন্ধুরাষ্ট্র বলে জানান মোহাম্মদ নাসিম। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় শনিবার এ তথ্য জানায়। মোহাম্মদ নাসিম জানান, স্বাধীনতা লাভের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সূচনা করেন। তখন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দাতুক সারি নাজিব বিন আব্দুল রাজাকের বাবা। তিনি আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের এখন এ বন্ধুত্ব অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক গভীর। শুধু সাড়ে ৩ লাখ বাংলাদেশী শ্রমিকের বৈধতা নয়, আগামী ৩ বছরের মধ্যে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে আরও ১৫ লাখ দক্ষ শ্রমিক আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে বিদেশে শ্রমবাজার খাত থেকে রেমিটেন্সের পরিমাণ আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশের সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালে মালয়েশিয়ার লজিস্টিক সাপোর্ট চাইলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ॥ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশের সরকারী ও বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা সরঞ্জাম, রক্ষণাবেক্ষণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য লজিস্টিক সাপোর্ট দেয়ার বিষয়ে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা কামনা করেছেন। তিনি তার মালয়েশিয়া সফরের দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার সে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়ে দাতুক সারি ডাঃ এস সুব্রামানিয়ামের সঙ্গে বৈঠককালে এ সহযোগিতা কামনা করেন। বৈঠকে দু’দেশের স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট বিষয় প্রাধান্য পায়। বৈঠকে মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী ডাঃ হিলমি ইয়াহায়াও উপস্থিত ছিলেন। কুয়ালালামপুরের আধুনিক নগরী পুত্রজায়ায় অবস্থিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক ঘণ্টারও বেশি সময় স্থায়ী এ বৈঠকে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দেশের স্বাস্থ্য খাতকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়েছে। ইতোমধ্যে এ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। আমরা আমাদের দেশের চিকিৎসকদের আরও অভিজ্ঞ করে তুলতে চাই। তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার চিকিৎসা বিজ্ঞান দ্রুত এগিয়ে চলেছে। এই মালয়েশিয়া থেকে আমাদের চিকিৎসকরা উন্নত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইয়ে দাতুক সারি ডাঃ এস সুব্রামানিয়ামের প্রতি অনুরোধ জানান। মালয়েশিয়া এখন পর্যন্ত শুধু ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জনকারী চিকিৎসকদের স্বীকৃতি দিয়ে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে আরও অনেক মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে। সে সব মেডিক্যাল কলেজ থেকেও প্রতিবছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক চিকিৎসক এমবিবিএস ডিগ্রী অর্জন করছেন। শুধু ওই চারটি নয়, বাকি মেডিক্যাল কলেজ থেকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারীদেরও স্বীকৃতি প্রদানের জন্য মোহাম্মদ নাসিম মালয়েশিয়া সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। বৈঠকে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক কর্মী কাজ করছেন। প্রতিবছরই মালয়েশিয়া সরকার বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি আমদানি করছে। এসব শ্রমিক বাংলাদেশের স্বীকৃত সংস্থা থেকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে সার্টিফিকেট নিয়ে মালয়েশিয়ায় আসেন। কিন্তু এদেশে আসার পর মালয়েশিয়া সরকারের নিয়োগকৃত অপর একটি সংস্থা পুনরায় তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে থাকে। এ সময় সামান্য ত্রুটিবিচ্যুতি পেলেই তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়। এক্ষেত্রে তিনি বাংলাদেশের শ্রমিকদের মালয়েশিয়া থেকে ফেরত পাঠানো রোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রণীত মানদ- অনুসরণ করার জন্য ইয়ে দাতুক সারি ডাঃ এস সুব্রামানিয়ামের প্রতি অনুরোধ জানান। মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়ে দাতুক সারি ডাঃ এস সুব্রামানিয়াম বাংলাদেশের মোহাম্মদ নাসিমের উত্থাপিত সমস্যাসমূহ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে বলে আশ্বাস দেন। ইয়ে দাতুক সারি ডাঃ এস সুব্রামানিয়াম বাংলাদেশে স্বাস্থ্য সেবার মান উন্নয়নে কমিউনিটি ক্লিনিক ব্যবস্থার ভূয়সী প্রশংসা করেন। বৈঠককালে মোহাম্মদ নাসিম মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। এ সময় মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তবে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মালয়েশিয়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশ সফর করবে বলে ইয়ে দাতুক সারি ডাঃ এস সুব্রামানিয়াম জানান। মোহাম্মদ নাসিম কুয়ালালামপুরের আধুনিক নগরী পুত্রজায়ায় অবস্থিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পৌঁছলে প্রথমে তাকে স্বাগত জানান সে দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়ে দাতুক সারি ডাঃ এস সুব্রামানিয়াম। বৈঠকে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম, ডেপুটি হাইকমিশনার ফয়সাল আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নূরুল হক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কাজী মহিউল ইসলাম ছাড়াও বাংলাদেশে বিভিন্ন স্বাস্থ্য খাতে সম্পৃক্ত গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের উপদেষ্টা নাসির এ চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ফারজানা চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। যৌথ পরিচালনায় চিকিৎসা সেবার মান উন্নত করা সম্ভব’ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, মালয়েশিয়ার মতো বাংলাদেশেও সরকারী ও বেসরকারী যৌথভাবে হাসপাতাল পরিচালনার মাধ্যমে চিকিৎসা সেবার মান আরও উন্নত করা সম্ভব। এক্ষেত্রে তিনি কুয়ালালামপুরের ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউট হাসপাতাল পরিচালনার দৃষ্টান্ত উল্লেখ করেন। এই হাসপাতালটি সরকারের সহযোগিতায় নির্মিত হলেও পরিচালিত হচ্ছে বেসরকারী ব্যবস্থাপনায়। গত বুধবার ভোরে মালয়েশিয়া পৌঁছান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সফরের প্রথম দিন কুয়ালালামপুরের দুটি হাসপাতাল ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউট এবং কেপিজে তাওয়াক কাল বিশেষায়িত হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম, ডেপুটি হাইকমিশনার ফয়সাল আহমেদ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নূরুল হক, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোঃ শহীদুল্লাহ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কাজী মহিউল ইসলাম, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের উপদেষ্টা নাসির এ চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ফারজানা চৌধুরী প্রমুখ। মোহাম্মদ নাসিম প্রথমে কুয়ালালামপুরের ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউট হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। মন্ত্রী এ হাসপাতালে পৌঁছালে এর চীফ ক্লিনিক্যাল কর্মকর্তা ডাঃ রোসলি মোহাম্মদ আলী তাকে স্বাগত জানান। মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে মন্ত্রীকে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টের মাধ্যমে এ হাসপাতালের বিভিন্ন কার্যক্রম অবহিত করা হয়। এই উপমহাদেশের হƒদরোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে হাসপাতালটি প্রায় দু’দশক যাবৎ বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। হাসপাতালটি পরিদর্শনকালে মন্ত্রী এর চিকিৎসা সেবার মানের প্রশংসা করেন। তিনি এই হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে একটি নৌকা প্রতীক খচিত ক্রেস্টে উপহার দেন। পরে মোহাম্মদ নাসিম কেপিজে তাওয়াক কাল বিশেষায়িত হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। এ সময় হাসপাতালের পক্ষ থেকে তাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর সামনে এই হাসপাতালের বিভিন্ন চিকিৎসা সেবার তথ্য উপস্থাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, কেপিজে তাওয়াক কাল বিশেষায়িত হাসপাতাল ঢাকার অদূরে আশুলিয়ায় বেগম ফজিলাতুন্নেছা বিশেষায়িত হাসপাতাল ও নার্সিং ইনস্টিটিউট পরিচালনার দায়িত্ব দক্ষতার সঙ্গে পালন করে আসছে। তিনি বলেন, এ হাসপাতালটি চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে যথেষ্ট প্রশংসা অর্জন করেছে। এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার পরিধি আরও বৃদ্ধির জন্য তিনি কেপিজে তাওয়াক কাল বিশেষায়িত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান।
×