ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইস্কাটন এলাকায় দুর্ভোগ

ফ্লাইওভারের পাশাপাশি ওয়াসার পাইপ লাইন স্থাপন শুরু

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

ফ্লাইওভারের পাশাপাশি ওয়াসার পাইপ লাইন স্থাপন শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দুর্ভোগ কোনভাবেই পিছু ছাড়ছে না। ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের কারণে যানবাহন আর পথচারী দীর্ঘদিন ধরে রাজধানীর কয়েকটি সড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ফ্লাইওভার নির্মাণের সড়কগুলো দিয়েই শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে ঢাকা ওয়াসার ‘ওয়ার্টার সাপ্লাই সেক্টর ডেভেলপমেন্টস প্রজেক্ট’র কাজ। দুই কাজ মিলে জনদুর্ভোগ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এখন এই সড়কগুলোতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহন আটকে থাকছে। জনসাধারণ হেঁটে যেতেও চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এ যেন ‘গোদের উপর বিষফোঁড়া’। এদিকে, ফ্লাইওভার নির্মাণের মেয়াদ এক বছর বাড়ানোর কারণে জনদুর্ভোগ আরও এক বছর বেড়েছে। মানুষের এই দুর্ভোগ নিরসনে রাতের বেলা কাজ করার কথা থাকলেও তা মানছে না কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রে তো কোন জনসাধারণের নিরাপত্তার বিষয় না মেনেই দিনের বেলায় কাজ করে যাচ্ছে। একই ভাবে ওয়াসার পাইপলাইন স্থাপনের ক্ষেত্রেও দিনের বেলায় কাজ করা হচ্ছে। মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম। এর একটিই কারণ- রাতে শ্রমিকদের মজুরি বেশি দিতে হয়। তাই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিনের বেলাতেই কাজ করে যাচ্ছে। এখান থেকে বিরাট অঙ্কের টাকা বেঁচে যাবে বলে জানিয়েছেন ওয়াসার এক কর্মকর্তা। এ কারণেই নিয়ম ভেঙ্গে দিনের বেলায় কাজ হচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা ওয়াসার জোন-৬ অঞ্চলে ৩৭৬ কিলোমিটার পানির পাইপলাইন পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু হয়েছে। এই পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণের কাজ রাতের বেলা করার কথা। কিন্তু রাতে ‘লেবার কস্ট’ বা কর্মীদের বেশি টাকা দিতে হবে বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিনের বেলাতেই কাজ করে যাচ্ছে। বিষয়টি ওয়াসা জানলেও কোন প্রকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে, ওয়াসার এক শ্রেণীর কর্মকর্তা-কর্মচারী (যারা তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে লাভবান হয়ে কিছু বলছেন না। মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভার যে কয়টি সড়ক দিয়ে নির্মাণ হচ্ছে, সেই কয়টি সড়ক দিয়েই ওয়াসার পানির পাইপলাইন স্থাপন করা হচ্ছে। তবে ওয়াসা বলছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সাময়িকভাবে জনসাধারণের কষ্ট হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদী সুবিধা পাবেন জনসাধারণ। প্রকল্পে পানির গুণগতমান নিশ্চিত করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে মহানগরীর সব এলাকায় পানির পাইপলাইনের সম্প্রসারণ ও পুনর্বাসন কাজ চলবে। কাজটি শেষ করতে সাড়ে তিন বছর লাগবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহযোগিতায় ঢাকা ওয়াসা প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। ফকিরাপুল, মালিবাগ, মগবাজার, মৌচাক, রামপুরা ও সংলগ্ন এলাকার প্রায় ৩৭৬ কিলোমিটার পানির লাইন পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ১৬টি ডিএমএ’র (ডিস্ট্রিক্ট মিটারিং এরিয়া) আওতায় প্রকল্পে নতুন লাইন স্থাপন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার সিস্টেম লসও অনেকাংশে কমে যাবে। সিস্টেম লসের কারণে ওয়াসার উৎপাদন ব্যয় কোটি কোটি বেড়ে যায়। সূত্র জানিয়েছে, নগরীতে দৈনিক পানির চাহিদা পুরোপুরিভাবে পূরণের সক্ষমতা অর্জনের পর ঢাকা ওয়াসা এবার সরবরাহকৃত পানির গুণগতমান নিশ্চিতকরণে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ওয়াটার সাপ্লাই সেক্টর ডেভেলপমেন্টস প্রকল্পের আওতায় বর্তমানে ছয়টি প্যাকেজের অধীনে ৬৪টি ডিএমএ’র (ডিস্ট্রিক্ট মিটারিং এরিয়া) মাধ্যমে রাজধানীর দুই হাজার কিলোমিটার পানির পাইপলাইন পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণের কাজ করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে ঢাকা ওয়াসার মড্স জোন-৬ এ (ফকিরাপুল, মালিবাগ, মগবাজার, মৌচাক, রামপুরা ও সংলগ্ন এলাকা) প্রায় ৩৭৬ কিলোমিটার পানির লাইন পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণের কাজ শুরু করেছে ঢাকা ওয়াসা। নতুন এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে আরএফএল প্লাস্টিক লিমিটেড (আরপিএল) ও চায়না রেলওয়ে ফার্স্ট গ্রুপ লিমিটেডকে (সিআরএফজি) প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে গত বছরের গোড়ার দিকে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে উভয় প্রতিষ্ঠানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। নতুন করে পাইপলাইন স্থাপন করতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার কথা থাকলেও রাস্তা কেটেই পাইপ স্থাপন করা হচ্ছে। রাজধানীর রাশেদ খান মেনন সড়কের (নিউ ইস্কাটন সড়ক) বাংলামোটর থেকে শুরু করে মগবাজার মোড় পর্যন্ত সড়ক খুঁড়ে পাইপ স্থাপন করার কাজ চলছে। এই সড়কেই ফ্লাইওভারের কাজও করা হচ্ছে। দুটি নির্মাণযজ্ঞের কারণে মানুষের চলাচল এক প্রকার থেমেই গেছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষজন এই পথে চলাচল করছেন। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রকল্পের পিডি সহিদ উদ্দীনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। পরে ওয়াসার এমডির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে তাকেও পাওয়া যায়নি। তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জনসাধারণের দুর্ভোগ বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন হলে পানি সরবরাহ কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে হবে। তখন কোন্ গ্রাহক কত পানি ব্যবহার করলেন সেটা জানা যাবে। আর সে অনুযায়ী পানির বিল হবে। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কাজটি হচ্ছে পানির গুণগতমান বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি ভাল হবে। তখন খাবার পানি হিসেবে সরাসরি ওয়াসার পানি ব্যবহার করতে পারবেন। ফোটানোর কোন প্রয়োজন হবে না। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান সম্প্রতি বলেন, কয়েক বছরে ঢাকা ওয়াসা তার কার্যক্রম ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। ঢাকা ওয়াসা ক্রমেই একটি টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও গণমুখী পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে ঢাকা ওয়াসার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে রাজধানীতে পানির কোন সঙ্কট নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন। ঢাকা ওয়াসা এখন পানির গুণগতমান নিশ্চিতকরণে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে পুরনো পাইপলাইন বদলে নতুন লাইন স্থাপন ও সম্প্রসারণের কাজ চলছে। ভবিষ্যতে উন্নত দেশগুলোর মতো সরাসরি পানযোগ্য পানি সরবরাহের পরিকল্পনা ঢাকা ওয়াসার রয়েছে বলে জানান তিনি।
×