ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জিরো টলারেন্স দেখাবে ঢাকা

মধ্য আফ্রিকায় যৌন নিপীড়নের অভিযোগের মুখে বাংলাদেশী সৈন্য

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

মধ্য আফ্রিকায় যৌন নিপীড়নের অভিযোগের মুখে বাংলাদেশী সৈন্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শিশুদের যৌন নিপীড়নে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনীও অভিযোগের মুখে রয়েছে। দেশটিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বেশকিছু সদস্য শান্তিরক্ষা মিশনে রয়েছে। অভিযোগের বিষয়টি সেনাবাহিনীর তরফ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ জিরো ট্রলারেন্স দেখাবে। পাশাপাশি দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে আইএসপিআর বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। এ ব্যাপারে আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক মু. নুর ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তরফ থেকে বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক তাকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনা হবে। শুক্রবার নিউইয়র্কে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব (ফিল্ড সাপোর্ট) অ্যান্টনি ব্যানবারি জানান, তাদের কাছে কিছু শিশুর ওপর যৌন নির্যাতনের আরও কিছু নতুন অভিযোগ জমা পড়েছে। তাতে বাংলাদেশী সৈন্যদের সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হয়েছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে অ্যান্টনি ব্যানবারি বলেন, যারা জাতিসংঘের হয়ে শান্তি রক্ষার কাজ করে, যারা নিরাপত্তা দেয়ার কাজ করে; এই ধরনের অভিযোগ তাদের কতটা ক্ষুব্ধ করেছে, তা বলে বোঝানোর নয়। নির্যাতিতদের জন্য জাতিসংঘের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব কিছু করার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, এর বিচার হবে। যাতে ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর না ঘটে। ২০১৩ সাল থেকে দেশটিতে মুসলিম-খ্রীস্টান সংঘাত থামাতে শান্তিরক্ষী হিসেবে বিদেশী সৈন্য রয়েছে। সেখানে প্রথমে যায় ফ্রান্সের সৈন্যরা। পরের বছর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীও মোতায়েন করা হয়। বর্তমানে ১০ হাজারের বেশি বিদেশী সৈন্য রয়েছে। ২০১৫ সালে দেশটিতে বিদেশী সৈন্যদের দ্বারা শিশুদের যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। সংবাদ সম্মেলনে নতুন ১২ অভিযোগ তুলে ধরেন জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব। নতুন অভিযোগ মিলিয়ে বর্তমানে সে অভিযোগের সংখ্যা ২২। ছয়টি শিশু অভিযোগ করেছে, বাংলাদেশ, কঙ্গো, নাইজার, মরক্কো ও সেনেগালের শান্তিরক্ষীদের দ্বারা তারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এই ছয় শিশুর অভিযোগ ফ্রান্স, জর্জিয়া ও আরেকটি ইউরোপীয় দেশের সৈন্যদের দিকেও। অভিযোগ অনুযায়ী, ঘটনাগুলো ঘটেছে ২০১৪ সালে দেশটির রাজধানী বাঙ্গির বিমানবন্দরের পাশের একটি শরণার্থী শিবিরের আশপাশে। বিবিসি জানায়, এই শিশুদের কয়েকজন ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সী। তাদের অভিযোগ জর্জিয়ার সৈন্যরা তাদের ধর্ষণ করেছে। ফরাসী সৈন্য দ্বারা যৌন নিগ্রহের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছে সাত বছরের একটি মেয়ে এবং নয় বছরের এক ছেলে। তবে কতটি ঘটনায় বাংলাদেশী কত সৈন্যের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠেছে তা বিস্তারিত জানানো হয়নি। অভিযোগ ওঠার পর গত ডিসেম্বরে একটি স্বাধীন তদন্ত সংস্থা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের যৌন নির্যাতনে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছিল। শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশসহ সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ দেশ নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে তদন্ত শুরু করেছে। নাইজার ও সেনেগালের সৈন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করছে জাতিসংঘ। শান্তিরক্ষীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের বিষয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার মুখপাত্র রুপার্ট কলভিল জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, এটা কীভাবে বিস্তৃত হচ্ছে, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রের ঘটনাই তা মেলে ধরেছে। তিনি আরও বলেছেন, শান্তিরক্ষীরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। তা অস্বীকারের উপায় নেই। তারপরও এই বাহিনীর কিছু সদস্যের এই ধরনের অপকর্ম আমরা এড়াতে পারি না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশের তথ্য কর্মকর্তা কামরুল আহসান জনকণ্ঠকে জানান, দেশটিতে বাংলাদেশ পুলিশ কোন সময়ই কাজ করেনি। পুলিশের কেউ এখনও সেখানে শান্তিরক্ষী হিসেবে কাজ করছেন না।
×