ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এসএসসি পরীক্ষা কাল শুরু ॥ এবার সাড়ে ১৬ লাখ পরীক্ষার্থী

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

এসএসসি পরীক্ষা কাল শুরু ॥ এবার সাড়ে ১৬ লাখ পরীক্ষার্থী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের দশ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দেশজুড়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামীকাল। পরীক্ষার প্রথম দিন সকাল ১০টায় বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় বসছে ১৬ লাখ ৫১ হাজার ৫২৩ জন পরীক্ষার্থী। যাদের মধ্যে আট লাখ ৪২ হাজার ৯৩৩ জন ছাত্র এবং আট লাখ আট হাজার ৫৯০ জন ছাত্রী। মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র বেশি থাকলেও কেবল এসএসসিতে সংখ্যার দিক থেকে এগিয়ে ছাত্রীরা। শনিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ পরীক্ষার প্রস্তুতিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। শিক্ষামন্ত্রী জানান, এসএসসি পরীক্ষায় এবারই প্রথম বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (এমসিকিউ) অংশের পরীক্ষা আগে হবে। পরে হবে সৃজনশীলের পরীক্ষা। দুই অংশের পরীক্ষার মাঝে ১০ মিনিট সময়ের ব্যবধান থাকবে। এতদিন সৃজনশীল অংশ আগে হতো। পরে এমসিকিউ অংশ হতো। কিন্তু অভিযোগ ছিল, এমসিকিউ অংশের প্রশ্ন অসাধু কিছু শিক্ষক মোবাইলে ছবি তুলে বাইরে পাঠিয়ে উত্তরপত্র এনে শিক্ষার্থীদের কাছে সরবরাহ করতেন। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব ও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সম্ভাবনা একেবারেই নেই। সন্দেহজনক যারা আছে, তাদের প্রতি নজরদারি আছে। কোচিং সেন্টার ও ফটোকপির দোকানেও নজরদারি আছে। এ ছাড়া ফেসবুকে এ ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা যেন বন্ধ করে দিতে পারে, বিটিআরসিকে তা বলা আছে। সাধারণ আট বোর্ড, একটি মাদ্রাসার দাখিল ও কারিগরি বোর্ডের এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষার পরিসংখ্যান তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আটটি সাধারণ বোর্ডের অধীনে এসএসসিতে ১৩ লাখ চার হাজার ২৭৪ জন, মাদ্রাসা বোর্ডের অধীনে দাখিলে দুই লাখ ৪৮ হাজার ৮৬৫ জন এবং কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি ভোকেশনালে ৯৮ হাজার ৩৮৪ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে শুধু এসএসসিতে ছয় লাখ ৪২ হাজার ৫০৭ জন ছাত্রের বিপরীতে ছাত্রী ছয় লাখ ৬১ হাজার ৭৬৭ জন। অর্থাৎ ছাত্রী ১৯ হাজার ২৬০ জন বেশি। মোট পরীক্ষার্থীর হিসাবেও গতবারের তুলনায় এবার ছাত্রী সংখ্যা বেড়েছে। বিষয়টিকে ইতিবাচক উল্লেখ করে বলেন, গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১৪ লাখ ৭৯ হাজার ২৬৬ জন অংশ নিয়েছিল। এ হিসাবে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে এক লাখ ৭২ হাজার ২৫৭ জন। এর মধ্যে ছাত্র বেড়েছে ৭৯ হাজার ৫৯৪ জন আর ছাত্রী বেড়েছে ৯২ হাজার ৬৬৩ জন। বিদেশের আটটি কেন্দ্রে এবার পরীক্ষায় বসবেন ৪০৪ জন শিক্ষার্থ। এর মধ্যে ২০১ জন ছাত্র এবং ২০৩ জন ছাত্রী। শিক্ষামন্ত্রী জানান, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত হবে তত্ত্বীয় পরীক্ষা। আর ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে ৯ থেকে ১৪ মার্চ। এবার ২৮ হাজার ১১৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা তিন হাজার ১৪৩টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় বসবেন। বাংলা দ্বিতীয়পত্র এবং ইংরেজী প্রথম ও দ্বিতীয়পত্র ছাড়া সব বিষয়ে সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা হবে। গত বছর চালু হওয়া শারীরিক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা বিষয়েও এবার সৃজনশীল প্রশ্নে পরীক্ষা হবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই এমন পরীক্ষার্থীরা শ্রুতি লেখক নিতে পারবেন। এ ধরনের প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দেয়া হবে। এছাড়া বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন (অটিস্টিক এবং ডাউন সিনড্রোম বা সেরিব্রালপালসি আক্রান্ত) পরীক্ষার্থীদের ৩০ মিনিট অতিরিক্ত সময় এবং পরীক্ষা কক্ষে তার অভিভাবক, শিক্ষক বা সাহায্যকারী নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে বলেও জানান মন্ত্রী। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যেই ফল প্রকাশ করা হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ফেসবুকে ভুয়া প্রশ্ন ছাড়ালে সঙ্গে সঙ্গেই বিটিআরসি ব্যবস্থা নেবে। এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, কিছু শিক্ষক নামধারী ব্যক্তি ব্যক্তিগত সুযোগ-সুবিধার লোভে ছাত্রদের প্রশ্ন বলে দেয়, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকাও আর করা হয় না। বিজি প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার সুযোগই নেই দাবি করে তিনি বলেন, কারও পক্ষেই জানা সম্ভব না কোন প্রশ্ন ছাপা হচ্ছে। কারণ কারও হাতে প্রশ্ন এক মিনিটের বেশি থাকে না। পাসের হার ও জিপিএ-৫ বাড়াতে বেশি নম্বর দেয়ার নির্দেশনার অভিযোগ উড়িয়ে দেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি সব পরীক্ষক এবং পরীক্ষার সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে জানিয়ে দিচ্ছি, আমাদের এমন কোন ইন্সট্রাকশন নেই যে, কাউকে বেশি নম্বর দেবেন, আবার কাউকে কম নম্বরও দেবেন না। যার যা প্রাপ্য তাকে তাই দেবেন, সঠিকভাবে খাতা দেখবেন, সঠিকভাবে মূল্যায়ন করবেন। এতে সংখ্যা বাড়ল না কমল এ নিয়ে আমাদের কোন চাপ নেই। শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষা সম্পূর্ণ নকলমুক্ত ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে সফলভাবে অনুষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। মন্ত্রী আশাপ্রকাশ করেন, আসন্ন এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা ছাত্র-শিক্ষক অভিভাবকসহ সকলের কাছে আনন্দদায়ক ও উৎসবমুখর হবে।
×