ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরতে নয়াদিল্লী যাচ্ছেন পররাষ্ট্র সচিব

দিল্লীর সঙ্গে পানি বণ্টন সমস্যার দ্রুত সমাধান চায় ঢাকা

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

 দিল্লীর সঙ্গে পানি বণ্টন সমস্যার দ্রুত সমাধান চায় ঢাকা

তৌহিদুর রহমান ॥ ভারতের সঙ্গে অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন সমস্যার দ্রুত সমাধান চায় বাংলাদেশ। তিস্তা ও গঙ্গায় পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে চায় ঢাকা। সে লক্ষ্যে বাংলাদেশ খুব শীঘ্রই যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) বৈঠকে আগ্রহী। এদিকে চলতি শীত মৌসুমে তিস্তায় পানি কমে যাওয়ায় ভারতের কাছে উদ্বেগ প্রকাশের পর তিস্তায় পানি প্রবাহ বেড়েছে। কূটনৈতিক সূত্র এসব তথ্য জানায়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার লক্ষ্যে আজ রবিবার পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক দিল্লী যাচ্ছেন। সেখানে তিনি পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেবেন। বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকালে সম্পাদিত বিভিন্ন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের অগ্রগতি বিষয়ে আলোচনা করবে দুই দেশ। একই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন সমস্যার দ্রুত সমাধান চায় বাংলাদেশ। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পর এখন পানি বণ্টন সমস্যাকেই প্রাধান্য দিচ্ছে ঢাকা। পানি সমস্যাই এখন বাংলাদেশের এক নম্বর এজেন্ডা। তিস্তা চুক্তির পাশাপাশি গঙ্গায়ও ফারাক্কা পয়েন্টে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে চায় বাংলাদেশ। এছাড়া পাংশায় গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণে ভারতের সম্মতিকেও প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টনের বিষয়ে আলোচনা হয়ে থাকে যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠকে। তবে ২০১০ সালের মার্চে দিল্লীতে জেআরসির বৈঠকের পর আর কোন বৈঠক হয়নি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বার বার এই বৈঠকের আহ্বান জানানো হলেও বৈঠকের বিষয়ে অগ্রগতি হয়নি। জেআরসির বৈঠকেই দুই দেশের পানি প্রবাহের তথ্য-উপাত্ত আলোচনা করা সম্ভব হবে। পানি প্রবাহ কম হওয়ার বিষয় জেআরসির বৈঠকে তুলে ধরলে অগ্রগতি হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ। এদিকে চলতি শীতে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ কম ছিল। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এই পানি প্রবাহ ছিল খুবই কম। তিস্তায় ১৫০০ থেকে ১৭০০ কিউসেক পানি আসছিল। তবে পানি কমে আসায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ভারতের কাছে উদ্বেগ প্রকাশের পর তিস্তায় পানি প্রবাহ বেড়েছে। এখন তিস্তায় প্রায় আড়াই হাজার কিউসেক পানি এসেছে। হঠাৎ করে পানি সরবরাহ বাড়ায় ওই অঞ্চলে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। সূত্র জানায়, অতীতেও বিভিন্ন সময়ে তিস্তায় হঠাৎ করে পানি বেড়েছে। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি প্রবাহ মারাত্মক কমে যায়। তিস্তায় পানি প্রবাহ কমে যাওয়ার কারণে সেচ কাজের ব্যাঘাত ঘটে থাকে। সে জন্য ওই অঞ্চলের কৃষকরা বিভিন্ন সময়ে পানির দাবিতে প্রতিবাদ করেছে। এরপর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের কাছে পানি প্রবাহের বিষয়ে উদ্বেগ জানানোর পরে হঠাৎ করেই পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। এবারও উদ্বেগ জানানোর পরে পানি প্রবাহ বেড়েছে। তবে তিস্তার পানি বণ্টনের স্থায়ী সমাধান চায় ঢাকা। পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানে ভারতও আশ্বাস দিয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরের সময় দুই দেশের পানি বণ্টন সমস্যা সমাধানের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাই বাংলাদেশ চায় পানি সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হোক। তিস্তার পানি প্রবাহ নিশ্চিতে চুক্তি করতে চায় বাংলাদেশ। সে কারণে পানি সমস্যাকেই এখন প্রাধান্য দিচ্ছে ঢাকা। এর আগে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছিলেন, তিস্তা চুক্তির বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে কাজ চলছে। তবে অনেক কূটনীতি চোখের আড়ালে হয়ে থাকে। সেটা দেখা যায় না। তিস্তা চুক্তির বিষয়ে এই ‘কূটনীতি’ প্রযোজ্য। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দিল্লীতে ১-২ ফেব্রুয়ারি দুই দিনব্যাপী পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে। এই বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক। আর ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন সেদেশের পররাষ্ট্র সচিব ড. এস জয়শঙ্কর। পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সকল বিষয়ে আলোচনা হবে। সূত্র জানায়, গত বছর ৬-৭ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফর করেন। সে সময় দুই দেশের নতুন প্রজন্মকে সামনে রেখে সম্পর্ক উন্নয়নের ‘নয়া প্রজন্ম নয়া দিশা’ শিরোনামে যৌথ ইশতেহার ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে ১৯ চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়। দুই দেশই সেসব চুক্তির দ্রুত বাস্তবায়ন করবে বলেও ঘোষণা দেয়। সে অনুযায়ী দুই দেশের মধ্যে চুক্তির বাস্তবায়ন চলছে। মোদির সফরের পর বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে। বিশেষ করে ছিটমহল বিনিময়, অপদখলীয় জমি হস্তান্তর ও সাড়ে ছয় কিলোমিটার সীমানা চিহ্নিত করার কাজটি সময়সীমা অনুযায়ী এগিয়ে চলছে। এছাড়া ভারতের দেয়া দ্বিতীয় ঋণ চুক্তির প্রকল্পগুলো চূড়ান্ত হওয়ার পর তা এখন বাস্তবায়নের পথে রয়েছে। এছাড়া আন্তঃযোগাযোগ, বিদ্যুত, বাণিজ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও অগ্রগতি রয়েছে। এসব অগ্রগতির সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে আলোচনা করবেন দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব। চুক্তির অগ্রগতি আলোচনার পাশাপাশি পানিবণ্টন সমস্যা সমাধানে জোর দেবেন তিনি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর সামনে রেখে গত বছর ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ড. এস জয়শঙ্কর দুই দফা ঢাকা সফর করেন। সে সময় পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হককে দিল্লী সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব। তবে তিনি দিল্লী যেতে পারেননি। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক প্রায় দুই বছর আগে একবার দিল্লী গিয়েছিলেন। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব ছিলেন সুজাতা সিং। ড. এস জয়শঙ্কর পররাষ্ট্র সচিব হওয়ার পরে এবারই প্রথম দিল্লী যাচ্ছেন শহীদুল হক। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, পররাষ্ট্র সচিবের দিল্লী সফর সামনে রেখে ইতোমধ্যেই দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। এসব পর্যালোচনা দিল্লীর বৈঠকে তুলে ধরা হবে। দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তিগুলো কেমন করে আরও দ্রুত বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া দিল্লী সফরের সময় পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালেরও বৈঠক হতে পারে।
×