ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

রেহমান সোবহানের স্মৃতিকথায় মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৩১ জানুয়ারি ২০১৬

রেহমান সোবহানের স্মৃতিকথায় মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে বর্তমানকে বিশ্লেষণ এবং সেই ইতিহাসকে আরও গভীরভাবে বোঝা প্রয়োজন। এতে একাত্তরপরবর্তী বাংলাদেশের অর্জন, ব্যর্থতা ও ভবিষ্যত করণীয় চিহ্নিত করা যাবে। এজন্য তরুণ প্রজন্মকে ষাটের দশকের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-বুদ্ধিবৃত্তিক গণজাগরণ সম্পর্কে জানতে হবে। যারা সেই জাগরণের সাক্ষী ছিলেন, তাদের উচিত বইয়ের মাধ্যমে তা তুলে ধরা। শনিবার বিকেলে মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিপিডি ‘স্ট্রাগল ফর বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক ডায়ালগে এমন মূল্যায়ন উঠে আসে। অনুষ্ঠানে সিপিডি চেয়ারম্যান ও প্রখ্যাত রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ ড. রেহমান সোবহানের স্মৃতিকথা ‘আনট্রাঙ্কুইল রিকালেকশনস, দ্য ইয়ারস অব ফুলফিলমেন্টের ভিত্তিতে ১৯৫৭-৭১ সাল পর্যন্ত সময়কালের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদরা। ৪৪৫ পৃষ্ঠার এই স্মৃতিকথায় রেহমান সোবহানের পরিবার, কলকাতার শৈশব, দার্জিলিং-লাহোর এবং লন্ডনের কেম্ব্রিজে পড়াশোনা, রাজনৈতিক মূল্যবোধের জন্ম, ঢাকায় স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান, পাকিস্তানের রাজনৈতিক অর্থনীতিতে সক্রিয় হওয়া, বঙ্গবন্ধুর সংস্পর্শে আসা এবং নিজের দেখা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজনীতির বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে বইয়ের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন ঢাবি অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, অধ্যাপক এমএম আকাশ ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। আলোচনার শুরুতে নিজের বই সম্পর্কে রেহমান সোবহান বলেন, আমি প্রামাণ্য ইতিহাস লিখিনি। ইতিহাসের যেসব ঘটনা ও পারিপার্শি¦কতার আমি সাক্ষী, আমার চোখে সেগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস ও আকাক্সক্ষা জানতে হলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পুরোপুরি জানতে হবে। এজন্য আমি সবাইকে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইটি পড়ার পরামর্শ দেব। মুক্ত আলোচনায় রেহমান সোবহানের বন্ধু বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেন, ষাট ও সত্তরের দশকে রাজনীতিতে ধর্মকে পুরোপুরিভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করা হয়েছে। ছয় দফা ও ১১ দফার বিরুদ্ধে ধর্মকে দাঁড় করানো হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণের জন্য সেই অপচেষ্টা বাস্তবায়িত হয়নি। তরুণ প্রজন্মকে সেই ইতিহাস জানাতে হবে। এজন্য ষাটের দশকের গণজাগরণের সাক্ষীদের প্রামাণ্য বই লিখতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন আদায়ে রেহমান সোবহানের নিবেদিত তৎপরতার প্রশংসা করে গওহর রিজভী বলেন, ‘৭৫ এর পরে ইতিহাস বিকৃতর করার ব্যাপক অপচেষ্টা হয়েছে। সামরিক শাসকদের অধীনে মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক বিভিন্ন ইস্যুতে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হয়েছে। এই ধরনের বই সেই সব বিভ্রান্তি দূর করবে। বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে ওয়ান পার্টি বা বাকশাল গঠন করা না হলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা- হয়তো ঘটত না। বঙ্গবন্ধুকে ভুল বোঝানো হয়েছিল যে, গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সমাজতন্ত্র কায়েম সম্ভব নয়। কিন্তু ওয়ান পার্টি রুল রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি করে। আর সেই সুযোগই নিয়েছিল উগ্রপন্থীরা। প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য রেহমান সোবহানকে উদ্দেশ করে মওদুদ বলেন, স্বাধীনতার পর সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দেশের ৯০ শতাংশ কলকারখানা জাতীয়করণ করা হলো। কিন্তু কখনই সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী না হওয়া দল আওয়ামী লীগ কেন তা ধরে রাখতে পারেনি সে বিষয়ে আপনার পরবর্তী বইতে লিখবেন আশা করি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সিপিডির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য। মুক্ত আলোচনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ড. আকবর আলি খান, প্রফেসর ড. রওনক জাহান, সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাসদ নেতা খলীকুজ্জামান ও রাশেদা কে চৌধুরী প্রমুখ।
×