ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রওশনকে কো-চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব এরশাদের কাছে

বিরোধিতা ও সমর্থন- এই দু’ধারায় চলবে জাপা

প্রকাশিত: ০৫:২২, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

বিরোধিতা ও সমর্থন- এই দু’ধারায় চলবে জাপা

রাজন ভট্টাচার্য ॥ এখন থেকে দু’ধারায় চলবে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এরশাদের নেতৃত্বাধীন একটি পক্ষ থাকবে সরকারের সমালোচনায় মুখর। রওশনের নেতৃত্বে অপর পক্ষ থাকবে সরকারের সঙ্গে। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে আলোচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে পার্টির নীতি নির্ধারণী পর্যায় থেকে। এদিকে দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নিজেরাই অভ্যন্তরীণ সকল টানাপোড়েন মেটানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারই ধারাবাহিকতায় রওশনকে দলের এক নম্বর কো-চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে স্ত্রী কিন্তু রওশনের বক্তব্য দলের কো-চেয়ারম্যান হলে তিনিই হবেন, অন্য কেউ নয়। বিরোধী নেতার মান ভাঙ্গাতে পারলেই চলমান সঙ্কটের সমাধান হবে এমন কথাই বলছেন দলটির নেতারা। শনিবার পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য জানিয়েছেন, কো-চেয়ারম্যান ও মহাসচিব দুই পদের কোনটিতেই পরিবর্তন আসছে না। মহাসচিবের পদ থেকে পদচ্যুতির পুরস্কার হিসেবে সরকারে সম্মানজনক পদ পেতে পারেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। এছাড়াও প্রায় দু’বছর পর আজ রবিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দলটির প্রেসিডিয়ামের বৈঠক। বৈঠকে এসব বিষয় আলোচনায় আসতে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে আজ রাতে প্রধানমন্ত্রীর ডাক পেতে পারেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করতেই সময় চেয়েছিলেন জাপা চেয়ারম্যান। তবে এর আগেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন রওশন। বৈঠকে রওশনের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে দলকে শক্তিশালী করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। দলের সঙ্কট নিরসনে এরশাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি। রওশনের অনুসারীরা জানিয়েছেন, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশ নেয়ায় বিরোধী নেতাকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তাছাড়া বৈঠকে এরশাদের বিরুদ্ধে নালিশে বলা হয়, নির্বাচন বিরোধীদের কাছে টানছেন জাপা চেয়ারম্যান। তাদের দেয়া হচ্ছে পার্টির গুরুত্বপূর্ণ পদ। সেইসঙ্গে দলের নেতাদের মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগের চাপ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ দূতের পদ থেকে পদত্যাগ করতে চিঠি লিখে রেখেছেন এরশাদ। এরমধ্য দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটি পক্ষ। যদিও বৈঠকের পর রওশন এর কোন কিছুই স্বীকার করেননি। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, রাজনীতিসহ নানা বিষয়ে কথা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দলের পদ পরিবর্তনসহ চলমান সমস্যা নিয়ে কোন আলোচনা না হওয়ার কথা জানান তিনি। জাপা নেতারা বলছেন, শনিবার চট্টগ্রামে দলীয় এক সাংসদের ছেলে বিয়েতে যোগ দেন এরশাদ-রওশন-জিয়াউদ্দিন বাবলুসহ অনেকেই। পৃথক পৃথক বিমানে স্বামী-স্ত্রী দু’জন সেখানে গেলেও দলীয় ইস্যুতে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সাবেক মহাসচিব বাবলুকে সরকারে সম্মানজনক পদ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়াও মন্ত্রিপরিষদ থেকে পদত্যাগ না করার ও বিশেষ দূতের পদে বহাল থাকতে সম্মত হয়েছেন এরশাদ। তাই হঠাৎ করেই আজ শনিবারের ডাকা বর্ধিত স্থগিত করে প্রেসিডিয়ামের বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। সকাল ১১টায় বনানীতে চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। দলটির নেতারা বলছেন, ৪১ জন প্রেসিডিয়াম সদস্যের মধ্যে বেশিরভাগই নির্বাচিত সংসদ সদস্য। অর্থাৎ রওশনপন্থী। তাদের কেউই সরকারের সঙ্গ ছাড়তে চান না। মন্ত্রিপরিষদ থেকে দলের নেতাদেরও পদত্যাগ চান না। সেই সঙ্গে দল পরিচালনায় এরশাদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় তারা। খুব কম সংখ্যক প্রেসিডিয়াম সদস্য আছেন এরশাদের সঙ্গে। তাই সঙ্কটের সমাধান না করে প্রেসিডিয়াম বৈঠকে ডাকা হলে চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। অর্থাৎ তোপের মুখে পড়তে পারেন সাবেক সেনাপ্রধান এরশাদ। রওশনের সঙ্গে সমঝোতা করেই এ বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। বৈঠকে রওশন রাজী হলে দলের প্রধান কো-চেয়ারম্যানের পদ দেয়া হতে পারে তাকে। অন্যথায় যেভাবে আছে সেভাবেই দল চলবে। এরশাদের অনুসারীরা বলছেন, পার্টির নতুন কো- চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করায় সারাদেশে নেতাকর্মীদের মধ্যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। এখন সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করা গেলেই সারাদেশে ঘুরে দাঁড়াতে পারে এরশাদের জাপা। এতে আগামী সংসদ নির্বাচনে যে কোন জোটের সঙ্গে যেতে দলটি ভাল কিছু দাবি করতে পারবে। তাছাড়া সব জোটের পক্ষ থেকেই তাদের টেনে নেয়ার চেষ্টা করবে। এই সুযোগ কোন অবস্থাতেই হাতছাড়া করা ঠিক হবে না। তাই যে কোন মূল্যে রওশনকে ম্যানেজ করতে পারলেই সব ঠিক। আর সরকারের সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার কথা এরশাদের পক্ষ থেকে জানালেই রওশন খুশি থাকবেন। গত ১৭ জানুয়ারি রংপুরে এক কর্মিসভায় ছোট ভাই জিএম কাদের পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং ভবিষ্যত নেতা হিসেবে ঘোষণা দেন এরশাদ। একইসঙ্গে কাউন্সিলের জন্য জিএম কাদের আহ্বায়ক ও সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারকে সদস্য সচিব করে কমিটি ঘোষণা করেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন রওশনপন্থীরা। পরদিন ১৮ জানুয়ারি বিকেলে প্রেসিডিয়াম ও পার্লামেন্টারি কমিটির বিশেষ বৈঠকে রওশন এরশাদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন জিয়াউদ্দিন বাবলু। তৃতীয় দিন ১৯ জানুয়ারি দুপুরে রংপুর থেকে ফিরে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে সরিয়ে দিয়ে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব নিযুক্ত করেন এরশাদ। এরপর দলের স্বার্থে নেয়া এরশাদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানান রওশন। আহ্বানে সাড়া না দিয়ে প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে স্ত্রীকে চিঠি দেন সাবেক সেনাশাসক এরশাদ। এর মধ্যে এরশাদ ও রওশন উভয়েই প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত চান। এরই ধারাবাহিকতায় প্রথমে রওশনকে সাক্ষাত দিলেন প্রধানমন্ত্রী। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদের প্রেসসচিব শুনিল শুভ রায় জনকণ্ঠকে বলেন, রবিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাপা চেয়ারম্যানের বৈঠক সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। তবে রবিবার প্রেসিডিয়াম বৈঠকের কথা জানান তিনি। তবে দলের একাধিক সূত্র এ বৈঠকের কথা নিশ্চিত করেছে।
×